নিজস্ব প্রতিবেদক:
মোট ব্যয় না বাড়িয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৫৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ৫ মাস থেকে সাড়ে ৪ বছর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে প্রকাশ্যে ব্যয় না বাড়নোর কথা বলা হলেও ভেতরে খরচের মহোৎসব চলবে। অর্থাৎ বেতন-ভাতাসহ নানা ধরনের ব্যয় চলতেই থাকে। এ অবস্থাকে এক ধরনের প্রতারণা হিসাবে দেখছে সংশিবণষ্টরা। তারা বলছেন, টাইম ইজ মানি। সময় বাড়লে খরচ অবশ্যই বাড়বে। সংশোধনী প্রস্তাব ঝামেলামুক্তভাবে অনুমোদন করাতেই এমন অপকৌশলের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সূত্র জানায়, উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই মেয়াদ বাড়ানোর নামে এক ধরনের অপকৌশল চলছে। এ ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রকল্পের মোট ব্যয় না বাড়লেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ সাধারণত প্রায় ২২ ধরনের ভাতা চলমান থাকে। সেই সঙ্গে মেরামত-সংস্কার, গাড়িভাড়া, জ্বালানি ও অফিস ভাড়াসহ নানা খরচ হতেই থাকে। এরপরও সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয় ‘ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই মেয়াদ বৃদ্ধি’। আপাত দৃষ্টিতে এটাকে দোষণীয় মনে না করে অনুমোদনের সুপারিশ দেয়া হচ্ছে। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে এরকম ৩২১টি প্রকল্প ব্যয় ছাড়াই মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে আইএমইডি। ৬ মাস থেকে শুরু করে ৩ বছর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।
২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যয় ছাড়া মেয়াদ বেড়েছে ৩৩৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের। এ ছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২৮৪টি প্রকল্পের। প্রত্যেক বছরই এই ধারা অব্যাহত আছে। সূত্র জানায়, যে ৩৫৪টি প্রকল্পের ব্যয় ছাড়াই মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো স্থানীয় সরকার বিভাগের ৬৪টি প্রকল্প। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের ৬২টি প্রকল্প। তৃতীয় অবস্থানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ৩৫টি।
অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের ৯টি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৮টি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৭টি ও জননিরাপত্তা বিভাগের ১০টি প্রকল্প। তাছাড়া আরো আছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ১১টি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, কৃষি, নির্বাচন কমিশন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া, কারিগরি শিক্ষা, ধর্ম এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের একটি করে প্রকল্প।
এ ছাড়া দুটি করে প্রকল্প আছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের। সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের আছে ৬টি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ৮টি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৫টি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৩টি, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৯টি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ৬টি প্রকল্প।
এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ৭টি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ৭টি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৩টি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ৯টি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ৩টি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ৬টি প্রকল্প। আরও আছে পরিকল্পনা বিভাগের ২টি, নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের ৯টি, পরিবেশ-বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ৩টি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রালয়ের ৯টি প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ বেড়েছে।
সূত্র আরো জানায়, প্রকল্পের সময় বাড়া মানেই খরচ বাড়া। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যা করা হয় সেটা হলো মোট বরাদ্দের মধ্যে কোথাও যদি টাকা বেঁচে যায় বা কম খরচ হয় তাহলে সেই টাকা দিয়ে বাড়তি ব্যয় মেটায়। এটা নিয়মের মধ্য থেকেই করা হয়। দুবার পর্যন্ত ব্যয় ছাড়া মেয়াদ বাড়াতে পারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোই। তিন বার প্রয়োজন হলে পরিকল্পনা কমিশনে আসে। এ ক্ষেত্রে খুব বড় কোনো পরিবর্তন বা বেশি মেয়াদ বাড়ানোর প্রয়োজন না হলে একনেকে উপস্থাপন করা হয় না।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানান, কিছু ক্ষেত্রে বাস্তব কারণে মেয়াদ বাড়াতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে না বলে কৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়ে থাকে। আসলে অনেক ব্যয় কখনো বন্ধ করা যাবে না। সময় বাড়লে ব্যয় বাড়বেই। প্রকল্পের মোট ব্যয় হয়তো তারা বাড়ায় না, কিন্তু বাড়ি ভাড়া, জ্বালানি, গাড়ির খরচ, বেতন ভাতাসহ অনেক পরিচালন ব্যয় তো অব্যাহত থাকে। এ ক্ষেত্রে রাজস্ব খাত থেকে যেমন অর্থ যায়, তেমনি প্রকল্প থেকেও যায়।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ