জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সিলেটের ৩ পয়েন্টে পানি বাড়লেও ৬ টি পয়েন্টে কমেছে পানি। আর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমলেও সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আগামী ২৪-৪৮ ঘন্টা সুনামগঞ্জ সিলেট অঞ্চলে ভারিবৃষ্টিপাতের পূর্বভাস থাকায় সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদি বন্যা সৃষ্টি হতে পারে। তবে বৃষ্টিপাত কমে গেলে দ্রুতই পানি নেমে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ বৃষ্টিপাত তুলনামুলক কম হলেও পাহাড়ি ঢলে জেলার সবকটি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এর মধ্যে সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সুনামগঞ্জ পয়েন্টে তা এখনও বিপদসীমার নিচে আছে। এছাড়া সীমান্ত নদী যাদুকাটা, পুরাতন সুরমাসহ অন্যান্য নদ নদীর পানিও এখনো বিপদসীমার নিচে রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মামুন হাওলাদার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জের লাউড়েরগড় পয়েন্টে ৩১ মিলিমিটার, ছাতকে ৩৬ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জে ৩১ মিলিমিটার এবং দিরাইয়ে ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাত কম হলেও ঐ সময়ে সুরমাসহ অন্যান্য নদ নদীতে পানি বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ৭.৫২ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল। যা বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচে। তবে একই নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া নলজুর নদীতে ৬.২৭ সেন্টিমিটার উচ্চতায়, পাটলাই নদীতে ৫.৮১ সেন্টিমিটার উচ্চতায়, দিরাইয়ে পুরাতন সুরমায় ৫.৬৮ সেন্টিমিটার, যাদুকাটায় ৫.১৬ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, বন্যা মোকাবেলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নগদ ২৫ লাখ টাকা, ৬০০ মেট্টিকটন জিয়ার চাল, ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ রাখাসহ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে সংশ্লিষ্টদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় সিলেটে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। ফলে ৬টি পয়েন্টে কমেছে পানি। এছাড়া এই সময়ে অন্তত ৩টি পয়েন্টে পানি বেড়েছে। তবে সিলেটের কোন পয়েন্টেই বর্তমান বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছেনা বলে পাউবো সূত্রে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, গেল ২৪ ঘন্টায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ০.০৬ সেন্টিমিটার কমেছে। সুরমার পানি সিলেট পয়েন্টে ০.০২ সেন্টিমিটার বেড়েছে। কুশিয়ারার পানি অমলশিদ পয়েন্টে ০.২৩ সেন্টিমিটার এবং শেওলা পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার কমেছে। অপরদিকে কুশিয়ারার পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ০.০৯ সেন্টিমিটার বেড়েছে এবং শেরপুর পয়েন্টে ০.০৫ সেন্টিমিটার কমেছে।
এদিকে, লোভা নদীর পানি লোভাছড়া পয়েন্টে ০.১০ সেন্টিমিটার কমেছে। সারি’র পানি সারিঘাট পয়েন্টে ০.০৬ সেন্টিমিটার কমেছে। ধলাই নদের পানি ইসলামপুর পয়েন্টে অন্তত ০.৩০ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান বলেন, সিলেট জেলায় বন্যা প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় ত্রাণ কার্য পরিচালনার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর হতে সোমবার ১০ লক্ষ টাকা নগদ অর্থ এবং ২ হাজার প্যাকেট/বস্তা শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এছাড়া বর্তমানে জেলায় (উপজেলায় বরাদ্দকৃতসহ) ত্রাণ উপকরণ ১ হাজার ৪৫৭ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ অর্থ ৪৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা মজুদ আছে। সম্ভাব্য সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উপর জেলা প্রশাসনের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি