জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সিলেটে দিন দিন বাড়ছে সূর্যমূখী ফুলের চাষ । গত কয়েক বছরে সুর্যমূখী ফুল চাষে সাফল্য পেয়েছেন এ জেলার চাষিরা। এখন ফুলে ফুলে ভরে গেছে ফসলের মাঠ। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
সিলেট জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার গোয়াইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ৫৫০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলায় এবছর বেশি হয়েছে সূর্য মূখী ফুলের চাষ । খরচ কম অধিক লাভের আশায় এ উপজেলার কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে । গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম আলীর গাঁও , তোয়াকুল , নন্দির গাঁও, পশ্চিম জাফলং, রুস্তম পুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে সূর্য মূখী ফুলের চাষ কৃষকদের মাঝে আশার আলো দেখাচ্ছে ।
কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে কৃষককে বীজ বিতরণ করা হয়েছে। প্রতি গাছে একটি করে ফুল আসে। বীজ বপনের পর ফসল সংগ্রহ করতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে।
সূর্যমূখী চাষে হেক্টর প্রতি ১.৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য রান্নার তেলের চেয়ে ভালো এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ উপকারী। সূর্যমুখী চাষ করে শুরু থেকেই সফলতার মুখ দেখছেন এ জেলার কৃষকরা। যদি কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে সূর্যমুখী চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করতে পারবেন। ফলে একদিকে উপকৃত হবেন কৃষক অপর দিকে মিটবে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার ইউপির বিবিদইল গ্রামের কৃষক ডিএইচ খান বলেন, আমি সারাবছর ধান, গম, ও সবজির চাষ করি। গত দুই বছর যাবত সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছি। এবারও ১ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ শুরু করেছি। আমার সূর্যমুখী ক্ষেত ফুলে ফুলে ভরে গেছে। জমিতে এক একটি ফুল যেন হাসিমুখে সূর্যের আলো ছড়াচ্ছে। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে গত বছরের চেয়ে এবারও লাভের আশা করছি।
গোয়াইঘাট উপজেলার তোয়াকুল ইউনিয়নের পাইকরাজ গ্রামের মেম্বার কৃষক বিলাল উদ্দিন জানান অন্যান্য ফসলের তুলনায় সূর্য মূখী ফুলের চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে । আবহাওয়া অনুকূলে হলে এক বিঘা জমি থেকে ৮ থেকে ১০ মন বীজ পাওয়া যাবে , প্রতি মন বীজ থেকে ১৭ কেজি তেল পাওয়া যাবে ।
গোয়াইঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রায়হান পারভেজ রনি বলেন সূর্য মূখী ফুলের তেল কোলেস্টেরল মুক্ত পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ একটি স্বাস্হ্য সম্মত তেল । সোয়াবিন থেকে সূর্য মূখী তেলে ১০ গুণ বেশি পুষ্টি । গোয়াইনঘাট উপজেলায় অনেক পতিত কৃষি জমি অনাবাদি পড়ে আছে সে জমি গুলো কৃষি কাজের আওতায় আনার জন্য গোয়াইনঘাট উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে এরই ধারাবাহিকতায় সূর্য মূখী চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে ও সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে ।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নিবার্হী অফিসার তাহমিলুর বলেন সরকার বিনামূল্যে কৃষকদের সার বীজ বিভিন্ন ভর্তুকী ও প্রণোদনা দিচ্ছে। আমরা কৃষকদের দোরগোড়ায় সেবা প্রদান করে যাচ্ছি ।
গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ বলেন, পাথর কোয়ারী বন্ধ থাকায় গোয়াইনঘাটের শ্রমজীবী মানুষ দিশেহারা । গোয়াইনঘাট উপজেলার হাজার হাজার বিঘা অনাবাদি জমি কৃষি চাষের আওতায় আনা হলে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে ।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী মুজিবুর রহমান জানান, সিলেট জেলার জমি সূর্যমুখী চাষের জন্য উপযোগী, এবছর জেলায় ৫৫০ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখী চাষ করা হয়েছে। বর্তমানে জেলায় সূর্যমুখী চাষের যে অবস্থা তাতে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি