November 2, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, December 8th, 2023, 9:34 pm

সহসাই কাটছে না রিজার্ভের ঘাটতি

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও এখনো থামছে না রিজার্ভের ঘাটতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতি মাসেই রিজার্ভের পরিমাণ আগের মাসের তুলনায় কমছে। দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমলেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপ সহসাই কাটছে না। কারণ, আর্থিক হিসাবের ঘাটতি বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের অক্টোবর শেষে আর্থিক হিসাবের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছর ছিল ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডলারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য না থাকার কারণে প্রতি মাসে ঘাটতি থাকছে। অক্টোবরের শেষে দেশের মোট রিজার্ভ প্রায় ২০ দশমিক ৬ বিলিয়নে ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা এক বছর আগে ছিল ২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। তবে, নভেম্বরে ডলারের মজুত আরও কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গত বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ডিসেম্বরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আর কমবে না।

কারণ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। এ ছাড়া আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্য নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ আলোচনা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রফতানিকারকদের বেশির ভাগকেই আমদানিও করতে হয়। এতদিন অনেকেই সেই রফতানি আয় দিয়েই আমদানি ব্যয় মেটাতেন, কিন্তু এখন রফতানিতেও কালো মেঘের ঘনঘটা। ফলে রফতানি আয় দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে, যা সঙ্কটকে আরও ঘনীভূত করেছে।

একাধিক ব্যাংকের ট্রেজারিপ্রধান জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার সহায়তা পাচ্ছে না বেসরকারি ব্যাংকগুলো। ফলে এলসি খোলার জন্য প্রতিদিন আমদানিকারকরা এলেও অতি প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া তা হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ট্রেড ক্রেডিটের ঘাটতি ছিল ৩ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এক বছর আগে যা ছিল ১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। অক্টোবরের শেষে নিট স্বল্পমেয়াদী বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৯৮ মিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগে ছিল ১ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার।

‘এখন স্বল্পমেয়াদী বিদেশি ঋণ নেওয়ার বিকল্প আর পাওয়া যাচ্ছে না, যদিও বেসরকারি খাতে এর চাহিদা আছে।’ বছরের শুরুতে স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। ১০ মাস পর তা দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে। জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান বছরে ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, কারণ আমদানি ২০ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে এবং রপ্তানি ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ে, গত বছরের ৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতির বিপরীতে চলতি হিসাবের ব্যালেন্স উদ্বৃত্ত ছিল ২৩৩ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু চলতি হিসাবের উদ্বৃত্ত নিয়ে সান্ত¡নার কিছু নেই, কারণ শুধু অক্টোবরে এটি ৮৭৭ মিলিয়ন ডলার সংকুচিত হয়েছে। রিজার্ভের সর্বনিম্ন অবস্থানের মধ্যেও জ্বালানি ও নিত্যপণ্য আমদানি স্বাভাবিক রাখতে চলতি অর্থবছরের ৪ মাস ১৬ দিনে (১৩৮ দিনে) রিজার্ভ থেকে প্রায় সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এছাড়া, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি (৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো তুলে নেয়া হয়। অথচ তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় দর ধরে রাখতে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের আমদানি ব্যয় মেটাতে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে, যা দেশের স্বার্থেই করা হয়। আর পর্যাপ্ত ডলার থাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে যে পরিমাণ ডলার রয়েছে তা দিয়ে ৫ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত রোববার ব্যাংকগুলোর মধ্যে লেনদেনে ডলারের বিনিময় হার ছিল ১১০ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১১১ টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমদানিতে এখনও যে গতি রয়েছে, সেটা যদি অব্যাহত থাকে, রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স যেভাবে কমছে, সেভাবে কমলে রিজার্ভ আরও নিচে নেমে আসবে। এবারও বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ঘাটতি নিয়ে অর্থবছর শেষ হবে। তাতে অর্থনীতি আরও চাপে পড়বে।