মরুভূমির সুস্বাদু ফল ‘সাম্মাম’ এখন বাগেরহাটে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। আর এই ফল চাষ করে কৃষি বিভাগ থেকে সফল চাষি হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার শেখ ফয়সাল আহম্মেদ। ৬ বিঘা জমিতে তিনি সাম্মাম চাষ করেছেন। এছাড়া এক মৌসুমেই ১৫ লাখ টাকার সম্মাম বিক্রি করেছেন তিনি।
বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের গারফা গ্রামের মেকানিকেল ইঞ্জিনিয়ার শেখ ফয়সাল আহম্মেদ আগামীতে সাম্মাম চাষের আয়তন বাড়াতে চান, একই সঙ্গে বিদেশে রপ্তানিরও স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমি অঞ্চলের হলেও বাগেরহাটের মাটি সাম্মাম ফল চাষের উপযোগী।
সরেজমিনে গারফা গ্রামে দেখা গেছে, মধুমতি নদীর দুই পাড়ে মধুমতি এগ্রো নামে ফলের বাগানে মাচায় ফুলে-ফলে ভরপুর সাম্মাম। সবুজ থেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করছে সাম্মাম।
চাষি শেখ ফয়সাল আহম্মেদ জানান, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পাশ করে ঢাকায় দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ১০ বছর চাকরি করেছেন। মা-বাবার পাশে থাকার জন্য দুই বছর আগে চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে আসার পর প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে কৃষিখাতকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে কৃষি কাজে মনোযোগ দেন।
তিনি জানান, ২০২১ সালে তিনি প্রথমে তরমুজের চাষ শুরু করে ১০ লাখ টাকা লোকসান দেন। এরপর চলতি বছর জানুয়ারিতে সাম্মামের বীজ সংগ্রহ করে চারা করে ৪০ শতক জমিতে তিন হাজার সাম্মাম গাছের চারা রোপণ দিয়ে চাষ শুরু করেন। প্রায় আড়াই মাসের মধ্যে সাড়ে চার লাখ টাকার সাম্মাম বিক্রি হয়। এরপর আয়তন বাড়িয়ে ৬ বিঘা জমিতে চাষ করে। তার দুটি প্রজেক্টে ২০ হাজার সাম্মাম গাছ রয়েছে। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এক মৌসুমে ১৫ লাখ টাকার সাম্মাম বিক্রি হয়েছে। ৬ বিঘা জমিতে সাম্মাম চাষ করতে তার প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
শেখ ফয়সাল আহম্মেদের তথ্য মতে, সাম্মাম মরুভূমি অঞ্চলের ফল হলেও প্রযুক্তির ব্যবহার করে দেশের মাটিতে তিনি সাম্মাম ফলাতে সফল হয়েছেন। সাম্মাম সারাবছর জুড়ে চাষ হলেও মূলত শীত আর বর্ষার পরবর্তী সময়ে চাষ ভালো হয়। সাম্মামের চারা রোপণ করার পর ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল ও ফল আসে। আর সব মিলে ৭০ দিনের মধ্যে ফল তোলা যায়। এক থেকে আড়াই কেজি ওজনের সাম্মাম ৯০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন তিনি। তাছাড়া আগামীতে বিদেশে রপ্তানির কথাও ভাবছেন তিনি।
মোল্লাহাটের গারফা গ্রামের এসএম আয়ুব আলী জানান, ফয়সাল আহম্মেদের প্রজেক্টে সাম্মাম দেখে তার ভালো লেগেছে। ওই ফলের বাজার মূল্যে অনেক বেশি এবং চাষ লাভজনক হওয়ায় তিনি পাঁচ শতক জমিতে সাম্মাম চাষ করার জন্য জমি প্রস্তত করেছে। ফয়সাল আহম্মেদের কাছ থেকে বীজ নিয়ে জমিতে রোপণ করবেন।
গারফা গ্রামের আমিনুল ইসলাম নামে অপর এক কৃষক জানান, প্রতিবেশী ফয়সাল আহম্মেদের দেখাদেখি তিনিও সাম্মাম চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, সাম্মাম মূলত বেলে-দোয়াস মাটিতে চাষ হয়। বাগেরহাটের অনেক অঞ্চলের মাটি সাম্মাম চাষের জন্য উপযোগী। মাচা করে সাম্মাম চাষ করতে হয়। গাছের গোড়ার অংশের মাটি একধরনের পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। ফয়সাল আহম্মেদ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাম্মাম চাষে সফলতা পেয়েছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে নানাভাবে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, বিদেশি যে সব ফলের চাহিদা বেশি সেই সব ফল চাষের জন্য কৃষকদেরকে নানাভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রযুক্তিগত সহায়তার পাশাপাশি তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় নানা ধরনের বিদেশি ফলের চাষ হচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহার করে বিদেশি অনেক সুস্বাধু ফল চাষ করলে এক সময় বিদেশ রপ্তানি করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি