April 17, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, January 4th, 2022, 9:22 pm

সারাদেশেই জমি অধিগ্রহণের টাকা প্রদানে লুকোচুরি চলছে

ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :

সারাদেশেই উন্নয়ন কাজে অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানে লুকোচুরি চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের জমি অধিগ্রহণের টাকা বুঝিয়ে দিতে সরকার সময়সীমা বেঁধে দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তার তোয়াক্কা করছে না। বরং নানা জটিলতা সৃষ্টি করে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা দিতে দায়িত্বরতরা গড়িমসি করছে। কাগজে অহেতুক ভুল ধরে, আইনের মারপ্যাঁচের অজুহাত দেখিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের টাকা না দিয়ে দিনের পর দিন ঘুরাচ্ছে। এমনকি কোথাও কোথাও অধিগ্রহণের রেওয়াজের তোয়াক্কা না করেই প্রভাবখাটিয়ে জোর করে জমি অধিগ্রহণ করে উন্নয়ন করা করা হচ্ছে। এসব কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের আইন করে অধিগ্রহণকৃত জমির ৩ গুণ মূল্য দেয়ার ব্যবস্থা করলেও সরকারি কর্মকর্তারা তার তোয়াক্কা করছে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে। ভুক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে জমির দাম হু হু করে বাড়ছে। তাছাড়া সরকার বিগত ২০১৭ সালে আইন সংশোধন করে অধিগ্রহণ জমির দাম ৩ গুণ করেছে। ফলে সারাদেশেই জমি অধিগ্রহণের খরচ বেড়ে গেছে। গত ১৭ বছর বগুড়ার সংযোগ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ঝুলে রয়েছে আর ওই প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে ১৫ গুণ। ২০০৪ সালে সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। কিন্তু ১৭ বছরের ব্যবধানে ওই প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২০৮ কোটি টাকা। পরবর্তীতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে সওজকে অধিগ্রহণ ও নির্মাণ বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু এখনো অনেক ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকই টাকা পায়নি।
সূত্র জানায়, ঢাকার অদূরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের রাস্তা সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ৩ হাজার ৮ শত কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তার মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দ ১৬১ কোটি টাকা রয়েছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তরা জমি অধিগ্রহণের টাকা পাচ্ছেন না। অথচ ইতিমধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পে ১৪৮ জন জমির মালিকের ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ওসব জমির ক্ষতিগ্রস্ত মালিককে টাকা না দিয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে ১৪৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্তরা জমির ক্ষতিপূরণ চেয়ে উচ্চ আদালতে মামলাও করেছে।
সূত্র আরো জানায়, জমি অধিগ্রহণের টাকা দেয়া নিয়ে দেশের যেসব জেলায় টালবাহানা করা হচ্ছে ওই জেলাগুলো হচ্ছে রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, চাঁদপুর এবং নারায়ণগঞ্জ। সড়ক উন্নয়নে সিরাজগঞ্জ জেলায় ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ১৪৫ কোটি টাকা প্রয়োজন হলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেখানে ৬৭ কোটি টাকা দিয়েছে। এখনো ৭৮ কোটি টাকা বাকি রয়েছে। একইভাবে শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি অধিগ্রহণও করা হলেও এখনো অনেকেই টাকা পায়নি। শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়ক উন্নয়নে সরকার ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮৫৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। তার মধ্যে ৯৫ দশমিক ৮৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৪৩১ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৭০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এখনো অনেকের টাকা পরিশোধ করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সড়ক প্রশস্তকরণে ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ওই সড়কের পাশে ৮৩২টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাছাড়া সড়কের উভয় পাশে অবস্থিত ৫টি মসজিদ, ২টি কবরস্থান, ২টি মাজার ও ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওসব প্রতিষ্ঠানকে অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে। কিন্তু তাদের এখনো টাকা দেয়া হয়নি বলে জানা যায়।