জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল (বিএনপি)-এর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করেছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
স্বাধীনতাযুদ্ধ কোনো একজন ব্যক্তি বা দল করেনি। এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। কিন্তু শহিদ জিয়াউর রহমান ও আতাউল গনি ওসমানীসহ অনেক বীরদের অবদান স্বীকার করে না আওয়ামী লীগ। ১৬ ডিসেম্বর জাতীয়ভাবে যে সুবর্ণজয়ন্তী উদযান করা হয়েছে সেখানে শেখ মুজিব ছাড়া আর কারো নাম নেওয়া হয়নি। ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিলেট শত্রুমুক্ত করতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। কিন্তু জোর করে ক্ষমতায় থাকা এ সরকার প্রকৃত ইতিহাস মুছে দিয়ে একটি ভ্রান্ত গল্প নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চায়।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরেও আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য বাসযোগ্য একটি ভূমি রেখে যেতে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের স্বপ্ন ছিলো একটি গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার। কিন্তু সেই স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। এ দেশে দারিদ্র্য মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। গুটিকয়েক মানুষ সরকারের ছত্রছায়ায় কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। দেশে আজ গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়েছে। যার প্রমাণস্বরূপ- জনগণের ভোটে বার বার নির্বাচিত একজন প্রধানমন্ত্রীকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসিয়ে কারাবাস করিয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন মুমূর্ষু অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশেও যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীন ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। প্রয়োজনে একাত্তর সালে যেভাবে দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে ঐক্যবব্ধ হয়ে পাক হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশবাসী, ঠিক সেইভাই যুদ্ধ করে বর্তমান অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি- সেই দিন আর বেশি দূরে নয়।
বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সিলেট বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে ১৫ ডিসেম্বর সিলেট মুক্ত দিবস উপলক্ষে ১৮ ডিসেম্বর শনিবার বিকালে নগরীর রেজিস্ট্রারী মাঠে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিলেট শহরসহ দেশের বৃহত্তর এই উত্তর-পূর্বাঞ্চল পাকিস্তানি শত্রুমুক্ত হয়। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে সিলেটে শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) নানা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।
সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে বেলা ২টা থেকে শুরু হয় অনুষ্ঠানের কার্যক্রম। জাতীয়, দলীয়, দেশাত্মবোধক ও গণসংগীত পরিবেশনের পর বিকাল ৩টা থেকে শুরু হয় অতিথিদের আলোচনা।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সিলেট বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও সিলেট সিটি করপোরেরশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সিলেট বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির সদস্যসচিব ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এবং সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম।
এর আগে সমাবেশে যোগ দিতে শনিবার দুপুরে বিমানে করে সিলেটে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষ নেতারা।
এদিকে, সংগীতানুষ্ঠানের পরে ও অতিথিদের বক্তব্যের আগে বিএনপির সমাবেশে দুপক্ষের মধ্যে চেয়ার ছুড়াছুড়ি এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শনিবার বেলা ২টা ৪০ মিনিটের দিকে বিভিন্ন নেতার পক্ষে স্লোগানকে কেন্দ্র করে তাদের সমর্থকদের মধ্যে এ উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
এসময় সমাবেশস্থলের সামন থেকে এক পক্ষ অন্যপক্ষকে চেয়ার নিয়ে ধাওয়া করলে উত্তেজনা তালতলা ভিআইপি রোড পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এসময় সুরমা মার্কেট ও তালতলা এলাকার ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দোকানপাট লাগিয়ে দেন। অপরপক্ষও চেয়ার নিয়ে প্রথম ধাওয়াকারীদের দিকে পাল্টা ধাওয়া করে। পরে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আধাঘণ্টার প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে অতিথিরা বক্তব্য শুরু করেন।
পরে সন্ধ্যা ৫টায় অনুষ্ঠানের সভাপতি সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাবেশ সমাপ্ত করা হয়।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি