জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সিলেট জেলায় চলতি রবি মৌসুমে সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া, রোপা আমনের আবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিগত মৌসুমের চেয়ে ৩ হাজার হেক্টর অধিক জমিতে রোপা আমন আবাদ করায় ৮ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বনির্ভর করে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শনার প্রেক্ষিতে সিলেট জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সিলেট জেলায় পতিত জমি আবাদের আওতায় আনার উদ্যোগের অংশ হিসেবে এসব জমি আবাদের আওতায় এসেছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। খাদ্য উৎপাদনে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়ে ‘এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না’ মর্মে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের প্রেক্ষিতে সিলেট জেলায় অনাবাদি কৃষি জমি চাষের আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের ফলে রোপা আমন চাষের ক্ষেত্রে বাস্তব অগ্রগতি হয়। জেলার বিগত মৌসুমের চেয়ে ৩ হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে রোপা আমন আবাদ করায় ৮ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫১ কোটি টাকা। এছাড়া. রবি মৌসুমের শুরুতে জেলার ৪১ হাজার ৭৯৮ হেক্টর অনাবাদি চাষযোগ্য জমির মধ্যে ১১ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমি আবাদের আওতায় আনা হয়েছে। যার মধ্যে প্রশাসনের উদ্যোগে ও উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে ১ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে ১৭ লক্ষ টাকার সরিষার বীজ ক্রয় করে ১৩টি উপজেলার ৫ হাজার ৩৯১ জন পতিত জমির মালিকের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এছাড়া, কৃষি প্রণোদনা হিসেবে জেলার ২১ হাজার ৭শ’ জন কৃষকের মধ্যে সরিষা বীজ, সার ও কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হয়। ফলে এবছর আড়াই হাজার মেট্রিক টন সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, যার বাজার মূল্য ১৭ কোটি টাকা বলে জানান তারা।
এদিকে, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে কৃষক ও জমির মালিকদের উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষে তৃণমূল পর্যায়ের কৃষাণ-কৃষাণীদের নিয়ে সিলেট জেলার প্রতিটি উপজেলায় কৃষক সমাবেশের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয় সম্পর্কে কৃষকদের দিকনিদের্শনামূল পরামর্শ প্রদান এবং বীজ, সার ও কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা কৃষি অফিসার, কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপকসহ জনপ্রতিনিধিরা যোগদান করেন। ফলে কৃষক ও পতিত জমির মালিকরা অনাবাদি জমি চাষের আওতায় এনে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এছাড়া, কৃষি ঋণ সম্পর্কে অবহিতকরণ, সহজে কৃষি ঋণ প্রাপ্তি, তাৎক্ষণিক ঋণ প্রদান ও ঋণ বিতরণে জেলা প্রশাসন জেলার সকল কৃষি ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকগুলো নিয়ে জেলায় প্রথমবারের মতো কৃষি ঋণ মেলার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। এছাড়াও আশ্রায়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের মধ্যে বিভিন্ন জাতের ফসল ও সবজির বীজ বিতরণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস বর্ণনাকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষে কৃষির গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন জাতের সবজি বীজ বিতরণ করেছেন তারা। ফলে অনেকে নিজস্ব খাদ্য চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত ফসল বিক্রি করে আর্থিক সুফল পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি