May 2, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, April 11th, 2023, 9:25 pm

সরকারের নানা উদ্যোগেও কমছে না চিনির দাম

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সরকারের নানা উদ্যোগেও কমছে না চিনির দাম। বরং দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি। মূলত কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পণ্যটি আমদানি, পরিশোধন ও বিপণন কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় সরকার একাধিক উদ্যোগ নিয়েও বাজারে পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বরং পাইকারি বাজারে আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি। ফলে খুচরা বাজারেও কমছে না চিনির দাম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চিনির বাজারে অস্থিরতা কমাতে ইতঃপূর্বে ভোগ্যপণ্যটির আমদানি পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৫ শতাংশ কমায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পাশাপাশি প্রতি টন পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির ওপর ধার্য আমদানি শুল্কও প্রত্যাহার করা হয়। সরকার ওই সময় কেজিতে ৩ টাকা কমিয়ে পরিশোধিত চিনির দামও বেঁধে দেয়। কিন্তু বাজারে তার প্রভাব নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশে খোলা ও মোড়কজাত চিনির নতুন দর সমন্বয় কে ছে। প্রতিকেজি খোলা চিনির দাম ১০৪ টাকা ও মোড়কজাত চিনির দাম ১০৯ টাকা নির্ধারণ হয়।

এর আগে যা ছিল যথাক্রমে ১০৭ ও ১১২ টাকা। চিনি ব্যবসায়ীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সূত্র জানায়, কয়েক মাস আগে দেশে চিনির পাইকারি দাম বেড়ে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ৪ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়।

তবে শীত মৌসুমে চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি আমদানি স্বাভাবিক হয়ে এলে দাম কিছুটা সহনীয় হয়। গ্রীষ্ম ও রমজানে আবারো চাহিদা বাড়ার কথা মাথায় রেখে এনবিআর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) ৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়। তাছাড়া গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জারি করা গেজেটে অপরিশোধিত চিনির ওপর টনপ্রতি ৩ হাজার টাকা ও পরিশোধিত চিনির ওপর টনপ্রতি ৬ হাজার টাকা আমদানি শুল্ক (ফিক্সড ডিউটি) প্রত্যাহার করা হয়। হ্রাসকৃত শুল্ক সুবিধা আগামী ৩০ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

কিন্তু শুল্ক কমানোর পরও পাইকারি বাজারে দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং বর্তমানে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার ৫০ টাকায়। পাইকারি বাজার থেকে এই দামে চিনি কেনার পর সব ব্যয় মিলিয়ে সরকারি দামে বিক্রি সম্ভব। কিন্তু মিলগেট থেকে বাড়তি দামে বিক্রির পাশাপাশি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি দামে এসও (সরবরাহ আদেশ) বিক্রি করায় ব্যবসায়ীরা এখনো আগের দামেই চিনি বিক্রি করছে। তাতে মিলছে না খুচরা বাজারে সরকারিভাবে দাম কমানোর সুফল। সূত্র আরো জানায়, দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২২-২৪ লাখ টন। প্রতি মাসে চাহিদা রয়েছে প্রায় দেড়-দুই লাখ টন। তবে রোজা ও গ্রীষ্ম মৌসুমে চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। বাড়তি চাহিদা সামনে রেখে মিলগেট থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত চিনির বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। একসময় দেশে চিনির বার্ষিক উৎপাদন ছিল প্রায় দেড়-দুই লাখ টন। সরকারি ১৫টি মিল থেকে এসব চিনি উৎপাদন হতো। তবে দুই বছর ধরে দেশের ছয়টি চিনিকলের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে সরকার। যার কারণে উৎপাদন কমে ২৫-৩০ হাজার টনে নেমেছে।

এ বছর চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার টন। ২৫ নভেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে নয়টি চিনিকলে মাড়াই মৌসুম শুরু হয়। গত দুই মৌসুমের মতো পঞ্চগড়, সেতাবগঞ্জ, শ্যামপুর, রংপুর, পাবনা ও কুষ্টিয়া সুগার মিলসের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সরকারি চিনি সরবরাহ কার্যত বন্ধ থাকায় বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলো দেশে চিনির বাজারে দাম নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করছে। বাংলাদেশ চিনি ডিলার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন চেšধুরী জানান, সরকার দাম কমালেও মিল মালিকদের বিক্রি করা এসও পাইকারি বাজারে মজুদ আছে। এসব এসও মিলগেট থেকে উত্তোলনের পর আমদানিকারকরা নতুন এসও বিক্রি করবে। তাছাড়া সরকারি মিল থেকে চিনির সরবরাহ না থাকায় বেসরকারি খাতের চিনির সঙ্গে প্রতিযোগিতা হচ্ছে না। যে কারণে মিল মালিক ও ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে দর নির্ধারণ করবে, সেভাবেই বিক্রি হবে।