নিজস্ব প্রতিবেদক:
সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির বেসরকারি একটি কন্টেইনার ডিপোতে স্মরণকালের ভয়াবহ বিস্ফোরণে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত আরও ১৩০ জনের মত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন।
এর আগে, ‘সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুন ২২ ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানা গেছে’। ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান ও চমেক পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত জেলা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক আলাউদ্দীন তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সূত্রে জানা যায়, কেমিক্যাল কনটেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুন লাগার পর পর কন্টেইনারগুলো একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে।
গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা থেকে রাসায়নিক পণ্যের কন্টেইনার বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে চিকিৎসকরা। বিস্ফোরণে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ কারখানাটির দুই শতাধিক শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৭ জনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে এবং ১৫ জনের নাম পাওয়া গেছে।
তারা হলেন-মোমিনুল হক, মহিউদ্দিন, হাবিবুর রহমান, রবিউল আলম, তোফায়েল ইসলাম, ফারুক জমাদ্দার, আফজাল হোসেন, মো. সুমন, মো. ইব্রাহিম, হারুন উর রশিদ, মো. নয়ন, শাহাদাত হোসেন, শাকিল তরফদার, শাহাদাত উল্লাহ জমাদার ও ফায়ার সার্ভিস কর্মী মনিরুজ্জামান।
ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলের চারপাশের অন্তত ৪-৫ কিলোমিটার এলাকা বিকট শব্দে প্রচণ্ডভাবে কেঁপে ওঠে। এতে ঘরবাড়ি, মসজিদ ও বিভিন্ন অফিস দোকান পাটের কাঁচের দরজা জানালা ভেঙে পড়ে, ফাটল ধরেছে পাকা দেয়ালে। পুরো এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
বিস্ফোরণের পর ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজনসহ কারখানাটির বহু শ্রমিক এখনও নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে।
আগুন নেভাতে গিয়ে আহত হয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কমপক্ষে ২১ জন কর্মী। এছাড়া এক পুলিশ কনস্টেবলের পা বিচ্ছিন্নসহ অন্তত ১৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ১৩০ জনকে।
গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন লাগলেও ২২ ঘণ্টা চেষ্টার পরও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান।
তিনি বলেন, আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে ৭-৮টি কনটেইনারে বিস্ফোরণে আবারও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ডিপো এলাকায় পানির সংকট রয়েছে। সেখানে একটি পুকুর থেকে পানি আনা হয়েছিল, সেই পানিও এখন শেষ পর্যায়ে। কন্টেইনারে রাসায়নিক দ্রব্য থাকায় আগুন নিভানো যাচ্ছে না।
ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে ইউনিট আরও বাড়ানো হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ সেনাবাহিনীর একটি বিশেজ্ঞ টিম। এর মধ্যে ঘটনাস্থলে সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি ও ফেনীর, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, বান্দরবান থেকে এসে স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করছেন। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে দগ্ধে আহত ও মৃতদের আনা নেয়ার কাজে চারটি অ্যাম্বুলেন্স কাজ করছে।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গুরুতর আহত ১০ জনকে বিকালে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় নেয়া হয়েছে বলে জানান, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যোন্ট কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ।
তিনি বলেন, সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৫০ জন সদস্য কাজ করছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত ১০ জনকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা স্থানান্তর করা হবে। শনিবার রাত থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিএমএইচে ১৫ জন রোগী ভর্তি আছেন।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি