April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, January 30th, 2022, 9:45 pm

সুইস ব্যাংকে কার কত টাকা, জানতে চান হাইকোর্ট

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিদেশে অর্থপাচারে জড়িতদের মধ্যে পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৬ মার্চের মধ্যে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সুইস ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের মাধ্যমে যারা বিদেশে অর্থপাচার করেছেন তাদের কত টাকা সেসব ব্যাংকে জমা আছে সে তথ্য এবং তাদের তালিকা হাইকোর্টে জমা দিতে বলেছেন আদালত। আগামী ৬ মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আদেশের বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক ও রিটকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুবীর নন্দী দাস নিশ্চিত করেন। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ-সংক্রান্ত রিটের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এ ছাড়া এ বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর শুনানির জন্য ৭ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেছেন আদালত। হাইকোর্টের শুনানিতে রোববার (৩০ জানুয়ারি) রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান। রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুল কাইয়ুম খান ও অ্যাডভোকেট সুবীর নন্দী দাস। প্যারাডাইস ও পানামা পেপার্সে নাম আসা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের তথ্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২৬ জানুয়ারি প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এ বিষয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে শুনানি হয় রোববার (৩০ জানুয়ারি)। এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক বলেন, পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারিতে নাম আসা ৬৯ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের তালিকা এবং এর মধ্যে ১০ ব্যক্তি-পরিবারের বিষয়ে গৃহীত ব্যবস্থার তথ্য উল্লেখ করে আদালতে ২৬ জানুয়ারি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। হাইকোর্টে দেওয়া তালিকায় নাম রয়েছে বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর দুই ছেলের। তাদের মধ্যে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীও রয়েছেন। এর আগে ১২ ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৮ টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বাংলাদেশ থেকে বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংক বিশেষ করে সুইস ব্যাংকসহ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দুবাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেসব অর্থপাচার হয়েছে তার তথ্য নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। গত ১৭ অক্টোবর হাইকোর্টকে এ তথ্য জানানো হয়। পরে আরও সময় নেয় বিএফআইইউ এবং দুদক। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) হাইকোর্টে এ প্রতিবেদন জমা দেয়। একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ)থেকে পাওয়া হলফনামা আকারে ওই প্রতিবেদন আমরা (রাষ্ট্রপক্ষ) জমা দিয়েছি। এর মধ্যে পানামা পেপার্সের ৪৩ জন এবং প্যারাডাইস পেপার্সের ২৬ জনের নামের তালিকা নিয়ে কাজ করছে বিএফআইইউ। নাম আসা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দেশে চিঠিও পাঠিয়েছিল বিএফআইইউ। এর মধ্যে ১০ ব্যক্তি-পরিবারের বিষয়ে আর্থিক লেনদেন, বিদেশে অবস্থান ও ব্যাংক পরিচালনার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি রোববার (৩০ জানুয়ারি) আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালত এ বিষয়ে আদেশ দেন। তিনি জানান, পানামা পেপারস, প্যারাডাইস পেপারসে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে অগ্রতি প্রতিবেদন জানাতে দুদক, সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া সুইস ব্যাংকসহ অন্যান্য বিদেশি ব্যাংকে যারা অর্থপাচার করেছে তাদের তালিকা দিতে এবং কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে সেটি আগামী ৬ মার্চের মধ্যে জানাতে হবে বিএফআইইউকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক জানান, আজ রোববার (৩০ জানুয়ারি) পাওয়া তালিকায় ২৬ জনের নাম এসেছে প্যারাডাইস পেপারসে ও পানামা পেপারসে ৪৩ জনের নাম এসেছে। বিএফআইইউয়ের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট আবেদনের ভিত্তিতে ১০ জনের অর্থপাচার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা। তালিকায় নাম আছে বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর দুই ছেলের। বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর নামও রয়েছে তালিকায়। এর আগে গত (২০২১ সালের) বছরের ৬ ডিসেম্বর পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসা অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও সিআইডিকে তা জানাতে বলা হয়। এরপর গত ৫ ডিসেম্বর পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসা অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা পৃথক দুটি প্রতিবেদনে হাইকোর্টে দাখিল করে দুদক। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করে ও আইসিআইজের ওয়েবসাইটে বর্ণিত দেশভিত্তিক তালিকা পর্যালোচনা করে বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে প্রথম পর্বে ৪৩ ব্যক্তি ও দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম আসে। এর পরে ২৬ জনের নাম পাওয়া যায়। দেশের ভিন্ন ভিন্ন নাগরিক ও কোম্পানি অর্থপাচার করে সুইস ব্যাংকসহ বিদেশি ব্যাংকগুলোতে গোপনে জমা রাখা বিপুল অর্থ উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি রিট করেন। এর শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত রুলজারিসহ আদেশ দেন।