অনলাইন ডেস্ক :
নিউ জিল্যান্ড তখন শক্ত অবস্থানে। কেন উইলিয়ামসন ও টম ব্লান্ডেলের জুটি ভাঙার কোনো পথই পাচ্ছে না ইংল্যান্ড। বেন স্টোকস একপর্যায়ে বল তুলে দিলেন হ্যারি ব্রুকের হাতে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যিনি আগে কখনোই বোলিং করেননি। ব্যাটিংয়ের কারণে ইংলিশদের ‘গোল্ডেন বয়’ তকমা পেয়ে যাওয়া ক্রিকেটার এবার বল হাতেও দেখালেন ঝলক। তার নিরীহ দর্শন স্লো মিডিয়াম পেসে লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে আউট উইলিয়ামসন! দেশের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট রানের রেকর্ড গড়ে দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে প্রতিরোধ গড়া উইলিয়ামসন বিদায় নিতেই ভেঙে পড়ল তার দল। উজ্জীবিত ইংল্যান্ড বাকি ৪ উইকেট শিকার করে নিল যেন চোখের পলকে। ম্যাচ আর সিরিজ জয়ের সম্ভাবনাতেও তারা গেল এগিয়ে। ওয়েলিংটন টেস্টের রোমাঞ্চকর এক দিনে ফলো-অনে পড়া নিউ জিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে অল আউট ৪৮৩ রানে। শেষ ৫ উইকেট হারায় তারা ২৮ রানে। শেষ ৪ উইকেটের পতন হয় স্রেফ ৫ রানের মধ্যে! তাই একসময় যে লিড মনে হচ্ছিল ছাড়িয়ে যাবে তিনশ বা সাড়ে তিনশ, তা শেষ পর্যন্ত থমকে যায় আড়াইশ পেরিয়েই। ২৫৮ রানের লক্ষ্যে নেমে ইংল্যান্ড সোমবার চতুর্থ দিন শেষ করে ১ উইকেটে ৪৮ রান নিয়ে। শেষ দিনে ইংলিশদের প্রয়োজন ২১০ রান। কিউইদের প্রয়োজন ৯ উইকেট। এই ইংল্যান্ড দলের যা শক্তি ও ফর্ম, তাতে ফেভারিট আপাতত তারাই। বেসিন রিজার্ভের উইকেটও তাদের পক্ষে। বরাবরের মতোই এখানকার উইকেট সময় গড়ানোর সঙ্গে ভালো হয়ে উঠেছে ব্যাটিংয়ের জন্য। শেষ দিনেও তা আরও ভালো হয়ে ওঠার কথা। এই ম্যাচ জিততে পারলে ১০৯ বছর পর দেশের বাইরে টানা ৫ সিরিজ জয়ের কীর্তি গড়বে ইংল্যান্ড। সেক্ষেত্রে দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ড সিরিজ হারবে টানা ১২ সিরিজ পর। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল, ফলো-অন থেকে ম্যাচ জয়ের মঞ্চ গড়ে তুলবে কিউইরা। উইলিয়ামসনকে ঘিরে দারুণ দৃঢ়তায় এগোচ্ছিল তাদের ব্যাটিং। ৩ উইকেটে ২০২ রান দিয়ে তারা শুরু করে দিন। প্রথম ওভারেই ফ্লিক করে বাউন্ডারি মেরে উইলিয়ামসন পা রাখেন চূড়ায়। রস টেইলরকে ছাড়িয়ে নিউ জিল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড এখন তার। সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি, পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস, সেরা গড় এসব কীর্তি তো তার গড়া হয়ে গেছে আগেই। উইলিয়ামসনের দিনের শুরুর সঙ্গী হেনরি নিকোলস অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ১৮ রানে দিন শুরু করা ব্যাটসম্যানকে ২৯ রানে থামান অলিভার রবিনসন। পঞ্চম উইকেটে ড্যারিল মিচেল ও উইলিয়ামসন গড়েন ৭৫ রানের জুটি। সেখানে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে খেলে যান ওয়ানডে ঘরানায়। ৫৪ বলে ৫৪ করে তিনি আউট হন আক্রমণাত্মক শট খেলেই। এরপরই নিউ জিল্যান্ডের আসল লড়াই। দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন উইলিয়ামসন ও দুর্দান্ত ফর্মে থাকা টম ব্লান্ডেল। ইংলিশদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে দুজন গড়ে তোলেন বড় জুটি। সিরিজের আগের তিন ম্যাচে উইলিয়ামসনের স্কোর ছিল ৬, ০ ও ৪। সেই হতাশা পেছনে ফেলেন তিনি এই ইনিংসে। শুরুতে অনেক লড়াই করে ফিফটিতে পা রাখেন ১৪৮ বলে। সেঞ্চুরি পর্যন্ত যেতে অবশ্য অত বল খেলতে হয়নি। ২২৬ বলে তিনি স্পর্শ করেন ২৬তম টেস্ট সেঞ্চুরি। নিউ জিল্যান্ডের হয়ে ২০ সেঞ্চুরিও নেই আর কারও। আগের টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান ব্লান্ডেল এবার ফিফটি করেন ৮০ বলে। দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেটই হারায়নি নিউ জিল্যান্ড। এই জুটিতেই দলের রান পেরিয়ে যায় ৪৫০। কোনো কিছুতেই যখন কাজ হচ্ছিল না, তখন ব্রুককে বোলিংয়ে আনেন স্টোকস। ব্রুকের তৃতীয় ওভারেই লেগ স্টাম্পের বাইরের ওই বলে আলগা শটে উইলিয়ামসেন ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় কিপারের গ্লাভসে। ৪৪৭ মিনিটের ইনিংস শেষ হয় ২৮২ বল খেলে ১৩২ রান করে। এরপরও ব্লান্ডেলের সঙ্গে একটি জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন মাইকেল ব্রেসওয়েল। কিন্তু তৃতীয় রান নেওয়ার চেষ্টায় ব্রেসওয়েল রান আউট হয়ে যান খামখেয়ালিপনায়। ক্রিজ পেরিয়ে গেলেও মাটি স্পর্শ করেননি তার ব্যাট, পা ছিল বাতাসে। ব্লান্ডেলকে এক প্রান্তে রেখে এরপর দ্রুত বিদায় নেন টিম সাউদি ও ম্যাট হেনরিও। সঙ্গী হারিয়ে বড় শট খেলার চেষ্টায় ব্লান্ডেলও শেষ পর্যন্ত আউট হয়ে যান ৯০ রান করে। ২৪ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৪ সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৩বার নব্বইয়ে আটকা পড়লেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার জ্যাক লিচ ৬১ ওভারের বেশি বোলিংয়ে ৫ উইকেট পান ১৫৭ রান দিয়ে। তার ক্যারিয়ারের পঞ্চম ৫ উইকেট এটি। ২০১৭ সালে কেশভ মহারাজের পর টেস্টে এই প্রথম নিউ জিল্যান্ডে ৫ উইকেট পেলেন কোনো স্পিনার। রান তাড়ায় ইংল্যান্ড প্রথম ৫ ওভারে ১১ রান করলেও এরপর যথারীতি আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেট। হেনরির এক ওভারে তিন চার মারেন ক্রলি, ব্রেসওয়েলকে ছক্কায় ওড়ান ডাকেট। ৫ চারে ২৪ রান করে ক্রলি বোল্ড হয়ে যান সাউদির অফ কাটারে। নাইটওয়াচম্যান রবিনসনকে নিয়ে দিন শেষ করেন ডাকেট। শেষ দিনে রান তাড়ায় ছুটবেন তারা দারুণ জয়ের আশায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৮৭.১ ওভারে ৪৩৫/৮ (ডি.)
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২০৯
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস (ফলো-অনের পর): ১৬২.৩ ওভারে ৪৮৩ (আগের দিন ২০২/৩) (উইলিয়ামসন ১৩২, নিকোলস ২৯, মিচেল ৫৪, ব্লান্ডেল ৯০, ব্রেসওয়েল ৮, সাউদি ২, হেনরি ০, ওয়্যাগনার ০; অ্যান্ডারসন ২৭-৭-৭৭-০, রবিনসন ২৮-৬-৮৪-১, ব্রড ২৪-৩-৭৯-১, লিচ ৬১.৩-১২-১৫৭-৫, রুট ১২-০-৩৯-১, স্টোকস ২-০-১৬-০, ব্রুক ৮-০-২৫-১)।
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৫৮) ১১ ওভারে ৪৮/১ (ক্রলি ২৪, ডাকেট ২৩*, রবিনসন ১*; সাউদি ৫-০-১৯-১, হেনরি ৪-০-১৮-০, ব্রেসওয়েল ২-০-১১-০)।
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা