নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিনা সুদের ঋণে কর্মকর্তারা গাড়ি কিনেও সরকারি গাড়িই বেশি ব্যবহার করছে। মূলত পরিবহন খাতে খরচ কমাতেই সরকার কর্মকর্তাদের বিনা সুদে গাড়ির কেনার সুবিধা দেয়। আর প্রশাসন ক্যাডারের বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা গাড়ি কেনার সুদহীন ওই ঋুসুবিধা গ্রহণ করে। কিন্তু সরকারের ওই উদ্যোগের কোনো সুফল মিলছে না। বরং সরকারের ব্যয় আরো বেড়েছে। কারণ সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা সংস্থা সরকারি গাড়ির চালক, জ্বালানিসহ গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। এমন অনিয়ম রোধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট আমলাদের তিন দফা চিঠি দিয়েছে। এমনকি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে। কিন্তু তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অনেক কর্মকর্তাই নিয়ম ভেঙে কর্মস্থল থেকে সরকারি গাড়ি বরাদ্দ নিয়ে ব্যবহার করছে। কেউ কেউ বিনা সুদের ঋণের টাকা কেনা গাড়ি ভাড়ায় খাটাচ্ছে। নিয়মানুযায়ী অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার জন্য গাড়ি বরাদ্দ আছে। ওই পর্যায়ের কর্মকর্তার জন্য আরেকটি গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও একজন যুগ্ম-সচিব বা উপ-সচিবের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। অথচ কর্মকর্তাদের গাড়ি ঋণ দেয়ার লক্ষ্যই ছিল ঋণে কেনা গাড়ি অফিস ও পরিবারের কাজে ব্যবহার করবে। ফলে সরকারকেও আর গাড়ি কিনতে হবে না। যারা এটা করছে তা সম্পূর্ণ অনৈতিক।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১১ সালে প্রাধিকার পাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। ওই নীতিমালা অনুযায়ী সরকারের যুগ্ম সচিব ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত ওই ঋণ দেয়ার কাজ শুরু হয়। পরে ২০১৭ সালে উপসচিব (প্রশাসন ক্যাডার) পদে যাদের ৩ বছর মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে তাদেরও সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই ঋণের শর্তে বলা হয়, যারা ঋণ সুবিধা নেবে তারা ওই গাড়ি অফিসিয়াল ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে পারবে। ঋণ নিলে কর্মকর্তারা সরকারি গাড়ি বরাদ্দ নিতে বা ব্যবহার করতে পারবে না। বর্তমানে দেশে ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, ৭২টি অধিদপ্তর ও পরিদপ্তর, ৩১৬টি দপ্তর ও সংস্থা রয়েছে। ওসব মন্ত্রণালয় ও সংস্থায় কর্মরত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা, সচিব, সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে ৩ বছর পার করা কর্মকর্তারা ঋণ সুবিধার প্রাধিকারভুক্ত। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় চার হাজার কর্মকর্তা ই ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনেছে। ওই খাতে দেয়া ঋণের পরিমাণ এক হাজার ১৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
সূত্র আরো জানায়, বিনা সুদের গাড়ির এই অপব্যবহার রোধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের তিন দফা চিঠি দিয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, নীতিমালা না মেনে কিছু কর্মকর্তা সুদমুক্ত ঋণের গাড়ি নিজে ব্যবহার না করে সরকারি গাড়িতে অফিসে যাতায়াত করছে। কেউ কেউ পারিবারিক কাজেও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছে। আর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা করে তুলে নিচ্ছে। তাতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এই অনিয়ম রোধে সুদমুক্ত ঋণের টাকায় কেনা গাড়ির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ও সরকারি গাড়ি অপব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। নীতিমালার ব্যত্যয় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণের টাকায় কেনা গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থা ও উন্নয়ন প্রকল্পের যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না। প্রেষণ, মাঠ প্রশাসন, প্রকল্পে কর্মরত কোনো কর্মকর্তার সার্বক্ষণিক সরকারি যানবাহন ব্যবহারের সুবিধা থাকলে সুদমুক্ত ঋণের টাকায় কেনা গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে নির্ধারিত টাকার ৫০ শতাংশ পাবে এবং কর্মস্থলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুদমুক্ত ঋণের টাকায় কেনা গাড়ি ব্যবহার করতে হবে।
এদিকে জনপ্রশাসন সচিব কে এম আলী আজম জানান, প্রেষণে কোনো কর্মকর্তা অন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে ওই পদের বিপরীতে গাড়ি বরাদ্দ থাকলে ওই কর্মকর্তা গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে গাড়ি ঋণ নেয়া কর্মকর্তার কাছ থেকে গাড়ি ব্যবহার বাবদ বরাদ্দ করা টাকার অর্ধেক তার বেতন থেকে কেটে রাখা হয়। তার বাইরে কেউ বরাদ্দ নিয়ে ব্যবহার করলে তা আইনের ব্যত্যয়। যারা তা করছেন তাদের ব্যাপারেও মন্ত্রণালয় সজাগ আছে। মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদারকি করছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ