জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
২০১৩ সাল থেকে সিলেটে অটিস্টিকদের (বিশেষ শিশু) জন্য কুমারপাড়া এলাকায় একটি বিদ্যালয় পরিচালিত হয়ে এলেও বিশেষ শিশুদের জন্য যথোপযুক্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় একটি অটিস্টিক আদর্শ বিদ্যালয়ের দাবি ছিল সংশ্লিষ্টদের। এবার এ দাবির ভিত্তিতে সিলেটেই নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম অটিস্টিক (বিশেষ শিশু) মডেল স্কুল। প্রায় দেড় কোটি টাকা বাজেটে এ স্কুলটি তৈরির জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেনের বিশেষ পত্রের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে।
১১ হাজার দুইশত স্কয়ার ফুটের ‘মডেল অটিস্টিক’ স্কুলের চার তলা এ ভবনটির নামকরণ করা হবে সিলেটের প্রয়াত চিত্রশিল্পী অরবিন্দ দাস গুপ্তের নামে। ইতিমধ্যে নতুন এ ভবনের নকশাও সম্পন্ন হয়েছে। সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকায় টিচার্স ট্রেনিং সেন্টারের পাশে নির্মিত হবে এ ভবন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এর বাস্তবায়ন করবে জেলা পরিষদ, সিলেট, যার মাধ্যমে সিলেটের বিশেষ শিশুদের জন্য নতুন এক দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসিব আহামেদ বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ডিওলেটারে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আগামীতে প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী এই বাজেটের ওপর আপাতত দরপত্র আহ্বান করা হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেটসহ সারাদেশে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের আওতায় ৭৪টি স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। যার মধ্যে সিলেটের স্কুলটির ভবনই হবে প্রথম আদর্শ ভবন। নতুন এ ভবনের অত্যাধুনিক নকশা তৈরি করেছেন অপু চক্রবর্তী ও আর কে চৌধুরী আনন্দ। চারতলা এ ভবনের নিচতলায় বিশেষ শিশুদের জন্য থাকবে চারটি থেরাপি সেন্টার। যেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী শিশুদের থেরাপি দেওয়া হবে। ৭০০ স্কয়ার ফুটের একটি আদর্শ অডিটোরিয়াম, আর্ট গ্যালারি, অভিভাবক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, এবং ১০টি শ্রেণিকক্ষ। সকল ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ রূপে বিশেষ শিশুদের ব্যবহার উপযোগী করে নকশা করা হয়েছে ভবনটি।
সিলেটের আর্ট অ্যান্ড অটিস্টিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইসমাইল গণি হিমন বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের যে স্কুল এটি অটিস্টিক শিশুদের জন্য পূর্ণাঙ্গ আদর্শ স্কুল নয়। তাই আমাদের দাবির ভিত্তিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের বিশেষ উদ্যোগে এটি বাস্তবায়ন হবে। এটি সারাদেশের মধ্যে প্রথম মডেল অর্টিস্টিক স্কুল।’
তিনি বলেন, দশম শ্রেণি পর্যন্ত এ স্কুলে বর্তমানে ১১৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর থেরাপি প্রয়োজন হয়। আবার কেউ আর্ট করতে পছন্দ করে, কেউ গান গাইতে পছন্দ করে। সে ক্ষেত্রে তাদের চাহিদা অনুযায়ী তাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলেও ভবনে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সেটি সঠিক বাস্তবায়ন হয় না। তাই এ ভবনটি নির্মিত হলে শিক্ষার্থীরা পূর্ণাঙ্গ সুযোগ-সুবিধা পাবেন। আর্ট অ্যান্ড অর্টিস্টিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইসমাইল গণি হিমন আরও বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১০ শিক্ষক এবং ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে মোট ১৯ জন কর্মরত, যা পর্যাপ্ত নয়। সে ক্ষেত্রে আরও ২২ জন শিক্ষক বাড়ানোর জন্য ইতিমধ্যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, শর্ত অনুযায়ী একজন শিশু যদি কোনো বিষয়ে আগ্রহী হয়, সে ক্ষেত্রে তার ইচ্ছানুযায়ী একজন শিক্ষক দিয়ে তাকে শিক্ষা ব্যবস্থা করতে হয়। শিশুদের দেখাশোনার জন্য অভিভাবকদেরও প্রশিক্ষণ দিতে হয়; কিন্তু সব কিছুতে বর্তমান ভবনে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। তাই নতুন ভবনই হবে এসব শিশুদের জন্য উপযুক্ত স্থান।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি