রোদ ও ভ্যাপসা গরমের মধ্যে সিলেটে লোডশেডিংয়ে ক্ষুব্ধ উঠেছে নগরীর বাসিন্দারা।
একদিকে তীব্র গরম অন্যদিক রমজান মাস। বিদ্যুৎ চলে গেলে সারা রাত নির্ঘুম কাটাতে হচ্ছে হচ্ছে বলে জানান নগরবাসী।
লোডশেডিংয়ের কারণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। আর লোডশেডিংয়ের কারণে সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহও বিঘ্নিত হচ্ছে।
আর কয়দিন পর ঈদ। ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরাও নিজদের মার্কেট, শপিংমল ও দোকানপাটে করেছেন আলোকসজ্জা। কিন্তু দিন ও রাতের বেশিরভাগ সময় লোডশেডিংয়ের কারণে জেনারেটর দিয়ে চলছে তাদের ব্যবসা। এমন অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে। এমনকি সেহরি ও ইফতারের সময়ও বিদ্যুৎ থাকে না। মোমবাতি, মোবাইল চার্জার জ্বালিয়ে ইফতার ও সেহেরি করতে হচ্ছে।
গোলাপগঞ্জের বাসিন্দা মো. জাকির বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা সব থেকে বেশি ভুক্তভোগী। সামনে আসছে গরমের দিন, তাই লোডশেডিংও আরও বাড়বে। দেশের অন্যান্য জায়গা থেকে সিলেটে কলকারখানা তুলনামূলক অনেক কম তবুও আমরা বিদ্যুতের ভেলকিবাজি থেকে মুক্তি পাচ্ছি না।
সিলেট নগরীর লালা দিঘীরপাড়ের গৃহবধূ আইরিন সুলতানা নিপা বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠার আগেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এরমধ্যে গরমে ভোগান্তি। এই কয়দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কারণে বাসায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ইফতার ও সেহরির আগে বিদ্যুৎ চলে যায়। এমন সময়ও যে বিদ্যুৎ চলে যাবে তা ভাবতেই অনেক খারাপ লাগে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, ঝড়ের পর সরবরাহে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। সেটি মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার পর লোডশেডিং মেনে নেওয়া যায় না। এক বছর পর পর ব্যবসায়ীরা একটি ঈদ পান। আর এতে লোডশেডিং হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা দুর্ভোগের পাশাপাশি লোকসানেও পড়ছেন। এই অবস্থায় ক্রেতা ও বিক্রেতারাও স্বস্তিতে নেই।
জানা যায়, সিলেট অঞ্চলে বর্তমানে চাহিদা রয়েছে ১৪০-১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সেখানে ঘাটতি রয়েছে ৪০-৬০ মেগাওয়াট। জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ কম পাওয়ার কারণে এত বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। এছাড়াও অর্থনৈতিক মন্দভাবের কারণে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন কম হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহে গত তিন দিনের মধ্যে মঙ্গলবার (২ মার্চ) বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪১ মেগাওয়াট। আর সরবরাহ করা হয়েছে ৫৬ মেগাওয়াট।
পরদিন বুধবার (৩ মার্চ) চাহিদার পরিমাণ ছিল ১২০ থেকে ১৩০ মেগাওয়াট। সেখানে পাওয়া যায় মাত্র ৬৬ মেগাওয়াট।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সিলেটে বিকাল পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩৫ মেগাওয়াট। তার বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৬৯ মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল ৬৬ মেগাওয়াট।
এ ব্যাপারে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. জারজিসুর রহমান রনি বলেন, চাহিদার তুলনায় প্রতিদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ কম হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হয়। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত আমাদের চাহিদা ছিল ১৩৫ মেগাওয়াট। তার বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৬৯ মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল ৬৬ মেগাওয়াট। আমরা যতটুকু বিদ্যুৎ পাচ্ছি তা সব বিতরণ বিভাগকে সমানভাবে ভাগ করে দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লাইন বা অন্য কোনো সমস্যা নেই। ডলার ও কয়লা সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি