March 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, May 15th, 2022, 8:46 pm

সিলেট অকাল বন্যায় প্লাবিত ফুলে-ফেঁপে ওঠছে সুরমা-কুশিয়ারা

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সিলেটের নদ-নদীর পানিই বর্তমানে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ছে সব নদীতেই।পানির চাপে ফুলে-ফেঁপে ওঠছে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী।বিভিন্ন স্থানে এ দু’টি নদীর তীরবর্তী সড়ক (ডাইক) ভেঙে বানের পানিতে লোকালয়ও তলিয়ে যাচ্ছে।সেই সঙ্গে বিস্তৃত হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। ফলে প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
ইতোমধ্যে সাতটি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।ডুবছে রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার।পানি বৃদ্ধির কারণে গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটের সাথে সিলেটের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।সব মিলিয়ে ইতোমধ্যে এ অঞ্চলের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাতটি উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।খাদ্য সামগ্রী হিসেবে সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে শনিবারই গোয়াইনঘাট উপজেলায় ২২ মেট্রিক টন, জৈন্তাপুরে ১২মেট্রিক টন, কানাইঘাটে ১৯ মেট্রিক টন, কোম্পানীগঞ্জে ১২মেট্রিক টন, সিলেট সদরে ১৪ মেট্রিক টন, জকিগঞ্জে ১৮ মেট্রিক টন ও বিয়ানীবাজারে ৬ মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকেও সহযোগিতার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের পাশে সরকার রয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় জেলার সাতটি উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে ১০৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
পাউবো কর্মকর্তারা জানান, সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টির সঙ্গে যোগ হয়েছে উজান থেকে নেমে আসা ঢল। ভারতের মেঘালয়, ত্রিপুরা ও আসাম প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢল ও বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে- সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার এলাকার নি¤œাঞ্চল।
পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে জকিগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বারহাল, মানিকপুর, কাজলসার ইউপিসহ বিভিন্ন এলাকায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ডাইক (তীর) ভেঙে ও উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। বন্ধ হয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ যোগাযোগ রাস্তাঘাট। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বীজতলা। তলিয়ে গেছে মাছ চাষের শতাধিক পুকুর ও ফিসারী। পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা থাকায় তলিয়ে গেছে পৌরসভার জকিগঞ্জের প্রধান ডাকঘর, প্রাণী সম্পদ অফিস, স্থলশুল্ক স্টেশন, জকিগঞ্জ ফাজিল সিনিয়র মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। এতে পৌরবাসীর দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
জকিগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও পল্লব হোম দাস জানান, ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ চৌধুরী বলেন, পাউবো’র লোকজন তদারকিতে রয়েছেন। ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
কানাইঘাটে পানির চাপে সুরমা নদীর ডাইকের একাধিক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।বিশেষ করে উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের কুওরঘড়ি সুরমা ডাইকে ভয়াবহ ভাঙ্গণসহ সুরমা ডাইকের বিভিন্ন এলাকার উপর দিয়ে বানের পানি প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম, বড়চতুল, লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব, সাতবাঁক, কানাইঘাট সদর, দিঘীরপাড় পূর্ব ও দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা, রাস্তা-ঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার বাড়ি ঘরে।

কানাইঘাটবাজার কোমর পানি থেকে হাঁটু পানি বিরাজ করায় বাজারের অধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে মালামালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কানাইঘাট-চতুল-দরবস্ত সড়ক, কানাইঘাট-গাছবাড়ী গাজী বোরহান উদ্দিন সড়ক, কানাইঘাট-সুরইঘাট সড়ক ও কানাইঘাট-শাহবাগ-জকিগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সিলেট শহরের সাথে সব ধরনের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিহ্ন রয়েছে। উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। কানাইঘাট সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ১৪২ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং সহ নদী ভাঙ্গন এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বন্যা কবলিত এলাকা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিদর্শন করছেন।
গোয়াইনঘাটে গ্রামীণ জনপদের অধিকাংশ রাস্তাঘাট বানের পানিতে তলিয়ে গেছে।গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়ক, গোয়াইনঘাট-সোনারহাট সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠে পড়ায় উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গোয়াইনঘাট-সালুটিকর সড়কের বেশ কয়েক স্থানে পানি উঠেছে।পানি বাড়লে এ সড়কটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাহমিলুর রহমান জানান, বন্যার পানিতে উপজেলার সিংহভাগ এলাকায় তলিয়ে গেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি ২৪ টন চাল বরাদ্ধ দিয়েছেন। পানি না কমলে সরকারি ভাবে আরও সহায়তা বাড়ানোর কথা তিনি জানান।
গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ বলেন, বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পানিবন্দী মানুষের খোঁজ খবর সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।