November 16, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, June 20th, 2022, 9:27 pm

সিলেটে কমছে বন্যার পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ

সিলেটে সুরমা নদীর পানি ধীর গতিতে কমতে শুরু করলেও বাড়ছে কুশিয়ারা নদীর পানি। তবে সুরমা নদীর পানি সামান্য কমলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

প্লাবিত এলাকার বেশিরভাগ এখনও পানির নিচে। নগরীর উচু এলাকায় পানি কমলেও নিম্নাঞ্চলের বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। উপশহরের প্রধান সড়কে এখনও কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পর্যন্ত ডুবে আছে। ফলে বন্যা কবলিত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, রবিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার ও সিলেট (নগরী) পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার কমেছে। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে কমলেও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। অবশ্য সারি ও লোভাছড়া নদীর পানি কমেছে।

সোমবার (২০ জুন) বেলা ১১টার দিকে সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার ও কানাইঘাটে ১ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে ১ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৬৩ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সিলেটে পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, ‘আজ সুরমা নদীর পানি আরও কমবে।’ কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ার কারণে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হতে পারে। তবে তা মারাত্মক কিছু হবে না।’

এছাড়া গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, সদর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, বালাগঞ্জে প্লাবিত এলাকার পানি ধীরে ধীরে কমছে বলে জানান তিনি।

এদিকে নদীর পানি কমতে থাকায় নগরীতে প্লাবিত এলাকাগুলোর পানিও কমতে শুরু করেছে। তবে নগরীর উপশহর, তালতলা, তেররতন, ঘাসিটুলাসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনও পানি রয়েছে। নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলেও প্লাবিত এলাকার মানুষ এখনও অন্ধকারে রয়েছেন। অনেক এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় চরম সংকটে রয়েছেন নগরবাসী।

জানা গেছে, সিলেট নগরীতে অনেক এলাকায় বাসায় দুই তলা ও তিন তলাতে মানুষ আটকা পড়েছেন।

এদিকে, এখনও সিলেটের অনেক জায়গায় মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে কে কোথায় আশ্রয় নিয়েছেন তার খবর নিতে পারছেন না পরিবার বা আত্মীয় স্বজনরা। এছাড়াও সিলেটের বাইরে থেকে সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে সিলেটেই আটকে পড়েছেন অনেকে। তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

রহিম নামের একজন বলেন, ‘আমার স্ত্রী, দুই সন্তান সবাই সুনামগঞ্জে। আমি বন্যার কথা শুনে ঢাকা থেকে আসছি। এখন তো সুনামগঞ্জে যেতে পারছি না। মোবাইলে নেটওয়ার্ক নেই। আমি জানি না তারা কোথায় আছে।’

আরেকজন বলেন, ‘কুমিল্লা থেকে আসছি। এখনতো আর কোথাও যেতে পারছি না। পরিবার কোথায় আশ্রয় নিয়েছে তার খোঁজ এখনও পাইনি। জেলা প্রশাসক সীমিত আকারে মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে বলে দাবি করলেও, সুনামগঞ্জের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সিলেট শহরের বাসিন্দা থৌদাম বৌলি বলেন, সুনামগঞ্জ এবং সিলেটের আশেপাশের এলাকার মানুষজন এসে আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আমাদের এলাকায় এখনো পানি আসেনি। তবে আমরা বাইরে বের হয়ে শুকনা খাবার বা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারছি না। কারণ দোকান সব বন্ধ, আর যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো অনেক দাম। আমার জীবনে আমি এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতি দেখিনি কখনো।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, শহর থেকে পানির উচ্চতা কিছুটা কমলেও জেলার ৯০ শতাংশ এখনও পানির নিচে। জেলার ৭০ হাজারের মতো মানুষ ২২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন।

এদিকে কর্মকর্তারা বলছেন, হাওর ও অন্যান্য প্রত্যন্ত এলাকার যারা নিরাপদ দূরত্বে এখনো সরে আসতে পারেননি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী।

—ইউএনবি