জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সিলেটে ঘুষ-তদবির ছাড়াই পুলিশের চাকরি হয়েছে ১৩১ তরুণ-তরুণীর। মূল্যায়ন হয়েছে মেধা ও যোগ্যতার। পূরণ হয়েছে হতদরিদ্র বাবা-মার স্বপ্ন। খুশিতে কেঁদে ফেললেন অনেকেই। পুলিশ লাইন্স ড্রিলশেডে চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই শেষে ১৩১ জনকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মো.আব্দুল্লাহ আল মামুন।
‘যোগ্যতা যার, চাকুরী তার’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে গত ১১-১৩ ফেব্রুয়ারি টানা ৩ দিন ব্যাপী সিলেট জেলা পুলিশ লাইন্সে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পুরুষ-নারী পদে নিয়োগের জন্য শারীরিকভাবে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা হয়।
এর আগে অনলাইনে আবেদনের প্রেক্ষিতে ৩৯৫৭ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করে ফিজিক্যাল এন্ডোরেন্স টেস্টের জন্য মাঠে আহবান করা হয়।
আবেদনকারীদের মধ্যে ২৫১২ জন চাকুরী প্রত্যাশী মাঠে উপস্থিত থেকে নিজেদের শারিরীক সক্ষমতার পরিচয় দেন। ৩ দিনের শারিরীক সক্ষমতা যাচাই প্রক্রিয়ায় ৮০১ জন প্রার্থীকে শারিরীকভাবে যোগ্য বলে বিবেচিত করা হয়।শারীরিকভাবে যোগ্য প্রার্থীদের গত ১৮ ফেব্রুয়ারি লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মোট ৮০১ জন প্রার্থীর মধ্য থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত ফলাফলে ২৬৬ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়।
একই দিন উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ কমিটি কর্তৃক সাক্ষাতকার গ্রহণ করে শূণ্য পদের বিপরীতে ১৩১ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়।নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে ১১১ জন পুরুষ এবং ২০ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন।
নিয়োগ পাওয়া তরুণ-তরুণীর অধিকাংশই হত দরিদ্র পরিবারের। তাদের কেউ দিনমজুরের সন্তান, আবার কেউবা এতিম। আজ তারা পুলিশ কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
পুলিশ কনস্টেবলে কৃতকার্য হওয়া জগন্নাথপুরে তরুণী শাহিনা আক্তার বলেন,আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। আমার বাবা টমটম চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।ভাই-বোনসহ আমার পড়াশোনার খরচ চালাতে আমার বাবা হিমশিম খায়। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় এবং আইজিপি স্যার ও এসপি স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
পুলিশ কনস্টেবলে কৃতকার্য কানাইঘাটের আরেক তরুণ বলেন,আমার বাবা রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন।আমাদের নিজস্ব কোনো জায়গা-জমি নেই।আমার বাবার পক্ষে আমার লেখাপড়া ও সংসার খরচ একসাথে চালানো খুব কষ্টকর। কোনপ্রকার আর্থিক লেনদেন ছাড়াই পুলিশে চাকরি হওয়ার কথা আমি কখনো কল্পনাতেই আনতে পারি নাই। আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এসপি স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মো.আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আমরা১৩১ জনকে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দিয়েছি।এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, আনসার, এতিম,মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ কোটার ছেলে-মেয়ে এবং এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত অনেকে মেধাবীও রয়েছে। প্রায় সবাই অসচ্ছল পরিবারের সন্তান।
তিনি আরও বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে দালাল ও প্রতারক চক্রকে দমন করার চেষ্টা করেছি এবং সক্ষম হয়েছি। সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ায় আমি ও আমার টিমের সদস্যরা অত্যন্ত গর্বিত ও আনন্দিত।
আরও পড়ুন
সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ
সাইবার আইনের মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে, গ্রেপ্তাররা মুক্তি পাচ্ছেন
সাবেক এমপি সুজনের জামিন না মঞ্জুর, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ