November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, June 6th, 2022, 9:19 pm

সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি: দুই শিশুকে নিয়ে স্বামীর খোঁজে ঘুরছেন রেশমি

সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর থেকে গত দুই দিন ধরে নিখোঁজ স্বামীর সন্ধানে ছবি হাতে নিয়ে এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন রেশমি। কিন্তু কোথাও নেই স্বামী কাভার্ডভ্যান চালক শাহজাহানের খোঁজ। এভাবে প্রিয়তম স্বামীর খোঁজে গৃহবধূ রেশমির চোখে গভীর শোক আর দুশ্চিন্তার অশ্রু।

আজ সোমবার দুপুরে রেশমি এসেছেন ডিএনএ পরীক্ষার জন্য। কোলে তিন মাসের ছেলে সন্তান রিহাদ, বাম হাতে ধরেছিলেন তিন বছর বয়সী আরেক ছেলে রিহানকে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রের সামনে দেখা গেছে রেশমিকে।

সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

রেশমি জানান, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি নাজিরহাটে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন তিনি। স্বামী কাভার্ডভ্যান চালক শাহজাহানের সঙ্গে শনিবার রাতে তার শেষ কথা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছিলেন কাভার্ডভ্যান নিয়ে ভাটিয়ারী যাচ্ছে। আগেও অনেকবার সেই ডিপোতে গিয়েছিল। কিন্তু এবার গিয়ে আর ফিরে আসেনি। সেই রাত থেকেই রেশমি বিভিন্ন স্থানে ছুটোছুটি করেছেন, কিন্তু খোঁজ মেলেনি তার।

রেশমি বলেন, ‘জানিনা কোথায় গেলে তাকে (স্বামী) ফিরে পাবো। অন্তত লাশটা পেলেও সান্ত্বনা পেতাম।’

একইভাবে সন্তানের খোঁজ পেতে ডিএন নমুনা দিতে এসেছেন হেমায়েতুল্লাহ নামে এক বাবা।

নোয়াখালী জেলার দক্ষিণ হাতিয়ার বাসিন্দা হেমায়েতুল্লাহ শনিবার গভীর রাত থেকেই প্রিয় সন্তানকে খুঁজে দিশাহারা। ছেলে মাইনুদ্দিনের (২০) ছবি নিয়ে কাঁদছিলেন এই বাবা।

তিনি জানান, আশুলিয়া থেকে কাভার্ডভ্যানে মালামাল নিয়ে চট্টগ্রামের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে এসেছিলেন তার ছেলে। শনিবার রাতে তার ছেলে ভিডিওতে আগুনের সেই দৃশ্য বাবাকে দেখাচ্ছিলেন। এরপর থেকে আর সন্তানের কোনো খোঁজ পাননি।

এছাড়াও কুমিল্লার নাঙ্গলকোট এলাকার মো. রাসেলের (২০) খোঁজে তার স্বজনরা ডিএনএ নমুনা কেন্দ্রে ভিড় করছেন। রাসেল গাড়ি ওয়ারিং এর কাজ করতেন। এ রকম আরও বিপুলসংখ্যক স্বজন ভিড় করেন ডিএনএ নমুনা কেন্দ্রের সামনে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালসহ নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকে ছুটে বেড়াচ্ছেন অনেকে। একটিবারের জন্য যাতে প্রিয়জনকে খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু কোথাও না পেয়ে হতাশ হয়ে শেষ পর্যন্ত আসছেন ডিএনএ নমুনা কেন্দ্রে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জরুরি বিভাগের বাইরে স্থাপিত ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রের বাইরে বিপুল মানুষের ভিড়। স্বজনদের কান্না, আহাজারি। শোকাহত অনেকে বুকে নিখোঁজ স্বজনের ছবি লাগিয়ে প্রিয়জনকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। অনেকে ডিএনএ দেয়ার জন্য তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে চিকিৎসকরা তাদের নমুনা সংগ্রহ করছেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নিখোঁজ ৮ স্বজনের বিপরীতে ১২ জন নিকট আত্মীয় স্বজন ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

—ইউএনবি