ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়ার এডমিরাল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. খুরশেদ আলম জানান, তারা রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক করেছেন এবং প্রয়োজন হলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে ‘শক্তিবৃদ্ধি’সহ সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স (এমএইউ) বিভাগের সচিব খুরশেদ আলম বলেন, বাংলাদেশ একটি ‘দায়িত্বশীল ও শান্তিপ্রিয়’ দেশ। এবং আমরা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পরিস্থিতি অনেক ধৈর্য্যের সঙ্গে ‘পর্যবেক্ষণ ও সহ্য’ করছি।
মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, মিয়ানমারের কোনও নাগরিক যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সরকার সতর্ক রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
এর আগে সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিয়াও মোকে চতুর্থবারের মতো তলব করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে সাম্প্রতিক ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া শাখা) মো. নাজমুল হুদার কার্যালয়ে রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়।
খুরশেদ আলম বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছিল যে মিয়ানমারে যা ঘটছে তা তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং তারা কীভাবে এটি সমাধান করবে তা তাদের ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এ ধরনের ঘটনা-মৃত্যু ও আহতের পুনরাবৃত্তি রোধে পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে বলেছে বাংলাদেশ।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের কথা শুনেছেন এবং তিনি সদর দপ্তরে জানাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ শক্তিশালী থাকলে সমাধান হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কোনো দুর্বলতা প্রদর্শন করছে না, বরং অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থান থেকে মিয়ানমারের কাছে তাদের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে।
সাম্প্রতিক মৃত্যুর দায় কে নেবে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, গুলিটি কে ছুঁড়েছে তা তারা সঠিকভাবে বলতে পারবেন না, যদিও বুলেটটিতে ‘মিয়ানমার আর্মি’ লেখা রয়েছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার পক্ষ বলছে এই বুলেটগুলো আরাকান আর্মি চুরি করেছে এবং তারা এই গুলি ব্যবহার করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘দূরত্ব’ তৈরি করছে। ‘এমন পরিস্থিতিতে কে দায় নেবে তা নির্ধারণ করা কঠিন।’
খুরশেদ আলম বলেন, বাংলাদেশে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ছড়াছড়ি বন্ধে পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারকে বলেছে বাংলাদেশ।
এর আগে, ঢাকা মিয়ানমারের মর্টার শেলিং, সীমান্তবর্তী এলাকায় নির্বিচারে বিমান থেকে গুলি এবং আকাশপথ লঙ্ঘনের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে তার ‘গভীর উদ্বেগ’ পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে তবে প্রয়োজনে সীমান্তে মর্টার ছোড়ার বিষয়ে জাতিসংঘে অভিযোগ করা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের (মিয়ানমার) কয়েকবার সতর্ক করেছে। কিন্তু তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবার তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের মর্টার শেলিংয়ে হতাহতের ঘটনায় আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি।’
শুক্রবার রাতে বান্দরবানের তুমব্রুতে আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে জিরো পয়েন্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোঁড়া মর্টার শেল বিস্ফোরণে মোহাম্মদ ইকবাল(১৭) নামে এক রোহিঙ্গা শিশু নিহত এবং আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন।
নিহত ও আহতরা সবাই নো ম্যানস ল্যান্ডের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের সবচেয়ে কাছের ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত জিরো পয়েন্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা।
রাত ৮টার দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরপর চারটি মর্টার শেল পড়ে।
এর আগে শুক্রবার দুপুরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে অঙথোয়াই তঞ্চঙ্গ্যা নামে এক আদিবাসী যুবক গুরুতর আহত হন।
স্থানীয়রা বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীই ওই এলাকায় মাইনিং করেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে এ পর্যন্ত ১২টি মর্টার শেল নিক্ষেপ করেছে।
—-
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২