জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের সতর গ্রামের আনোয়ারুল উলুম মাদরাসার মুহতামিমের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
৩১ মার্চ বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এ অভিযোগ করেন মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম। বেলা ২টায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নূরুল ইসলামের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য রুকনুজ্জামান চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমাদের এলাকায় দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে স্থানীয়রা ১৯৮৬ সালে আনোয়ারুল উলুম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দেশ-বিদেশের দানশীল ব্যক্তিরা নানাভাবে ব্যাপক সাহায্য-সহযোগিতা করে শিক্ষপ্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় অবদান রাখছেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে মাদরাসাটির মুহতামিমের (প্রধান শিক্ষক ও পরিচালক) দায়িত্ব পালন করে আসছেন সতর দক্ষিণপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার। কিন্তু তাঁর দায়িত্বকালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত কোনো আয়-ব্যয়ের হিসাব ম্যানেজিং কমিটিকে দেননি।
সরল বিশ্বাসে বিগত কমিটির সদস্যরা তার কাছে হিসাব প্রকাশের জোর দাবিও জানানি। এ সুযোগে দেশ-বিদেশের প্রায় ৩১টি খাত থেকে নগদ ও বিভিন্নভাবে পাওয়া সহায্য-সহযোগিতা এবং অনুদানের অন্তত ৮ কোটি টাকা তিনি আত্মসাত করেছেন মুহতামিম আব্দুস সাত্তার। এছাড়াও মাদরাসায় দানকৃত জমিও বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
সম্প্রতি স্থানীয়দের জোর দাবিতে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি তার কাছে সবকিছুর হিসাব চাইলে নানা টালবাহানা করে হিসাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। এর জের ধরে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মাদরাসার একটি বৈঠকে তার অনুসারীরা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. নূরুল ইসলামসহ অন্য সদস্যদের উপর হামলা করেন। এ বিষয়ে নূরুল ইসলাম বাদি হয়ে সিলেট জালালাবাদ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মুহতামিম আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে রুকনুজ্জামান চৌধুরী জানান, মাদরাসাটিতে মুহতামিম ছেলে ও নাতনীসহ তার পরিবারের ৬ জন সদস্যকে চাকির দিয়েছেন। মাদরাসাটিতে দাখিল সমমান পর্যন্ত মহিলারদের ক্লাস রয়েছে। তার ছেলে মাওলানা ফখরুল ইসলাম ছাত্রীদের সঙ্গে অসামাজিক ও অশ্লীলতাপূর্ণ আচরণ করেন।
মুহতামিম ও তার ছেলের মদদে মাদরাসার নাজিম (শিক্ষাসচিব) মো. কুতুব উদ্দিন স্থানীয় নিরীহ ৮টি পরিবারের জায়গা দখল করেছেন। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো মাদরাসা কমিটির কাছে এ অভিযোগ করলে ম্যানেজিং কমিটি তাকে দায়িত্ব থেকে সাময়ীক অব্যাহতি দেয়। কিন্তু মুহতামিম ও তার ছেলে জোরপূর্বক আবার সেই বিতর্কিত নাজিমকে স্বপদে পুনর্বহাল করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, মুহতামিম আব্দুস সাত্তার এ পর্যন্ত মাদরাসার আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব না দিয়ে ছেলে ফখরুল ও নাজিম কুতুব উদ্দিন এবং তাদের লাঠিয়াল বাহিনীর শক্তিতে দাপটের সঙ্গেই আছেন এবং দিন দিন দ্বিনি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
এমতাবস্থায় মাদরাসাটি রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে মাদারাসার ম্যানেজিং কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাদরাসার ম্যানেজিং ও কার্যকরি কমিটি সদস্য মাস্টার জমির হোসেন, সুরুজ আলী পীর, আফতাব উদ্দিন মেম্বার, আব্দুল মান্নান, তেরা মিয়া ভূলাই, ফারুক আহমদ, রইছ উদ্দিন, মাওলানা তৈবুর রহমান, মাওলানা জালাল উদ্দিন, মাওলানা নুরুল মুত্তাকিন, জুনাব আলী, দিলবার আহমদ মেম্বার, তাহির মিয়া ও মাওলানা মইন উদ্দিন প্রমুখ।
এদিকে, সকল অভিযোগের বিষয়ে মুহতামিম আব্দুস সাত্তারের ছেলে মাওলানা ফখরুল ইসলাম বলেন, সকল অভিযোগ মিথ্যা। নূরুল ইসলামের স্বার্থে আঘাত পড়েছে তাই তিনি এবং তার অনুসারীরা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। মূলতঃ তিনি বর্তমান কমিটির সভাপতি-ই নন। এলাকার একপক্ষের আপত্তি রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এক রকম জোর করেই তিনি সভাপতি পদ আকড়ে রেখেছেন।
মাওলানা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, আমার বাবা ও আমি এবং নাজিম কুতুব উদ্দিন মাদরাসার জন্য নিবেদিতপ্রাণ। আমার বাবা জীবনটাই শেষ করে দিয়েছেন মাদসারা জন্য। নূরুল ইসলাম ও তার অনুসারীরা মাদরাসার টাকা আত্মসাত করতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের জন্য পারছেন না। আমরা তার পথের কাটা হওয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি