April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, October 30th, 2021, 8:30 pm

সিলেটে আবারও আলোচনায় ওসি আতাউর

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সিলেটে আবারও নতুন করে আলোচনায় এসেছেন বিতর্কিত কর্মকান্ডে বরখাস্ত হওয়া পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বাবুল। তার বিরুদ্ধে থাকা একটি নির্যাতনের মামলায় কয়েক বছর পর বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যার ফলে তাকে নিয়ে গোটা সিলেট জুড়ে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে সিলেট মহানগর পুলিশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোতোয়ালী থানায় ওসি পদে পোস্টিং নিয়ে আসেন আতাউর রহমান বাবুল। তার গ্রামের বাড়ি জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের ডিগ্রি গ্রামে। কোতোয়ালী থানায় যোগদানের মাত্র এক বছরের মধ্যে তার সম্পদ ফুলেফেঁপে ওঠতে থাকে।
২০১৪ সালের জুলাইয়ে তিনি সুনামগঞ্জের ছাতক পৌরসভার তৎকালীন মেয়রের ভাই কামাল আহমদ চৌধুরীকে নগরীর নয়াসড়ক থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে থানায় রাতভর নির্যাতন করেন ওসি আতাউর রহমান বাবুলসহ চার পুলিশ সদস্য। এ ঘটনায় তখন তোলপাড় হয় সিলেটে। সিলেট-১ আসনের তৎকালীন সাংসদ ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি হাসপাতালে কামাল চৌধুরীকে দেখতেও যান।
এদিকে, একটি রিটের প্রেক্ষিতে ওসি আতাউরসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও মামলা রজ্জুর নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। এরই প্রেক্ষিতে মামলা হয় তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন- ওসি আতাউর রহমান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবু তাহের, কনস্টেবল অধীর চন্দ্র ও রাজীব কান্তি দাস। এসব আসামি বর্তমানে জামিনে আছেন।
ওই মামলায় প্রায় ৭ বছর পর গত বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর মধ্য দিয়ে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই সন্ধ্যার দিকে সিলেট নগরীর নয়াসড়ক এলাকার একটি পোশাকের দোকানের গাড়ি পার্কিং করা নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে কামাল আহমদ চৌধুরীকে থানায় তুলে নিয়ে যায় একদল পুলিশ। সেখানে তাকে রাতভর নির্যাতন করা হয়। পরদিন সকালে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হলে তার পরিবার বিষয়টি জানতে পারে।
পরে এ ঘটনায় নির্যাতনের মামলা হয়। মামলায় পাঁচজনকে আসামি করা হয়। তবে পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে মামলাটি তদন্ত করে ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি বরখাস্ত ওসি আতাউরসহ চারজনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ওই বছরের ৬ এপ্রিল আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করেন আতাউর। পরে অভিযুক্তরা জামিন পান।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ মামলায় গত বৃহস্পতিবার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সুনামগঞ্জের বীরগাঁও ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সাক্ষ্য দিয়েছেন।
সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আসামির কাঠগড়ায় বরখাস্ত হওয়া ওসি আতাউর রহমান, বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবু তাহের, কনস্টেবল অধীর চন্দ্র ও রাজীব কান্তি দাস হাজির ছিলেন।
সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সৈয়দ শামীম আহমদ বলেন, মামলায় ৫১ জন সাক্ষী আছেন। এর মধ্যে মাত্র দুজনের সাক্ষ্য গ্রহণের পর দুই দফা করোনা পরিস্থিতির কারণে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার আরও একজনের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনায় থাকা সিলেটের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) নূরে আলম সিরাজী বলেন, সাক্ষ্য গ্রহণের সময় আদালতে হাজির থাকার শর্তে চারজন আসামি বর্তমানে জামিনে আছেন। দুই দফা করোনা পরিস্থিতি ও পুলিশ সদস্যদের বরখাস্ত–পরবর্তী তাঁদের বিভাগীয় মামলার কারণে নির্যাতনের মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ বিলম্বিত হয়েছে। এখন দ্রুত সাক্ষ্য গ্রহণ করে মামলাটির পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।