April 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, September 4th, 2021, 5:35 pm

সিলেট-৩ উপ-নির্বাচনে হতাশাজনক ভোটার সংখ্যা

এস,এ শফি, সিলেট :
সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ। তবে প্রতিক্ষিত এ নির্বাচনে শুরু থেকেই ভোটার উপস্থিতি কম।
দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘুরে ভোটার উপস্থিতির হতাশাজনক চিত্র দেখা যায়। প্রায় ভোটকেন্দ্রই ফাঁকা। তবে বেলা বাড়লে ভোটার বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সকালে উপজেলার কুচাই ইউনিয়নের জান আলী শাহ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোট দিতে এসেছেন হাতেগোনা কয়েকজন। একই চিত্র ছিল উপজেলার কদমতলী এলাকার ইসরাব আলী হাই স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে এবং উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের হ্বাজী ইসরাইল আলী সরকারি প্রাথমিক কেন্দ্রে।
এসব কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার বলেন, ‘সকালে বৃষ্টি হওয়ায় ভোটার কিছুটা কম। তবে বেলা বাড়ার সাথে ভোটারের উপস্থিতি বাড়তে পারে।’
প্রধমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হওয়ায় কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়েন ভোটাররা।


নতুন এ ভোট পদ্ধতি সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না ভোটারদের। ইভিএমে ভোট সম্পর্কে ধারণা দিতে গত ২৬ জুলাই তিন উপজেলায় মক ভোটিং হয়েছিল, কিন্তু তাতে ভোটারদের সাড়া পাওয়া যায়নি।
সিলেট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদের বলেন, “শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট হচ্ছে। এখনও কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তাছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে মাঠে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।”
এদিকে, কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পেরে ফিরে গেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) আঙ্গুলের ছাপ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তিনি ভোট দিতে পারেননি।
তবে নির্বাচন কর্মকর্তারা ঘন্টা দু’য়েক পর তাকে আবারও ভোট দিতে কেন্দ্রে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।
তবে, সকাল সোয়া ৮টায় নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি তাঁর নিজ ভোটকেন্দ্র দক্ষিণ সুরমার কামালবাজারের ধরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেন।
এদিকে, সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। মারধর করে এজেন্টকে বের করে দেয়া, ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটারদের ফিরিয়ে দেয়া ও কোন কোন কেন্দ্রে লাঙ্গলের ভোটারদের জোরপূর্বক নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এমন অভিযোগ করেন। নির্বাচন নিয়ে তার অভিযোগ রিটার্নিং অফিসারের কাছেও করেছেন বলে জানান আতিক।
আতিক জানান, ফেঞ্চুগঞ্জের ৭টি কেন্দ্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দখল করে নিয়েছেন। পিটাইটিকর, কাসিম আলী স্কুল ও চন্ডিবাজারসহ অন্যান্য কেন্দ্রগুলো থেকে লাঙ্গলের এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়া হয়েছে। ভোটারদেরও মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
আতিকের অভিযোগ, দক্ষিণ সুরমার কুচাই শ্রীরামপুর সেন্টার থেকে লাঙ্গলের এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে। লাঙ্গলের ভোটারদের জোর করে নৌকায় ভোট দেয়ানো হয়েছে।
ইসরাব আলী হাই স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার জয়ন্ত পাল বলেন, ‘ সকালে থেকেই ভোটার উপস্থিতি কম। আস্তে আস্তে ভোটারের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করছি।’
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের আতিকুর রহমান আতিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোটরকার প্রতীকের বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ও সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া ডাব প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এর আগে শুক্রবার দুপুরে সকল নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট তিন উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এসব নির্বাচনী সরঞ্জাম নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রে পাঠানো হয়। একইসঙ্গে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্ব স্ব কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকছে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলার ভোটকেন্দ্রগুলো। কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের ১৭-১৮ জন সদস্য দায়িত্বে রয়েছেন। আর গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে নিয়োজিত রয়েছেন ১৮-১৯ জন সদস্য। এছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত ২১টি মোবাইল ফোর্স, ১২টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র‌্যাবের ১২টি টহল টিম ও ১২ প্লাটুন বিজিবি নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মোকাবিলায় বিজিবির সঙ্গে ২১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মনিটরিং করছেন তিনজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।
উল্লেখ্য, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার ও ভোটকেন্দ্র ১৪৯টি। গত ১১ মার্চ করোনায় এ আসনটির সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা গেলে আসনটি শূন্য হয়। তপশীল অনুযায়ী গত ২৮ জুলাই এই আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এর দুই দিন আগে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে আদালত। পরবর্তী সময়ে ৪ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করে কমিশন।