April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, June 29th, 2022, 8:53 pm

সিলেটে বন্যায় ঘরবন্দী সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষার্থী

ফাইল ছবি

সিলেট বিভাগে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের এক হাজার ৫২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ) ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৪৭৫ জন শিক্ষার্থী বন্যার কবলে পড়েছে। এছাড়া বন্যার পানিতে বই-খাতা নষ্ট হওয়ায় বিপাকে রয়েছে অনেক শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, বন্যাকবলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) ও শিক্ষার্থী সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। তবে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়-ক্ষতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন এখনও পাওয়া যায়নি। খুব শিগগিরই পাওয়া যাবে।

সিলেট বিভাগের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতির পর গত ২২ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ই-ভ্যালুয়েশন উইং থেকে সব আঞ্চলিক পরিচালক ও উপপরিচালকদের কাছে তথ্য চাওয়া হয়। সম্প্রতি আঞ্চলিক অফিসগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলেট বিভাগের বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে পাঠদান সম্ভব। আংশিকভাবে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব প্রায় একশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আর ৫ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও পাঠদান সম্ভব নয়। বন্যাকবলিত এলাকার প্রায় সাড়ে ৪০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

জেলাভিত্তিক তথ্যে জানানো হয়, সিলেট জেলার ১৩ উপজেলার ৩৪২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই লাখ আট হাজার ১৯৩। বন্যাকবলিত এলাকার ৫৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে পাঠদান কার্যক্রম সম্ভব। আংশিকভাবে ৫০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান সম্ভব। আর ২৮৮টি প্রতিষ্ঠানে পাঠদান এখনও কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব নয়। ১৯১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলার ২৬৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৭৪ হাজার ২৬২ জন। বন্যাকবলিত ২৬৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনওটিতেই এখনও পাঠদান সম্ভব নয়। ১৫০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

মৌলভীবাজারে পাঁচ উপজেলার ৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত। প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৮ হাজার ৩৫৯। এখানকার ৪০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনওটিতেই এখনও পাঠদান সম্ভব নয়। এছাড়া ২৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে।

হবিগঞ্জ জেলার ছয় উপজেলার ৩৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৪ হাজার ৬৬১ জন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। জেলার ৭৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে।

এদিকে সিলেট অঞ্চলে বন্যার কারণে বহু শিক্ষার্থীর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বই-খাতা পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের বিকল্প বই দেবে প্রশাসনের সে সুযোগও নেই। কারণ তাদের গুদামেও পর্যাপ্ত বই নেই। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন স্বল্প আয়ের পরিবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষা আপাতত স্থগিত হলেও তারিখ দিলে পড়ার মতো বই কোথায় পাবে, তা নিয়ে সবাই চিন্তিত।

রায়েরগাঁও এলাকার বাসিন্দা শিহাব আহমদ রাজারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। গত ১৭ জুন পানি ঢুকে পড়ে শিহাবদের ঘরে। তারও সব বই-খাতা বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে কোনো রকমে দিন কাটছে শিহাবদের। তার কৃষক বাবা আব্দুল করিমের আয়ের উপায় এখন বন্ধ। পানি নেমে গেলে ঘর ঠিকঠাক করার পাশাপাশি চাষের জন্য টাকা জোগাড় করাই এখন ভীষণ চ্যালেঞ্জ তার জন্য। বাড়তি চাপ হয়ে দেখা দিয়েছে ছেলের বই-খাতা।

সিলেটে গত ১৫ জুন থেকে বন্যা শুরু হয়। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় প্লাবিত হয় জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা। ২১ লাখেরও অধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ২৯ হাজার ঘরবাড়ি। পানি কমতে শুরু করলেও এখনও প্লাবিত রয়েছে জেলার বেশির ভাগ এলাকা।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক আব্দুল মান্নান খান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার জন্য আমরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। এ ছাড়া যে যে এলাকা উদ্বৃত্ত বই রয়েছে তা সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়ার ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’

তিনি বলেন, ‘এবার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জ তো পুরাটাই ক্ষতিগ্রস্ত। সিলেটেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে উদ্বৃত্ত বইয়ে হবে না। আবার নতুন করে এখন বই ছাপানোও কঠিন। তাই ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের আমরা অনুরোধ করব, সম্ভব হলে তারা যেন সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ম্যানেজ করে নেয়ার চেষ্টা করে।’

শিক্ষা অফিসের গুদামে থাকা বইও পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে জানিয়ে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতুল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘মজুত থাকা বইয়েরও ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ক্ষতি পোষাতে ঢাকা থেকে বই পাঠাতে হবে।’

স্কুল খোলার আগে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঈদের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে। তখন ক্ষতির পরিমাণ জেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পাঠানো হবে।’

শিক্ষার্থীদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা এখনও পাওয়া যায়নি জানিয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অভিজিৎ কুমার পাল বলেন, ‘স্কুল খোলার আগে এ ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে না।’

জেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশাদ বলেন, ‘আমরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তালিকা করছি। স্কুল ভবনের কেমন ক্ষতি হয়েছে, শিক্ষার্থীদের বই-খাতা কী পরিমাণ নষ্ট হয়েছে, সেগুলোর তালিকা করছি। কিন্তু অনেক জায়গা থেকে এখনও পানি নামেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।’

—ইউএনবি