জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
মাহে রমজান, অন্যদিকে তীব্র তাপদাহ। সব মিলিয়ে প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নগরজীবন। তীব্র গরমের মধ্যে শুরু হওয়া ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে নানামূখি সমস্যায় পড়েছেন নগরিকরা। বিশেষ করে নগরীর সর্বত্র এখন বিদ্যুৎ ও পানির জন্য হাহাকার চলছে।
জানা যায়, রমজানের মতো পবিত্র মাসে ইফতার ও সেহরীর সময়ও বিদ্যুৎ বঞ্চিত থাকতে হচ্ছে বিশাল জনগোষ্টীকে। দিনে গড়ে ৮ ঘন্টাও মিলছেনা বিদ্যুৎ। ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা বিদ্যুৎহীন থাকছে অনেক এলাকা। ফলে নগরজুড়ে পানি সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। আর গরমের তীব্রতা আর মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে বাড়ছে রোগবালাই। নগরীর হাসপাতালগুলোতে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সরকারী হাসপাতালের বহির্বিভাগেও গরমজনিত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
এদিকে, ঈদের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে বিদ্যুতের এমন লোডশেডিংয়ে ঈদ বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে টেইলার্স এর কাগিররা কাপড় সময়মত ডেলিভারী দিতে পারছেন না। একদিকে ব্যবসায়ীদের জেনারেটর খরচ বাড়ছে অপরদিকে ক্রেতার উপস্থিতি কমছে। একই সাথে ইলেকট্রিক দোকানে রিচার্জেবল ডিভাইস কেনার ধুম পড়েছে। এই সুযোগে রিচার্জেবল ডিভাইসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীতে গরমের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং ও পানির সঙ্কট তীব্র হচ্ছে। এই সঙ্গে মশা ও মাছির উৎপাত যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। এদিকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে খোঁড়াখুঁড়ির পর তা মেরামত না করায় ধুলার মাত্রা বেড়ে গেছে। গত কয়েকদিনে সিলেট নগরীতে লোডশেডিং ও পানির সংকট অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যুতের এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশন পানির চাহিদার অর্ধেকও পূরণ করতে পারছে না। এতে নগরবাসীর মধ্যে বিদ্যুৎ ও পানির চরম হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। এ সঙ্কট নিরসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে নগরবাসী। গত কয়েকদিন থেকে বিদ্যুৎ নেই তাই পানি নেই, আবার বিদ্যুৎ আছে তো পানি নেই। পানির আশায় ট্যাপের দিকে চেয়ে থাকছেন মানুষ। আবার যদিও বা পানি আসছে তা এতই ধীরগতির যে এক বালতি ভরতে সময় লাগছে আধাঘণ্টারও বেশি। সাপ্লাই পানির উপর নির্ভরশীল মানুষ পড়েছেন বেকায়দায়। সকালে গোসল এবং ঘর গৃহস্থালির কাজের শুরুতেই মানুষ দেখছেন পানি নেই। পানির সঙ্কটের কারণে কাজ করতে বিরক্তি প্রকাশ করছে গৃহকর্মীরা। অনেকে পানির অভাবে গোসলও করতে পারছেন না। লোডশেডিংয়ের কারণে সাপ্লাই পানির একমাত্র উৎস পাম্প তথা গভীর নলকূপগুলো সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে পাইপলাইনে পানির প্রবাহও বজায় থাকছে না। কিন্তু মানুষ এসব যুক্তি মানতে নারাজ। মানুষ এ সমস্যার নিরসন চায়।
সিসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, নগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা প্রায় ১০ কোটি লিটার। এর মধ্যে সাধারণত ৫ থেকে ৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করতে পারে সিসিক। গত কয়েকদিন থেকে বিদ্যুৎ বিড়ম্বনার কারণে নগরীতে পানি সরবরাহ কঠিন হয়ে দাঁড়য়েছে। একটি এলাকায় এক থেকে দেড় ঘন্টা পানি সরবরাহ হয়। এই সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেলে ঐ এলাকায় ফের পানি সরবরাহ বন্ধ থাকে। বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে বর্তমানে চাহিদার ৪ ভাগের ১ ভাগ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছেনা।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সিলেটে ২০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া গেছে ১৫৫ মেগাওয়াট। ফলে ৩৩ শতাংশ লোডশেডিং করতে হচ্ছে। আর এতে দিনের ১০/১২ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকছে না। আপাতত এই পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা নেই। তবে আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে নগরীতে বর্তমানে ইফতার ও সেহেরীতে লোডশেডিং নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির জানান, বিদ্যুতের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় লোডশেডিং বাড়ছে। তবে আগামীতে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কমতে থাকবে। কারণ ঈদ উপলক্ষে সরকারী/বেসরকারী অফিস আদালত, কলকারখানা বন্ধ হলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে।
তিনি বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় সিলেটে ২০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে আমরা বরাদ্দ পেয়েছি ১৫৫ মেগাওয়াট। তাই আমাদেরকে সোমবার ৩৩ শতাংশ লোডশেডিং করতে হয়েছে। সেহরী ও ইফতারের সময় লোডশেডিংয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, এই দুটি সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেশী বেড়ে যাওয়ায় কিছু এলাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তবে আমরা একই এলাকায় প্রতিদিন যাতে ইফতার ও সেহেরীতে লোডশেডিং না হয় সেদিকে খেয়াল রাখছি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বলেন, এমনিতেই নগরীতে দিন দিন পানির চাহিদা বাড়ছে। এরমধ্যে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানির পাইপলাইনের কাজ চলছে। এরমধ্যে দিনের অর্ধেকের বেশী সময় বিদু্যুৎ থাকছেনা। এমন পরিস্থিতিতে পবিত্র রমজান মাসে নগরীতে পানি সরবরাহ রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, যে কোন এলাকায় টানা দেড় থেকে দুই ঘন্টা পানি দেয়া হয়। কিন্তু পাম্প চালুর একটু পরে বিদ্যুত চলে গেলে আবার ঐ এলাকায় পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার নগরীর কিছু এলাকায় পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। রমজান মাসে পানির চাহিদা বাড়লেও বিদ্যুতের কারণে সরবরাহ কমছে। এতে জনদুর্ভোগ কিছুটা বাড়তে পারে। সিটি কর্পোরেশন সাধ্যের মধ্যে নগরবাসীকে পানি সেবা দিতে আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা: সৌমিত্র চক্রবর্তী জানান, তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও আশঙ্কাজনক নয়। ওসমানী হাসপাতালে এমন রোগী আসলে সংখ্যা তেমন নয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায়না।
তিনি বলেন, যতটা সম্ভব গরম এড়িয়ে যেতে হবে। বেশী পরিমাণে পানি পান করতে হবে। গরম বাড়বে এমন খাওয়া দাওয়া পরিহার করতে হবে। যতটা সম্ভব সুতি পাতলা কাপড় পরিধান করতে হবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি