March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, May 16th, 2023, 8:23 pm

সিলেটে ম্যাকেঞ্জির দাপট, চন্দরপলের দৃঢ়তা

অনলাইন ডেস্ক :

সতেজ ঘাসের ছোঁয়ায় সবুজাভ উইকেট। পেসারদের জিভে জল চলে আসার কথা উইকেট দেখে। তবে উইকেটের চেহারা ও আচরণ মেনেই হোক, বোলিং তো প্রাণবন্ত হতে হবে! সেখানেই ব্যর্থ বাংলাদেশের পেসাররা। ওই সবুজ ২২ গজেই তাই ক্যারিবিয়ানরা গড়ে ফেলল বড় স্কোরের ভিত। স্ট্রোকসমৃদ্ধ ইনিংস খেলে কার্ক ম্যাকেঞ্জি আউট হলেন সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে। সহজাত ব্যাটিংয়ে এখন শতরানে চোখ রাখছেন তেজনারাইন চন্দরপল। সিলেটে প্রথম আনঅফিসিয়াল টেস্টের বৃষ্টিবিঘিœত প্রথম দিনে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের রান ২ উইকেটে ২২০। বৃষ্টির কারণে ৬৮ ওভার পর বন্ধ হয় খেলা। এ দিন আর শুরু হতে পারেনি। ১১ চার ও ১ ছক্কায় ১২৪ বলে ৮৬ রান করে আউট হন ম্যাকেঞ্জি। ধৈর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে থাকা সহজাত ব্যাটিংয়ে চন্দরপল অপরাজিত ১৯০ বলে ৭০ রান করে।

বাংলাদেশের তিন পেসারের মধ্যে কেবল মুশফিক হাসান আঁটসাঁট বোলিং করতে পারেন। ব্যাটসম্যানদের কয়েকটি অস্বস্তিকর মুহূর্ত উপহার দেওয়া ছাড়া যদিও খুব বিপজ্জনক ছিলেন না তিনিও। আরেক পেসার রিপন মন্ডলও তেমন কিছু করতে পারেননি। সবচেয়ে হতাশ করেন রেজাউর রহমান রাজা। গত দেড় বছর ধরে টেস্ট দলের সঙ্গে থাকা এই পেসারের বোলিং ছিল বেশ এলোমেলো। খরুচে বোলিংয়ে ১১ ওভারে ৬০ রান দেন তিনি। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন প্রথম স্পেলে ২ ওভারে ১২ রান দেওয়ার পর তার ওপর আর ভরসা রাখতে পারেননি অধিনায়ক আফিফ হোসেন। শেষ সেশনে আবার ২ ওভারে ১২ রান দেওয়ার পর আর বোলিং দেওয়া হয়নি তাকে। প্রথম দিনের উইকেটে অবশ্য স্পিনারদের জন্য সহায়তা বলতে গেলে ছিলই না।

টেস্ট দল থেকে বাদ পড়া অফ স্পিনার নাঈম হাসানও খুব সুবিধে করতে পারেনি। একটা প্রান্ত থেকে অবশ্য কিছুটা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন তিনি। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার টস জিতে ব্যাটিং নেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক জশুয়া দা সিলভা। উইকেটের যা চেহারা ছিল, তাতে খুব একটা অখুশি হওয়ার কথা ছিল না বাংলাদেশের। তবে নতুন বলে মুশফিক ও রিপন যথেষ্ট পরীক্ষা নিতে পারেননি ক্যারিবিয়ানদের দুই বাঁহাতি ওপেনারের। ম্যাকেঞ্জি ও চন্দরপল অনায়াসেই শুরুর সময়টা কাটিয়ে দেন। শুরুর দিকে যদিও রান খুব বেশি ওঠেনি, তবে সেই তাড়াও ছিল না দুই ব্যাটসম্যানের। ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে দিয়ে এরপর আস্তে আস্তে রানের গতি বাড়াতে থাকেন দুজন। বিশেষ করে ম্যাকেঞ্জি খোলস ছেড়ে বের হয়ে খেলতে থাকেন দারুণ কিছু শট।

ম্যাকেঞ্জির রান একপর্যায়ে ২৮ বলে ১০ রান থাকলেও পরে তিনি বলপ্রতি রান করে ৬ বাউন্ডারিতে ফিফটি স্পর্শ করেন ৬৮ বলে। মাত্র ৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচের অভিজ্ঞতায় ২২ বছর বয়সী এই ওপেনারকে দলে নেওয়ার সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান নির্বাচক ও কিংবদন্তি ওপেনার ডেসমন্ড হেইন্স তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। সবশেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচটিতেই ৫০২ মিনিটে ২২১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি সপ্তাহ তিনেক আগে। জ্যামাইকান ব্যাটসম্যান তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখলেন সিলেটেও। বিনা উইকেটে ৭৪ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় ক্যারিবিয়ানরা। লাঞ্চের পরও চলতে থাকে ম্যাকেঞ্জির দাপুটে ব্যাটিং। তিন পেসারের পর নাঈম-রিশাদের স্পিনে ব্যর্থ হয়ে অধিনায়ক আফিফ নিজে বল হাতে নেন। তাতেও লাভ হয়নি।

শেষ পর্যন্ত সপ্তম বোলার হিসেবে আক্রমণে এসে প্রথম ওভারেই জুটি ভাঙেন সাইফ হাসান। সাইফের ওই ওভারে লফটেড অন ড্রাইভে দারুণ একটি ছক্কা মারেন ম্যাকেঞ্জি। এক বল পর আবার লং অফের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে টাইমিং ঠিকঠাক করতে পারেননি। ক্যাচ নেন নাঈম হাসান। উদ্বোধনী জুটি থামে ১৩০ রানে। তিনে নেমে রেমন রিফার শুরুটা করেন দারুণ। উইকেটে যাওয়ার পরপরই তিনটি চার মারেন তিনি রাজাকে। প্রথমটি গ্লাইড করে, পরেরটি কাভার ড্রাইভ ও শেষটি অন ড্রাইভে। তবে ৭ টেস্ট খেলা অলরাউন্ডার পারেননি ইনিংস বড় করতে। নতুন স্পেলে ফেরা মুশফিকের বলে খোঁচা মেরে ২৬ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন এই বাঁহাতি। চন্দরপলের মনোযোগে অবশ্য চিড় ধরেনি। নিজের চেনা ঢংয়ের ব্যাটিংয়ে এক প্রান্ত আগলে রাখেন তিনি। রিপনের বলে অফ ড্রাইভে চার মেরে তার ফিফটি আসে ১৫৬ বলে।

সেটি ছিল কেবল তার চতুর্থ চার। চারে নেমে আরেক বাঁহাতি আলিক আথানেজ সাবলীল ব্যাটিংয়ে কিছু বাউন্ডারি আদায় করে নেন দ্রুতই। চন্দরপলের সঙ্গে তার জুটিও জমে ওঠে। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার পর এই জুটির রান ছিল ৬০। কিংবদন্তি শিবনারাইন চন্দরপলের ছেলে তেজনারাইন এর মধ্যেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ৬ টেস্ট খেলে একটি ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়ে গেছেন। দ্বিতীয় দিন শুরু করবেন তিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অষ্টম শতরানের আশায়। ৬ চারে ৫২ বলে ৩৫ রান নিয়ে অপরাজিত আথানেজ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ প্রথম ইনিংস: ৬৮ ওভারে ২২০/২ (ম্যাকেঞ্জি ৮৬, চন্দরপল ৭০*, রিফার ২৬, আথানেজ ৩৫*; মুশফিক ১১-৩-১৫-১, রিপন ১৪-৫-৩৯-০, রাজা ১১-১-৬০-০, নাঈম ১৮-৫-৫৪-০, রিশাদ ৪-০-২৪-০, আফিফ ৪-০-১৪-০, সাইফ ৬-১-১৪-১)