জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট সরু খালগুলোকে সিলেট অঞ্চলে ‘ছড়া’ বলা হয়। ছড়া সাধারণত পাহাড়ি এলাকায় দেখা যায়। বর্ষায় জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচতে ছড়া কার্যকর ভূমিকা রাখে। সিলেট নগরীর ক্ষেত্রেও একথা সত্য। কিন্তু বাস্তবতা হলো- যে ছড়ায় বাঁচে নগরের প্রাণ, সেই নগরীর মানুষের অবহেলায় ছড়াগুলো এখন মৃতপ্রায়।
যদিও সিলেটের বুক চিরে সুরমায় মিলিত হওয়া ছড়াগুলোর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে গত এক যুগে ব্যয় হয়েছে প্রায় চারশ কোটি টাকা। তারপরও সচেতন নাগরিকরা বলছেন, পুরো টাকাই জলে গেছে। নাগরিক সচেতনতার অভাবে ছড়াগুলো পুনরায় ভরে উঠেছে ময়লা আবর্জনায়।
অপরিকল্পিত নগরায়ন, ছড়া-খাল দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ, জলাশয় ভরাটের কারণে গত দুই দশকে বদলে গেছে সিলেটের চিত্র। ভারি বৃষ্টি হলেই জলমগ্ন হয়ে পড়ছে নগর। সড়ক ছাপিয়ে বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকে। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। এমন পরিস্থিতিতে গত এক যুগ ধরে চলছে ছড়া-নালা উদ্ধার অভিযান। কিছু ছড়া উদ্ধারের ফলে স্বাভাবিক হয়েছে পানিপ্রবাহ। এর সুফল পাচ্ছেন নগরবাসী।
তবে বিভিন্ন স্থানে ছড়া দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়ায় এখনো রয়ে গেছে প্রতিবন্ধকতা। গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে ময়লা আবর্জনা।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, নগরীর ভেতর দিয়ে ৯টি ছড়া প্রবাহিত হচ্ছে। ছড়াগুলো হলো- মালনীছড়া, কালীবাড়ি ছড়া, মঙ্গলী ছড়া, যোগিনী ছড়া, হলদি ছড়া, ভুবি ছড়া, গোয়ালি ছড়া, ধোপা ছড়া ও গাভিয়ার খাল। নগরীর সোনারপাড়া এলাকায় গোয়ালি ছড়ায় দেখা যায় ময়লা আবর্জনা স্তূপ। অথচ এই ছড়াটি উদ্ধার ও পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) ব্যয় হয়েছে কয়েক কোটি টাকা।
সচেতন নাগরিক কমিটি সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ছড়া খাল উদ্ধারে একাধিক প্রকল্প নেওয়া হলেও নগরবাসী তার খুব একটা সুফল পায়নি। প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। যতটুকু হয়েছে, সেগুলোও যদি পুনরায় ময়লা আবর্জনায় ভরে যায় তাহলে দুঃখজনক। ছড়া নালা উদ্ধার অভিযানের দীর্ঘমেয়াদী সুফল পেতে নগরবাসীকে যেমন সচেতন হওয়া প্রয়োজন, তেমনি সিসিককেও তদারকি বাড়াতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
সিসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর জানান, ছড়ার ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা তাদের নিয়মিত কাজের অংশ। কিন্তু নাগরিকরা অসচেতনভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে অনেক জায়গায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এখন মালনীছড়ায় কাজ চলছে। গোয়ালি ছড়ায় কয়েকদিনের মধ্যে পরিষ্কার অভিযান শুরু হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি