জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সিলেটের অর্ধেক এলাকায় এখনও নামেনি বন্যার পানি। এ অবস্থার মাঝেই নতুনভাবে বাড়িঘর গোছানোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন অনেকে। বাড়ি থেকে বন্যার ক্ষত সারাতে ব্যস্ত তারা। তাদের মধ্যে নেই ঈদের আমেজ। এই কারণে এখনও জমে উঠেনি কোরবানির পশুর হাট। ক্রেতার পাশাপাশি বিক্রেতার উপস্থিতিও কম। সিলেটের কোরবানির পশুর হাট নিয়ে এবার শঙ্কা কাটছে না। কাঙ্খিত বিক্রয় না হওয়ায় গরু ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, সিলেট সদর উপজেলায় প্রচুর গবাদি পশু রয়েছে। এসব গবাদি পশু নিয়ে বন্যায় রীতিমতো তাদের যুদ্ধ করতে হয়েছে। কেউ কেউ গবাদি নিয়ে যান আশ্রয়কেন্দ্রে। আবার কেউ কেউ ব্রিজের উপর বেঁধে রাখেন পশু। উপজেলার বাইশটিলার উপর নিয়ে রাখেন কেউ। প্রায় দুই সপ্তাহ গবাদি পশুর খোঁজ কেউ নিতে পারেননি। খাবার সংকটে অনেকে জন্য অনেক পশুই প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। অনেক কৃষকই বন্যার কারণে কম মূল্যে পশু বিক্রি করে দিয়েছেন। রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে থাকার কারণে গো-খাদ্যের সংকট চরমে। মানুষই যেখানে খাদ্য সংকটে পড়েছে; সেখানে পশুর খাবার জোগাড় করা কষ্টকর হয়ে যায়। এতে করে এবারের হাটে দেশি পশু কম উঠবে।
সংশ্লিষ্ট বলছেন, দুই দফা বন্যায় সিলেট এখন বিপর্যস্ত। লাখ লাখ মানুষ পড়েছেন সঙ্কটের মধ্যে, এর প্রভাবে এবার কুরবানীর বাজারে পড়বে
সরেজমিনে ৭ জুলাই বৃহস্পতিবার সিলেট নগরীর বৃহত্তম কাজিরবাজার পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায় ফাঁকা হাট। দেশি কিংবা সিলেটের বাইরের পশুর উপস্থিতি কম। ক্রেতাও কম। বাজার নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে খোদ সিলেটের এই প্রধান হাটের কর্তৃপক্ষ। বাজারে ক্রেতারা ছোট ও মাঝারি গরুর দিকে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বড় গরু কিনতে ক্রেতাদের আগ্রহ কম।
কাজিরবাজার পশুর হাটের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন জানান, সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার খামারি ও ব্যবসায়ীরা ট্রাকে করে পশু নিয়ে আসেন। এবার বন্যায় বেশিরভাগ সড়ক তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে কেউ পশু নিয়েও আসতে পারছেন না। তবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, দু’একদিনের মধ্যে হাটে পশুর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি আনাগোনা বাড়বে ক্রেতা-বিক্রেতারও।
তিনি বলেন, হাট কর্তৃপক্ষ হিসেবে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু এবার তেমন সাড়া নেই। সিলেটের বাইরের পশু ব্যবসায়ীরা এখনো সিলেটমুখী হননি। এর কারণ দুটি। একটি বন্যা ও অপরটি পথে পথে অবৈধ হাটে জোরপূর্বক পশু নামিয়ে নেয়া। এ কারণে সিলেটের হাটে বাইরের ব্যবসায়ীরা আসতে অনীহা দেখাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বাইরের ব্যবসায়ীদের নিয়ে আসতে। ওরা না এলে সিলেটের কোরবানি দাতাদের চাহিদা পূরণের মতো পশু মিলবে না। তবে সিলেটের কাজিরবাজারে মূলত শেষ দিকে এসে বাজার জমে। কারণ শহরের মানুষ শেষের দু’দিনই পশু কিনে।
এজন্য শেষদিকে বাজার জমবে বলে আশা করছেন হাট কর্তৃপক্ষ। এবার সিলেটে ৫১টি পশুর হাট বসানো হয়েছে। এরমধ্যে সিলেট শহরে ৬টি এবং উপজেলাগুলোতে ৪৫টি পশুর হাট। উপজেলার পশুর হাটের চিত্র কাজিরবাজারের মতোই। এখনো জমেনি বেচাকেনা।
ক্রেতারা জানান, এবার পশুর দাম দ্বিগুণ চাওয়া হচ্ছে। এ কারণে এখনো পশু কেনার মতো পরিস্থিতি নেই। বাইরের কারবারিদের অপেক্ষায় রয়েছেন ক্রেতারা। বাজারে পশু বিকিকিনি কম হলেও নগর কিংবা বাইরের খামারগুলোতে কেউ কেউ গিয়ে পশু কিনছেন। কেউ কেউ আবার অনলাইনেও পশু বুকিং দিয়ে রাখছেন। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মস এসোসিয়েশন সিলেট জেলার সভাপতি ও সিটি কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান বলেন, এবার তার খামারেও ছিল হাঁটুপানি। খামারে থাকা পশুদের নিয়ে তারাও ছিলেন শঙ্কায়। এখন বন্যার পানি নামার পর পশুর যতœ নেয়া হচ্ছে। খাদ্যেরও সংকট ছিল। তবে- এবার সিলেটের কোরবানির পশুর হাট নিয়ে তার মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। বাজারে এখনো চাহিদা অনুপাতে অনেক কম পশু রয়েছে। ফলে সিলেটের বাজারের পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়- সেটি এখনো অস্পষ্ট বলে জানান কামরান।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, সিলেট বিভাগে ১৪ হাজার ৯৭১ জন খামারীর কাছে দু’লাখ ৪৩ হাজার ৮০৩টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। এর মধ্যে ৯১ হাজার ৩৭৫টি ষাঁড়, ২৭ হাজার ৪৬৬টি বলদ, ২৩ হাজার ৪৯০টি গাভী, ৮ হাজার ৯৩৬টি মহিষ, ৬২ হাজার ৬১৩টি ছাগল ও ২৯ হাজার ৯২৩টি ভেড়া রয়েছে। এছাড়া পারিবারিকভাবে আরো এক লাখ ৫০ হাজার ৪০৩টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ সিলেট সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহায় সিলেট জেলায় ৭৭ হাজার ৩৯২টি কোরবানীযোগ্য পশু রয়েছে। এর মধ্যে ষাঁড়, বলদ ও গাভী আছে ৪৩ হাজার ৭৭৪টি, মহিষ চার হাজার ৬৫২ টি ও ছাগল-ভেড়া ২৮ হাজার ৯৬৬টি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ড. মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, তিন দফা বন্যার পরও সিলেটে ঘাটতি হবে না কুরবানিযোগ্য পশুর।
কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, সিলেটের বাহিরে থেকে প্রতিবারই প্রচুর পরিমাণ পশু সিলেটে আসে। যে কারণে চিন্তার কোনো কারণ নেই। তবে বন্যা পরিস্থিতির কারণে এ বছর কোরবানিও কমতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
উল্লেখ্য, সিলেট জেলা ও মহানগরে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৪১টি কোরবানির পশুর হাট বসার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি