অনলাইন ডেস্ক :
হারের পর বাংলাদেশ ক্রিকেটে একটাই পরিচিত কথা শোনা যায়। ঘুরেফিরে সেই কথার আগে পরে যুক্ত হয় নতুন কিছু মাত্রা কিংবা অনুষঙ্গ। ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাই হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। লজ্জায় ডোবার পর সেই একই কথা শোনা গেল তার মুখেও। গত বুধবার চট্টগ্রামের সাগরিকায় দ্বিতীয় টেস্ট হেরে শান্ত বলেছেন, ‘খেলতে খেলতে হয়তো জয়ের অভ্যাসটা চলে আসবে। এখানে যারা আছে প্রত্যেকের ইচ্ছাটা আছে, আগ্রহ আছে কীভাবে আরো ভালো ক্রিকেটটা খেলা যায়।’ ২০০০ সাল থেকে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ। সেখান থেকে এখনো জয়ের অভ্যাসটা করতে পারেনি টাইগার বাহিনী।
প্রায় দুই যুগ পার হতে চলেছে, এখনো যদি জয়ের অভ্যাসটা গড়ে না ওঠে, তাহলে কবে গড়ে উঠবে? বাংলাদেশ অভ্যাস গড়তে না পারলেও শ্রীলঙ্কার বেশ ভালোভাবেই রয়েছে এই অভ্যাস। যদিও দলটি দীর্ঘদিন ধরে এই ফরম্যাটে খেলে আসছে। টাইগার বাহিনীর শুরু করার দুই দশক আগে থেকে তাদের পথচলা শুরু হয়েছে। অভিজ্ঞ দল হিসেবে শ্রীলঙ্কার পরিকল্পনাতেও থাকে তার ছোঁয়া। গত বুধবার ম্যাচ শেষে তারই প্রমাণ দিলেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। তিনি বলেছেন, ‘যখন আমরা বাংলাদেশে এসেছি, তখনই জানি এখানে ব্যাটসম্যানরা ভালো করবে। এখানে ব্যাটসম্যানরা সব সময়ই রান পায়।
এখানে যারা খেলেছেন তারা শ্রীলঙ্কার সেরা টেস্ট খেলোয়াড়। তারা সেরা বলেই এখানে খেলতে পারছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে তারা কয়েক মাস ধরে ভালো পারফর্ম করে আসছে। আমরা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, খেলার প্রতি ভালোভাবে মনোযোগ রেখেছিলাম। দিনশেষে তার ফল পেয়েছি। অনুশীলনে আমরা প্রতিটা বিষয়ে যথেষ্ট পরিশ্রম করেছি।’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পুরো টেস্ট সিরিজ জুড়ে বাজে ব্যাটিংয়ের নজির গড়েছে বাংলাদেশ। এই বিষয়ে শান্ত বলেছেন, ‘পুরো সিরিজে আমরা ভালো ব্যাটিং করিনি। অজুহাত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অনেক কথা বলা যেতে পারে। কিন্তু দল হিসেবে আমরা দুই ম্যাচের চার ইনিংসে ভালো ব্যাটিং করিনি।’ বাংলাদেশের এমন ধবলধোলাইয়ের পেছনে আরেকটি কারণ ছিল বাজে ফিল্ডিং ও ক্যাচ মিসের ঘটনা।
বিশেষ করে একের পর এক ক্যাচ মিস করায় লঙ্কানদের সামনে বড় বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেগুলো কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে লায়নরা। এই বিষয়ে শান্তর কাছে কোনো ব্যাখ্যা নেই। তিনি বলেছেন, ‘সবাই যথেষ্ট অনুশীলন করেছে। অনুশীলনে সবাই প্রত্যেকটা ক্যাচও নেয়। কিন্তু ম্যাচে এমন কেন হয়েছে তার উত্তর নেই। তবে ফিল্ডিংয়ের প্রস্তুতির কথা যদি বলি, তাহলে বলব সবাই প্রস্তুত ছিল। কিন্তু ক্যাচগুলো আমরা নিতে পারিনি।’ বিপিএলের পরই শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকে ছুটি নিয়েছিলেন বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজের না থাকলেও টেস্টের সময়ে দলে ফেরার বিষয়ে জানা যায়। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় টেস্টের আগেই ছুটি বাতিল করে দলে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
তবে তিনি দলে থেকেও কাজের কাজটি করতে পারেননি। যদিও সাকিব যো দেওয়ার পর দলের মধ্যে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল। কিন্তু মাঠে তার বাস্তবায়ন হয়নি। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে। শান্ত বলেছেন, ‘উনি অনেক দিন পর খেলার পরও আমার কাছে মনে হয়নি যে ৩৭ বছর বয়সের একটা মানুষ এসে খেলতেছে বা এক বছর পর একটা টেস্ট খেলতেছে। প্রথম ইনিংসে ৩৭ ওভার বল করে তিন উইকেট নিয়েছেন। ব্যাটিংটা করেছেন দ্বিতীয় ইনিংসে। যতটুকু আশা করেছিলাম তার কাছ থেকে বেশি পেয়েছি।’ দলে যোগ দেওয়ার বিষয়ে বলেছেন, ‘আমরা আগে থেকে জানতাম যে উনি দ্বিতীয় টেস্টটা খেলবেন। আমি বেশ আগে থেকেই জানতাম।’ বিপিএলের আগে থেকেই ব্যাটিংয়ের সমস্যায় ভুগেছেন সাকিব। শেষদিকে কিছুটা ঠিক হলেও মাথা ও চোখের অবস্থান নিয়ে বেশ কষ্ট করেছেন।
শ্রীলঙ্কা টেস্টেও তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ভারত বিশ্বকাপ থেকে বয়ে আনা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের টাইমড আউট নতুন অনুষঙ্গ পেয়েছিল এই সিরিজে। উদযাপনেও এসেছে টাইমড আউটের ঘটনা। হয়েছে হেলমেট নিয়ে ব্যতিক্রমী উদযাপন। আগে ছিল নাগিন ড্যান্স উদযাপন। তাতে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা লড়াইয়ে বাড়তি উন্মাদনা দিয়েছে এই উদযাপন। ক্রিকেটে এর নাম হয়েছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দ্বৈরথ। এবার জুনে অনুষ্ঠিত হওয়া আরেকটি বিশ্বকাপে এই দ্বৈরথ দেখা যাবে কি না, এমন প্রশ্নে লঙ্কান অধিনায়ক ধনঞ্জয়া বলেছেন, ‘আমি জানি না। আমাদের মধ্যে কোনো দ্বৈরথ নেই। এটা কেবল দুটি দেশের মধ্যকার খেলা। আর আমি আগেও বলেছি খেলার সময়ে শক্ত থাকা উচিত এবং মনোবল ধরে রাখাটা ভালো। সবার ক্ষেত্রেই এটা ঘটতে পারে। এটা শুধু বাংলাদেশের বিপক্ষে নয়, যে কোনো জায়গায় ঘটতে পারে।’
আরও পড়ুন
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু
নেপালে ভয়াবহ বন্যা, ভূমিধসে মৃত্যু বেড়ে ১৯২