সুইস রাষ্ট্রদূতের এক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দাখিল করা এফিডেভিট ইন কমপ্লাইয়েন্সের সঙ্গে যুক্ত করা এক পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদনে কারও কোন নাম, ঠিকানা ও পদবি না থাকায় বাংলাদেশ ফাইন্যানসিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান মাসুদ বিশ্বাসকে তলব করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই তলব আদেশ দেন। বুধবার সকাল ১১ টায় আদালতে হাজির হয়ে মাসুদ বিশ্বাসকে এবিষয়ে তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
আদেশ প্রদানকালে আদালত বলেন, ‘নাম পদবি ছাড়া এভাবে প্রতিবেদন দেয়াটা যেন ‘ধরি মাছ না ছুই পানি’র মত একটা বিষয়। এত ভয় কেন? নাম পদবি দিয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে।’
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন। আর দুদকের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
পরে খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএফআইইউ’র পক্ষ থেকে যে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে সেটি প্রোপার ওয়েতে দাখিল করা হয়নি। কমপ্লায়েন্সের মধ্যে কারও কোন স্বাক্ষর নেই, কে দাখিল করেছে তা উল্লেখ নেই। এ কারণে আদালত অত্যন্ত মনোক্ষুন্ন হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বক্তব্য জানতে চেয়েছিল। আমি বলেছি এটি বিএফআইইউ’র উদাসীনতা। হাইকোর্ট শুনানি নিয়ে বিএফআইইউ’র প্রধানকে তলব করেছেন।’
আদালতে আজ দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
এর আগে গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড বলেছেন, সুইস ব্যাংকে জমা রাখা অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির তথ্য চায়নি। সুইস ব্যাংকের ত্রুটি সংশোধনে সুইজারল্যান্ড কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে আমি আপনাদের জানাতে চাই সুইজারল্যান্ডে কালো টাকা রাখার কোনো নিরাপদ ক্ষেত্র নয়।
এরপর ১১ আগস্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সুই ব্যাংকের কাছে পাচারকারীদেও তথ্য চাওয়া হয়েছিল কিনা সে ব্যাপাওে দুদক এবং রাষ্ট্রপক্ষের কাছে পদক্ষেপ জানতে চান। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ আগস্ট বিএফআইইউকে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন এফিডেভিট আকারে দাখিল করতে বলা হয়।
সে অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষ থেকে গত রবিবার সকালে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার (বিএফআইইউ) প্রতিবেদন এফিডেভিট আকারে হাইকোর্টে দাখিল করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা সংক্রান্ত তথ্য বিভিন্ন সময়ে দেশটির আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা এফআইইউয়ের কাছে চাওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ গত ১৭ জুন এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছিল বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা।
অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসীকাজে অর্থায়ন প্রতিরোধ, অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য বিএফআইইউ অন্যান্য দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। তবে বিশ্বব্যাপী এসব তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হলো এগমন্ড সিকিউর ওয়েব (ইএসডব্লিউ)।
২০১৩ সালের জুলাইতে ইএসডব্লিউ’র সদস্য হওয়ার পর চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য চায় বাংলাদেশ। ইএসডব্লিউ’র মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে এ তথ্য দিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু একজন ছাড়া অন্যদের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানায় সুইজারল্যান্ড। আর ওই একজনের তথ্য দুদককে দিয়েছে বিএফআইইউ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইস ব্যাংক চলতি বছরের ১৬ জুন বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরদিন ইএসডব্লিউ’র মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যাংক ও ব্যক্তির জমানো অর্থের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের জন্য সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে অনুরোধ জানানো হয়। এ পর্যন্ত মোট ১৩ বার তথ্য চাওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য পায়নি বাংলাদেশ। এই প্রতিবেদনের ওপর আজ শুনানি হয়।
শুনানিকালে দেখা যায় এফিডেভিটের ভেতরে একটি প্রতিবেদনে কারও নাম, স্বাক্ষর, ঠিকানা কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ