অনলাইন ডেস্ক :
প্রচলিত ফর্মুলার ভিড়ে ধারাবাহিকতাহীন এক ছবির নাম ‘সুলতানপুর’। পরিচালকের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘গল্পই সিনেমার প্রধান চরিত্র’; কিন্তু বাস্তবে অসঙ্গতিতে ভরা মাথামু-ুহীন এক গল্পের ছবি ‘সুলতানপুর’। শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় পুরস্কার (২০১৪-দেশা দ্য লিডার) পাওয়া পরিচালক সৈকত নাসিরকে খুঁজে না পাওয়ার এক ছবি ‘সুলতানপুর’। এক দৃশ্যের সাথে অন্য দৃশ্যের মিল না থাকা এক ছবির নাম ‘সুলতানপুর’। বাংলাদেশে পাঁচটা ‘সুলতানপুর ইউনিয়ন’ থাকলেও (সিলেট জকিগঞ্জ-এর সুলতানপুর,কুমিল্লা দেবীদ্বারের সুলতানপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সুলতানপুর, চট্টগ্রাম রাউজানের সুলতানপুর এবং রাজবাড়ি জেলার সুলতানপুর ইউনিয়ন) এটা কোন সুলতানপুরের গল্প সেটা বুঝতে না পারা এক ছবির নাম ‘সুলতানপুর’। গান, আইটেম গান, অভিনয় আর মারামারির মধ্যে ‘সিনেমা’ না খুঁজে পাওয়া এক ছবি ‘সুলতানপুর’।
ছবির গল্প এক সীমান্তবর্তী অঞ্চল নিয়ে। চোরাচালানই নাকি সুলতানপুরের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। সম্ভবত ছবির শুটিং হয়েছে যশোরের সীমান্তবর্তী অঞ্চল চৌগাছা, বেনাপোল এবং ঢাকার ধামরাইয়ের কিছু এলাকায়। সুলতানপুরের সুলতান নজরউদ্দীন খিলজিকে এলাকার সবাই পীরবাবা হিসেবে সম্মান করে। মুখোশের আড়ালে তিনি ঐ এলাকার অপরাধ আর চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করে। পুলিশ, প্রশাসন, মন্ত্রী সব তার পকেটের লোক। এলাকার পুলিশের ভেতরেও তার এত প্রভাব যে, তাকে বাঁচানোর জন্য ক্রসফায়ারের গল্প সাজানো হয়। চোরাচালানিদের হাতে পুলিশের একজন সাব ইন্সপেক্টর নিহত হলে তার জায়গায় পাঠানো হয় এডিসি নাজির রায়হানকে। তিনি স্ত্রীসহ সুলতানপুরে আসেন, তখন জানা যায় তার স্ত্রী আইনজীবী। সুলতানপুরের থানায় কোনো মামলা হয় না, আদালতপাড়া বন্ধ থাকে মামলার অভাবে! অথচ এক ভদ্রমহিলা দুই বছর ধরে থানা ও আদালত পাড়ায় ঘোরেন, মামলা বা বিচার হয় না। নতুন এডিসি রায়হান থানায় মামলা নিতে আদেশ দেন, স্ত্রী এই মামলা লড়তে যান আদালতে।
এরপর এডিসি সাহেব ভিড়ে যান থানার আরেক সাব ইন্সপেক্টর আলমের সাথে এবং নিয়মিত পীর বাবার কাছ থেকে মাসোহারা নিতে থাকেন। পুলিশ স্বামী আবার বউয়ের মামলার সব খবর রাখেন না। তিনি যে সৎ পুলিশ এটা প্রমাণের জন্য পরে তিনি জানান- মাসোহারা হিসেবে নেয়া সব টাকা তিনি সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছেন! এদিকে পীরবাবার ছেলে সুলতান হায়দার খিলজি পীর হয়ে নেতৃত্ব হাতে নিতে চায়। তার মাথা গরম। পীর বাবা বেশির ভাগ সময় ছেলে হায়দারের কথা রাখেন না। সে আবার এক রাজনৈতিক নেতার মেয়ে সামিয়ার প্রেমে পড়ে। ছবির গৎ অনুসারে আইটেম বা রোমান্টিক গান দেখানো হয় কিন্তু পীর বাবার ছেলে হায়দার নায়ক না ভিলেন হতে যাচ্ছে সেটা নির্ণীত হয় না! নায়িকার সাথে তাকে রোমান্টিক গানেও দেখা যায়! যাই হোক একসময় দুম করে এডিসি সাহেবের স্ত্রী দেখে বাসার আলমিরায় টাকার স্তূপ। কিসের টাকা স্ত্রী এই প্রশ্ন করলে এডিসি সাহেব উত্তর দেন না, আবার স্ত্রী যে মামলা লড়তে গেছে একঘরে থেকেও সেটা এডিসি সাহেব জানেন না। শেষমেশ রায় ঘোষণার আগে নিজ অফিসে খুন হন এডিসি রায়হানের আইনজীবী স্ত্রী।
এরপর আরও তিন খুনের সূত্র ধরে মারপিট এবং ছবির শেষ ঘণ্টা বাজে। এই ছবির আরেক চরিত্র পীর বাবার বোকাসোকা অন্য ছেলে রাশেদ মামুন অপু। সহজ সরল এই ছেলেটাই শেষমেশ পীরের উত্তরাধিকার হয়ে দাঁড়ায়! পীর সাহেবকে পুলিশ বা প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ মারতে পারে না। প্রথমবার হত্যা করে ছেলে সুলতান হায়দার খিলজি আর পরের বার তার অন্য ছেলে অপু ও পীরের আরেক স্ত্রী! কারণ প্রথমবার ছেলের হাতে পীর বাবা নিহত হয়েছেন কি না তা পুলিশি পরীক্ষায় আসলেও আরেক ছেলে ও স্ত্রীর খুনের সাথে সংযুক্তি ধোঁয়াশা করে রাখা হয়! পীর বাবা ছাড়া এই ছবিতে কারও চরিত্র বিকশিত হয়নি। পীরবাবা কখনও শুদ্ধ, কখনও লোকাল, কখনও বা উর্দুতে কথা বলেছেন! পীর বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন স্বনামে খ্যাত আশীষ খন্দকার। পুলিশের এডিসি নাজির রায়হান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুমন ফারুক।
পুরোটা সময় তার রোবোটিক উপস্থিতি চোখে বিঁধেছে। এমন কী স্ত্রীর মৃত্যু বা মারপিটের দৃশ্যেও তার কোনো অভিব্যক্তি ছিল না। নাজির রায়হানের আইনজীবী স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন মৌমিতা মৌ। পীরবাবার মাথা গরম ছেলে হায়দারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সাঞ্জ জন। যিনি অভিনয়ে অমনোযোগী ছিলেন এবং কয়েক জায়গায় অতি অভিনয়ের কারণে চরিত্রটা বিকশিত হয়নি। রাজনীতিবিদের মেয়ে সামিয়া চরিত্রে ভালোই অভিনয় করেছেন অধরা খান। সাব ইন্সপেক্টর আলমের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহিন মৃধা, তোফাজ্জল চরিত্রে নাট্যপরিচালক রুমান রুনি এবং হাসেম আলি চরিত্রে বিলাস খান অভিনয় করেছেন। ২০২২-এ যখন সেন্সর বোর্ডে ছবিটা দেয়া হয় তখন নাম ছিল ‘বর্ডার’। সেন্সর বোর্ডের আপত্তির কারণে নাম এবং কিছু দৃশ্য বদলের পর মুক্তি পাওয়া ছবির নাম রাখা হয় ‘সুলতানপুর’। ছবির ‘জানরে’ শিরোনামের গানটি গেয়েছেন ভারতের স্নিগ্ধজিৎ এবং ‘বোকা মন’ গানটি লিখেছেন প্রসেনজিৎ ম-ল এবং সুর ও সংগীত আয়োজনের সাথে কণ্ঠ দিয়েছেন শাহরিয়ার মার্সেল। এ ছাড়া আইটেম গান ‘ফুলকুমারি’ এবং ‘বাবা তোর দরবারে সব পাগলের মেলা’ও ব্যবহৃত হয়েছে ছবিতে।
আরও পড়ুন
ইউটিউব থেকে সরানো হলো শাকিবের ‘তুফান’
চিন্তিত অনন্যা পান্ডে
কনাকে নিয়ে সুখবর দিলেন আসিফ