জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সিলেটের নদ-নদীগুলোর মধ্যে কুশিয়ারা নদীর দুটি পয়েন্টে পানি কিছুটা বেড়েছে। তবে অন্যান্য নদ-নদীর পয়েন্টে পানি কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। আবার কুশিয়ারা নদীর আরেকটি পয়েন্টে পানি স্থিতিশিল রয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ পয়েন্টে পানি গতকাল বেলা তিনটার তুলনায় দশমিক শূন্য ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ১৬ দশমিক ২০ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছে। নদীর শেওলা পয়েন্টে পানি দশমিক শূন্য ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ১৩ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছে। আবার নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি গতকালের তুলনায় কিছুটা কমলেও পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর শেরপুর পয়েন্টে পানি ৭ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে লুভা নদীর লুভাছড়া পয়েন্টে পানি গতকাল বেলা তিনটার তুলনায় দশমিক শূন্য ৩ সেন্টিমিটার কমে ১৩ দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারী নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানি গতকাল দুপুরের তুলনায় দশমিক ৩৬ সেন্টিমিটার কমে ১০ দশমিক ৩৯ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদের ইসলামপুর পয়েন্টেও পানি কিছুটা কমে আজ ৯ দশমিক ৬৭ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সিলেট থেকে পানি সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওর হয়ে নামে। তবে সুনামগঞ্জে পানি বেশি থাকায় ধীরগতিতে নামছে।
এদিকে আজ সকাল থেকে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সুরমা নদীর পানি উপচে খাল ও ছড়া হয়ে যেসব এলাকায় আগে প্রবেশ করেছিল, সেই এলাকাগুলো থেকে পানি নেমে গেছে। বাসাবাড়ি থেকেও পানি নেমে গেছে। তবে কয়েকটি মহল্লার সড়কে এখনো পানি রয়েছে। নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার ডি ব্লকের ভেতরেও পানি জমে আছে। এ ছাড়া উপশহরের সি ও এ ব্লকে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। নগরের তেররতন এলাকায় পানি নেমে গেলেও অনেকের বাসাবাড়ি স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর সড়ক, লাউয়াই সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চ-ীপুল সড়কের আগপর্যন্ত জলাবদ্ধ অবস্থায় আছে। বঙ্গবীর সড়কে কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমরসমান পানি। এ সড়কের দুই পাশের প্রায় ১৫০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এ ছাড়া ধরাধরপুর, মোমিনখলা, রায়েরগাঁও, লাউয়াইন, কামুসনা, আলমপুর ও তেতলী এলাকার ঘরবাড়ি এবং সড়কে হাঁটুসমান পানি রয়েছে। চ-ীপুল এলাকার দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণেও পানি দেখা গেছে। বঙ্গবীর সড়কের জ্বালানি তেলের পাম্প এবং চ-ীপুল মোড়ে জ্বালানি তেলের আরেকটি পাম্প পানিতে তলিয়ে থাকায় জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ আছে।
বঙ্গবীর রোডের মিতালি অটোমোবাইল নামের একটি দোকানে যানবাহনের সরঞ্জাম বিক্রি করেন সামসুল ইসলাম (৪৭)। তিনি বলেন, ‘২৫ বছর ধরে ব্যবসা করছি। কিন্তু এমন অবস্থা কখনোই হয়নি। চলতি মাসের ১৫ তারিখে সন্ধ্যায় হঠাৎই সড়কে পানি উঠে দোকানে প্রবেশ করে। সে সময় মেঝেতে থাকা মালামাল তুলে কিছুটা ওপরে রাখা হয়েছিল। পরদিন পানি বেড়ে হাঁটুসমান হয়ে যায়। সে সময় তেমন পাত্তা দিইনি। এর পরদিনই পানি বেড়ে বুকসমান হয়ে যায়। এতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে থাকা প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল ভেসে গেছে। এখন পথে বসার উপক্রম।’
ধরাধরপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুর রউফ (৩৬) বলেন, এলাকায় অনেকেই অপরিকল্পিতভাবে বাসাবাড়ি বানিয়েছেন। এতে পানি নামার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে এবার পানি নামতে পারছে না। এর আগে বৃষ্টির সময় কিছুটা পানি জমলেও দ্রুতই সেগুলো নেমে যেত। তবে এবার ১৫ দিন হয়ে গেলেও পানি নামছে না। গতকাল মঙ্গলবার বৃষ্টি হওয়ায় পানি আরও বেড়েছে।
মোমিনখলা এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, এলাকাগুলোতে সুরমা নদীর পানি উপচে প্রবেশ করেছিল। পানিগুলো সাধারণত জৈন্তারখাল হয়ে কুশিয়ারা নদীতে নামে। কুশিয়ারা নদীর পানি না কমায় এলাকার পানি নামছে না। অন্যদিকে মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে পানি আরও বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, এলাকার জৈন্তার খাল, ছড়া ও বক্স কালভার্টে ময়লা-আবর্জনা জমে পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এসব ময়লা-আবর্জনা স্থানীয় ব্যক্তিরাই বিভিন্নভাবে এসব খালে ফেলেছিলেন। এতে পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশন ছড়া, খালের ময়লা-আবর্জনা পরিচ্ছন্ন করছে। যেদিকে খবর পাওয়া যাচ্ছে, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা দল সেদিকে গিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। দক্ষিণ সুরমার ওই এলাকাগুলোতেও পরিচ্ছন্ন করা হবে।
ছড়া খালের বিষয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণ সুরমার কিছু এলাকা সিটি করপোরেশনে নতুন করে অধিভুক্ত হয়েছে। সেসব এলাকা ঘরবাড়িগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে কি না, তদারকি করা হবে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সিলেটের নদ-নদীর পানি সুনামগঞ্জ দিয়ে নামে। সুনামগঞ্জে পানি বেশি থাকায় পানি নামতে সময় লাগছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের গতকালের হিসাব অনুযায়ী, ৪১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে বর্তমানে ৩৫ হাজার ৬৮৫ জন অবস্থান করছে। বন্যাকবলিত হয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনসহ ১৩টি উপজেলার ১০৫টি ইউনিয়ন ও পাঁচটি পৌরসভার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়েছিল। জেলার ৬৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৫২ হাজার ৭৮৪ জন আশ্রয় নিয়েছিল। জেলায় সিলেট সিটি করপোরেশন ছাড়া উপজেলা ও পৌরসভা এলাকার ৪০ হাজার ৯১টি ঘরবাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি