November 22, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, September 3rd, 2024, 3:34 pm

সিলেটে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও কার্যক্রম চালু নিয়ে শঙ্কা

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :

সিলেটে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে । তবে কাজ শেষ হলেও এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব কে নিবে সে সিদ্ধান্ত এখন হয়নি। তাই হাসপাতাল দৃশ্যমান হলেও কবে থেকে সেবা শুরু করা সম্ভব হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। জনবল নিয়োগ, হাসপাতালের সরঞ্জাম কোথায় থেকে আসবে, কেই দেখাশুনা করবে এই হাসপাতালটি তাও নিশ্চিত নয় এখনো। এদিকে এলিভেটরের কাজ সম্পন্ন হলেই প্রকল্পের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ।

জানা যায়, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকার পাশে ৬ দশমিক ৯৮ একর জায়গার ওপর ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেসময় শহীদ শামছুদ্দিন হাসপাতালের পাশে আগের আবুসিনা ছাত্রাবাসের স্থানে সিলেট জেলা হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক দাবি করে ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উল্লেখ করে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা।ফলে কাজ শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব হয়। বিলম্ব হলেও বন্ধ হয়নি নির্মাণ কাজ ।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এদিকে সব কিছুর পরও নির্মাণকাজ শেষ হলেও হাসপাতালের কার্যক্রম কবে শুরু হবে সে নিশ্চয়তা এখনো পাওয়া যায়নি। এতে ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। অনেকে বলছেন এটি নির্মাণ করা আর জলে পানি ঢালা একই কথা হলো। যেহেতু নির্মাণ হয়ে গেছে সেহেতু অতি দ্রুত সেখানে কার্যক্রম শুরু করা যায় সেভাবেই কাজ করতে হবে।

জেলা গণপূর্ত কার্যালয় জানায়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে হাসপাতাল নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পদ্মা অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া ১৫ তলা হাসপাতালের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে। হাসপাতাল ভবনের বেজমেন্টে রয়েছে কারপার্কিং, প্রথম তলায় টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম, দ্বিতীয় তলায় আউটডোর, রিপোর্ট ডেলিভারি ও কনসালট্যান্ট চেম্বার, তৃতীয় তলায় ডায়াগনস্টিক, চতুর্থ তলায় কার্ডিয়াক ও জেনারেল ওটি, আইসিসিইউ, সিসিইউ, পঞ্চম তলায় গাইনি বিভাগ, অপথালমোলজি, অর্থপেডিক্স ও ইএনটি বিভাগ এবং ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলায় ওয়ার্ড ও কেবিন। এর মধ্যে আইসিইউ বেড ১৯টি, সিসিইউ বেড ৯টি এবং ৪০টি কেবিন রয়েছে।

এ বিষয়ে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম বলেন, শতবর্ষ প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী আবুসিনা ছাত্রাবাস ভবন ধ্বংস করে এই হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। জনমতকে উপেক্ষা করে নগরের কেন্দ্রস্থলে এই হাসপাতাল নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল একটি দৃশ্যমান সুউচ্চ ভবন নির্মাণ। এখানে জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল না। জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া মুখ্য হলে অন্যান্য হাসপাতাল আধুনিকায়ন করা ও চিহ্নিত সমস্যা সমাধান করাকে গুরুত্ব দেয়া হতো। তা করা হয়নি।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে এম আব্দুল মোমেন-এর খাম-খেয়ালি ও খাস লোকদের লুটপাটের সুযোগ দিতেই এই সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি অবিলম্বে এই হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য সেবা শুরু করা এবং ভবন নির্মাণের নামে ঐতিহ্য ধ্বংসে যারা প্রত্যক্ষভাবে দায়ী তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা।

জেলা গণপূর্ত কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাফর বলেন, হাসপাতালের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। শুধু এলিভেটরের বাকি ছিল, সেটির কাজও চলমান রয়েছে। এই মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবন হস্তান্তর করে দিবে। আমরাও সংশ্লিষ্টদের বরাবরে ভবনের দায়িত্ব দিতে চাই। তবে আমরা তাদের সাথে কয়েকবার যোগাযোগ করলেও কে দায়িত্ব নিবে সেটি আমাদের জানানো হয়নি।
যেহেতু নতুন সরকার এসেছে, আশা করি এটির একটু সমাধান হবে। আমরা মন্ত্রণলায়ের সাথে যোগাযোগ করব। যেহেতু কাজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে হয়েছে সেহেতু এর দায়িত্ব তাদের মধ্যে কারও নেওয়ার কথা।

কাজ শুরু থেকে সমন্বয়ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পের শুরু থেকে নকশা, টেন্ডারের সকল কাগজপত্র স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটকে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্নসময় তারাও এসে ভবনের কাজ পরিদর্শন করে গিয়েছেন। সুতরাং সমন্বয় করা হয়নি এটা ঠিক নয়।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আমি সিলেটের বৃহৎ হাসপাতালের দায়িত্বে রয়েছি। এর বাহিরে আমি আরেকটি হাসপাতালের দায়িত্ব কীভাবে নিব। এই নির্মাণাধীন হাসপাতালটি স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে যে কাউকে দায়িত্ব দিলে ভালো হবে। এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠিও দিয়েছি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. আনিসুর রহমান বলেন, এই হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরু সময় স্থাপনার নকশা, সেবা প্রদানের জন্য যেসব সুবিধা-অসুবিধা কথা বিবেচনা করে প্রতিটি কক্ষের সুবিন্যাসকরণ কাগজপত্র সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পরিচালক অথবা ওসমানী হাসপাতালের পরিচালকের কাছে দাখিল করা হয়নি। বিষয়টি তখন আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। পরে মন্ত্রণালয় থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। এরপর তৎকালীন সিলেট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক নির্মাণাধীন হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
তিনি বলেন, গণপূর্ত বলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে এটি করা হয়েছে, আমরা বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানালে তাদের কাছে নকশাসহ কর্ম-পরিকল্পনার কাগজপত্র চাওয়া হয়। এরপর তারা আর আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। আমরা নিজে থেকে সেগুলো সংগ্রহ করে করে সব কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখানে কাজের শুরু থেকেই একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। এ বিষয়টিও আমরা মন্ত্রণালয়কে অবগত করেছি। কিন্তু আমরা এখন কোন নির্দেশনা পাইনি।

ডা. মো. আনিসুর বলেন, তাদের কাজ শেষ এরকম তথ্য আমরা পেয়েছি। এখন এর দায়িত্ব মন্ত্রণালয় থেকে যাকে দেয়া হবে সেই দায়িত্ব গ্রহণ করবে। যদি আমাদের কাউকে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয় তাহলে আমরা সেভাবেই কাজ করব। তবে এখানে অনেক ম্যান পাওয়ারের প্রয়োজন রয়েছে। এ ব্যাপারেও আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। তাছাড়া নিরাপত্তার জন্য হলেও ম্যানপাওয়ারের প্রয়োজন রয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় সিলেটেরও এতো ম্যান পাওয়ার নেই তারা এটি দেখভাল করবে। আমরা চাচ্ছিলাম আগে থেকেই একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দিয়ে তদারকি করার জন্য যেহেতু সেটি হয়নি তাই মন্ত্রণালয় বা মহাপরিচালক মহোদয় যে নির্দেশনা প্রদান করবেন সেভাবে হাসপাতালের দায়িত্ব দেওয়া হবে।