April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, October 26th, 2021, 6:31 pm

সিলেটে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট: বাড়ছে ক্ষোভ

ফাইল ছবি

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সিলেটে জ্বালানি তেল সংকট প্রকোট আকার ধারণ করছে। তেল সংকটের কারণে দিনে দিনে স্থবির হয়ে পড়ছে এর সাথে জড়িত বিভিন্ন খাতের মানুষের জীবনযাত্রা। এই সংকটের জন্য সংশ্লিষ্টরা রেলের ওয়াগন সংকটকে দায়ী করছেন। এছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন বন্ধ থাকার কারণে এ সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, সিলেটে প্রতিদিন প্রায় ১০ লক্ষ লিটার জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে সরবরাহ আছে মাত্র ১ থেকে সোয়া ১ লক্ষ লিটারের মতো। বর্তমানে যে তেল সরবরাহ হচ্ছে তা সিলেটের চারটি ডিপোর মধ্যে ভাগ করে নেন তারা। এর জন্য কোন কোম্পানীই তাদের গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করতে পারেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেটের পেট্রোল পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেল আসে চট্টগ্রাম থেকে। সিলেটে তেল সরবরাহ রেলের ওয়াগন নির্ভর। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ রেল বিভাগের উদাসিনতার কারণে তেলের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তাদের দাবী রেল কতৃপক্ষ আন্তরিক হলে এই সংকট অনেকটা কাটিয়ে উঠা সম্ভব। এছাড়া সিলেটের গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাসের সাথে প্রাপ্ত উপজাত কনডেনসেট থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন প্রায় দুই বছর থেকে বন্ধ রয়েছে। ফলে এই এলাকায় জ্বালানী তেল সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল বিপননকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সিলেটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে প্রতি সপ্তাহে ৩ থেকে ৪টি তেলবাহী ওয়াগন আসতো। প্রতিটি ওয়াগনে গড়ে ৩ লক্ষ লিটার করে জ্বালানী তেল আসতো। তবে গত কয়েক মাস ধরে ওয়াগন আসা কমে গেছে। বর্তমানে সপ্তাহে মাত্র একটি ওয়াগন আসছে। তাও আবার নিয়মিত নয়। ফলে তেলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গত সপ্তাহে মাত্র একটি ওয়াগন সিলেট আসে গত রোববার। আবার তেলবাহী ওয়াগনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে পুরো এক সপ্তাহ। এরকম চলতে থাকলে সিলেটের জ্বালানী খাত হুমকীর মুখে পড়বে বলে জানিয়েছেন এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে সিলেটে ডিজেল ও পেট্টোলের পাশাপাশি অকটেনেরও সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকটের সমাধানে গত ২১ অক্টোবর সিলেটে যমুনা অয়েল কোম্পানীর এমডি গিয়াস উদ্দিন আনসারীর সাথে মালিক সমিতির এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।এসময় মালিকদের তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন গত বছরের ন্যায় এবারও দ্রুত ভৈরব থেকে ট্যাংকলরীর মাধ্যমে তেল সরবরাহের ব্যাবস্থা করবেন কিন্ত এখনো এর কোন সমাধান আসেনি।
সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ গত একমাস থেকে সিলেটের তেল সংকটের বিষয়টি বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম কর্পোরেশনকে (বিপিসি) জানালেও এখনো এর কোন সুরাহা করছেন না তারা।ব্যবসায়ীরা বলেন, সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে যে কনডেনসেট পাওয়া যায় তা আগে সিলেটের বিভিন্ন প্লান্টেই জ্বালানি তেলে রুপান্তর করা হতো। সরকারি মালিকানীধীন এই প্লান্টগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এখন চট্টগ্রামের বেসরকারি মালিকানাধীন প্লান্টে কনডেনসট থেকে জ্বালানি তেলে রুপান্তর করা হয়। এতে এখানকার সঙ্কট আরও ঘণিভূত হয়েছে। সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা মনে করেন দেশে তেল সংকট না থাকা সত্বেও কতৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে সরকারের উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত করা ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতেই কৃত্রিমভাবে এই সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় তেল বিপননকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা ওয়েলের সিলেট কার্যালয়ের মার্কেটিং ম্যানেজার আব্দুল বাকী বলেন, রেলের ওয়াগন অনিয়মিত হওয়ায় তেলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তবে নিয়মিত ওয়াগন না আসলে এই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা যাবে না। তিনি এ সংকট সমাধানে সিলেটে নিয়মিত ওয়াগন সরবাহ করা জরুরী।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে জ্বালানি তেল সরবরাহ ওয়াগন নির্ভর হওয়ায় আমাদেরকে প্রায়ই এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। তিনি বলেন, সিলেটের জন্য ভৈরব থেকে তেল সরবরাহ করার সুযোগ দিলে এই সংকট নিরোসন সম্ভব। তাই এই সংকট নিরোসনে ভৈরব থেকে জরুরী ভিক্তিতে তেল সরবরাহের দাবী জানান।