নিজস্ব প্রতিবেদক:
সরু রাস্তার কারণে রাজধানীতে অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হচ্ছে। ওশরম রাস্তার পাশে কোনো ভবনে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অগ্নিনির্বাপণ কাজে ব্যবহৃত গাড়িগুলো আগুন লাগা ভবন পর্যন্ত পৌঁছতেই পারে না। ফলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করার আগেই অনেক বেড়ে যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে ঢাকা শহরের বাড়িগুলো ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। সরু গলি কিংবা পুকুর-ডোবা ভরাট করা ভূমিতেই গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। ওসব ভবন নির্মাণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। ফলে অনেক ধরনের ঝুঁকির সঙ্গে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি বাড়ছে। আর অপ্রশস্ত রাস্তার কারণেই অগিকা-ে ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। ফায়ার সার্ভিস এবং রাজউক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী রাস্তার ন্যূনতম আড়াই মিটার প্রশস্ততা থাকতে হয়। কিন্তু ঢাকা মহানগরের মোট রাস্তায় প্রায় ৩৬ দশমিক ২৩ শতাংশ রাস্তাই ওই প্রশস্ততা বা তার নিচে রয়েছে। বিপুলসংখ্যক সরু রাস্তার পাশেই বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে। আর মানদ- অনুসরণ না করে গড়ে ওঠা এসব ভবনে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। গত বছর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ঢাকার ১ হাজার ১৬২টি বহুতল ভবন ও শিল্প-কারখানা পরিদর্শন করে। তার মধ্যে ৫২৭টি ভবনের অবস্থা সন্তোষজনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আর ৪৯৯টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ১৩৬টি ভবন অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়। ওসব ঝুঁকিপূর্ণ ও অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবন যে কোনো অগ্নিদুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে। বিকল্প সিঁড়ি ও নির্গমনপথ, ফায়ার লিফট, ফায়ার ডোর, ফায়ার ডিটেক্টর, ফায়ার স্প্রিংকলার, ফায়ার সাপ্রেশন সিস্টেমের মতো ব্যবস্থা না রেখেই অসংখ্য বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন ভবন ব্যবহারের আগে রাজউকের অকুপেন্সি সনদ নেয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সূত্র জানায়, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ভবনগুলোয় অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ ব্যবস্থা সঠিকভাবে তদারক করা হয় না। ওই সুযোগে অগ্নিনিরোধক ছাড়পত্র ছাড়াই অনুমোদনহীন বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, বিভিন্ন ধরনের কারখানা গড়ে উঠছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভবনগুলোর সঠিক নকশা থাকে না। উপেক্ষিত থাকে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ ব্যবস্থা। ফলে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে মূলত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স দায়িত্বরত সংস্থা হিসেবে কাজ করলেও ফায়ার সার্ভিস পৌঁছার আগেই আগুনে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। এদিকে এ বিষয়ে রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ ও নতুন ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম জানান, ঢাকায় সরু রাস্তারর পাশে বহুতল ভবন নির্মাণের ফলে অগ্নিদুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণনাশের আশঙ্কা বেশি। রাস্তার অপ্রশস্ততার কারণে অনেক সময়ই ঘটনাস্থলে পৌঁছতেও ভোগাস্তিতে পড়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। বিষয়টি নিয়ে নতুন ড্যাপে প্রস্তাব রয়েছে। ওই প্রস্তাব অনুযায়ী রাজউকের পক্ষ থেকে তদারকি বাড়ানো হবে।
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২