April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, January 5th, 2023, 4:12 pm

সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নে প্যালিয়েটিভ কেয়ার অপরিহার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর :

দেশের ৬৭ শতাংশ মানুষ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। মৃত্যুকে দ্রুততর করা অথবা স্থবির করার মত মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে নিরাময় অযোগ্য ব্যধিতে ভুগতে থাকা মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের নিরাপদ মৃত্যুর নিশ্চয়তা প্রয়োজন। হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, ক্যানসারসহ বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত রোগীকে শারীরিক ও মানসিক, আত্মিক ও সামাজিকভাবে সাপোর্ট দিতে হবে। এ লক্ষে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি আয়াত এডুকেশন প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিয়ে কাজ করছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা প্রশমন সেবা অপরিহার্য।

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুরে আরডিআরএস বাংলাদেশ ভবনের রোকেয়া মিলনায়তনে ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা প্রশমন সেবা’ শীর্ষক একটি সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, চিকিৎসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ছাড়াও জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেন।
রংপুর বিভাগীয় (স্বাস্থ্য) পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা অধিশাখা) সাবিনা আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি) কর্মসূচির লাইন ডাইরেক্টর ডা. রোবেদ আমিন, রংপুর জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন, অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মধুসুদন রায়, রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) এর উপাধ্যক্ষ ডা. মাহাফুজার রহমান, রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরিফুল হাসান, জেলা সিভিল সার্জন শামীম আহমেদ।
বক্তব্যে অতিথিরা বলেন, প্রতিবছর দেশে অর্থের অভাবে প্রায় ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও কোন চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন না। বাকীদের স্বাস্থ্য-ব্যয়ের ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ আসে ব্যাক্তির নিজের পকেট থেকে। দেশে প্রতিবছর ১০ লাখ মানুষ মারা যান যার মধ্যে ৬ লাখ মানুষের প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা প্রশমন সেবার প্রয়োজন। অথচ এক ভাগেরও কম রোগী এই সেবা পেয়ে থাকে। বেশিরভাগ প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা প্রশমন সেবা রোগী অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত এবং দেশে প্রতিবছর ৬৭ শতাংশ মানুষের মৃত্যু অসংক্রামক রোগের কারণে হয়ে থাকে।
বক্তারা আরও বলেন, প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা প্রশমন সেবা এমন একটি সহায়ক ব্যবস্থা, যাতে রোগীর পরিবার রোগীকে দেখাশুনা করার সময়ে এবং রোগীর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে নিজেদের সামলে রাখতে পারে। এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি সামগ্রিক সেবা ব্যবস্থা যা নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত মানুষ ও তাদের পরিবারের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক কষ্ট কমাতে সাহায্য করে। প্যালিয়েটিভ কেয়ার অপ্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য ব্যয় কমায়, রোগী কেন্দ্রিক রোগ কেন্দ্রিক নয়, সর্বদা রোগীর পরিবারের পাশে থাকে, রোগীর ইচ্ছাকে সর্বদা সম্মান করে এবং গুরুত্ব দেয়। পাশাপাশি ব্যথা সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে এনে রোগীর সর্বোচ্চ আরাম নিশ্চিত করে।
সেবা যেকোন বয়সের দীর্ঘমেয়াদী, জীবন-সীমিতকারী ও নিরাময় অযোগ্যরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্যালিয়েটিভ কেয়ার এর মাধ্যমে উপকৃত হতে পারেন। ক্যানসার, ফুসফুসের রোগ, দীর্ঘমেয়াদী কিডনি/হৃদযন্ত্রের অসুখ, প্রান্তিক ডায়াবেটিস/ডিমেনশিয়া, এইচআইভি/এইডস, ক্রমবর্ধমান স্নায়ুতন্ত্রের অসুখসহ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীরা প্রশমন সেবা নিতে পারবেন।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি) কর্মসূচির ডা. শহিদুল ইসলাম। বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম মতিউর রহমান ভূইয়া ও আয়াত এডুকেশনের প্রকল্প পরিচালক লায়লা করিম।