আগামী বছর বিশ্বে ভয়াবহ খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের প্রবল সম্ভাবনা থাকার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘…যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমার সাম্প্রতিক সফরের সময় আমি অনেক বিশ্বনেতা ও সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রত্যেকেই এই বিষয়টি (খাদ্য নিরাপত্তা) নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন। তারা মনে করেন যে ২০২৩ সাল একটি খুব ভয়াবহ বছর হবে। এ বছরে খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ হতে পারে।’
মঙ্গলবার রাজধানীর এনইসি ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সাপ্তাহিক সভায় দেয়া সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে যুক্ত হন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীনস্থ একটি নির্বাহী কমিটি একনেক, যা সকল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প যাচাই করে এবং অনুমোদন দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং সেগুলো (খাদ্য) সংরক্ষণ করতে হবে। খাদ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে আমাদের বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের মাটি খুবই উর্বর এবং (উর্বর ভূমি ব্যবহার করে) আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে।’
অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এড়িয়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতা বজায় রাখার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানি, গ্যাস এবং অন্য সবকিছু ব্যবহারেই মিতব্যয়িতা বজায় রাখতে হবে। আমি প্রত্যেক পরিবারকে অনুরোধ করব; তারা যেন যতটুকু পারেন, সঞ্চয় করেন। এবং এটি আমাদের সরকারের জন্যও প্রযোজ্য।’
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার কোনো অপ্রয়োজনীয় ব্যয় করবে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা যা প্রয়োজন তা ব্যবহার করব, এর বেশি না। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ আমাদের নেই। কারণ আমি বিশ্বনেতা ও সংস্থা প্রধানদের মধ্যে উদ্বেগ দেখেছি। তাই, আমাদের অবশ্যই সতর্কতামূলক পদক্ষেপগুলো মেনে চলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, ‘তারা (জনগণ) আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। যতদিন মানুষ আমাদের সঙ্গে থাকবে, ততদিন আমাদের কোনো চিন্তা নেই। করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা করার সময়ের মতো জনগণকে আমাদের উৎসাহ দিতে হবে এবং তাদেরকে কাজে লাগাতে হবে।’
তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে দেশে যে মন্দার প্রভাব পড়ছে, তা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।
প্রতিবার মূল্যস্ফীতি নিয়ে আলোচনা করতে পরিকল্পনা কমিশনকে তাদের মূল্যবান সময় ব্যয় না করারও অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘কারণ বিশ্বের অনেক দেশ এই বিষয়ে আলোচনা করে না (খুব বেশি)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো … তাদের নিজেদের দেশে বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদেরও এই বিষয়ে কোনও বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন নেই। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম মানুষের নাগালের মধ্যে রাখার চেষ্টা করা উচিত। যা প্রয়োজন আমরা তাই করব।’
যে কোনো প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, জনগণের সর্বোচ্চ সুবিধা নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘ফান্ড পাওয়া গেলেও কোনো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প হাতে নিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার দরকার নেই। আমাদের যে কোনো প্রকল্প খুব সতর্কতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে নিতে হয়, যাতে সেই প্রকল্প থেকে আমরা কিছু রিটার্ন পেতে পারি; যা দেশের উপকারে আসে। আমরা (এখন শুধু) এই ধরনের প্রকল্প হাতে নেবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সেরকম কোনো প্রজেক্ট নিইনি। আমরা এ ব্যাপারে সবসময় সতর্ক ছিলাম। ভবিষ্যতেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, জনগণের প্রতি তার প্রশাসনের দায়িত্ব রয়েছে। ‘আমরা এটি মনে করি, আর আমরা এজন্যই কাজ করি।’
কিছু অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলেও চলমান প্রকল্পগুলো যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করলে আমরা সেসব প্রকল্পের সুফল পাবো এবং দেশের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমাদের এই প্রকল্পগুলো বাছাই করতে হবে এবং দ্রুত সেগুলোর বাস্তবায়ন করতে হবে।’
যেসব প্রকল্প কিছুটা ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে সেগুলোকে চিহ্নিত করতে সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা ছাড়া কোনো দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘২১ বছর দেশের জনগণের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা ছিল না। ক্ষমতা ছিল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেনানিবাসের ভেতরে। দেশের সংবিধানকে উপেক্ষা করে সামরিক অধ্যাদেশ দ্বারা দেশ পরিচালিত হয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, গণতন্ত্রের নামে প্রহসন হয়েছে এবং ভোট কারচুপি তখনস্বাভাবিক একটা নিয়ম হয়ে গিয়েছিল। ‘আমরা এগুলো দেখেছি। এসব কারণে বাংলাদেশ এগোতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর সরকার বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সাফল্যের পেছনে একটি কারণ আছে। আর তা হলো বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো বাধা ছাড়াই এতদিন গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রয়েছে। গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতার কারণেই আমরা এই সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি।’
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২