জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
সৌদি আরবে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হওয়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার নাজমা বেগম (২৮) অবশেষে দেশে ফিরলেন। শরীরের বিভিন্ন ক্ষত নিয়ে দেশে ফিরে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন তিনি। শারীরিক ও মানসিক বিপর্যস্ত নাজমা বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নাজমাকে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সেলাই মেশিনসহ অন্যান্য সহযোগিতা করা হবে বলে জানালেন ইউএনও মাহমুদুর রহমান খোন্দকার।
এর আগে গত সপ্তাহে “সৌদিতে নির্যাতিত নারীর দেশে ফেরার আকুতি শিরোনামে” বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের প্রচেষ্ঠায় গত ২ ফেব্রুয়ারি নাজমা ফিরেন মায়ের কাছে।
নাজমা কুলাউড়া পৌরসভার দক্ষিণ চাতলগাঁও গ্রামের মো. আলমের স্ত্রী। নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে নাজমা বার বার মূর্চা যান এই প্রতিবেদকের কাছে। নাজমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে নির্যাতনের ক্ষত চিহ্ন। তিনি জানান, কুলাউড়া পৌরসভার জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা সিতার মিয়া (৫৫) নামে এক দালাল তাকে মোটা অংকের বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট ঢাকার ফকিরাপুলে অবস্থিত ইস্টার্ন ট্রাভেলসের মাধ্যমে সৌদিআরব পাঠায়। সেখানে যাওয়ার পর তাঁর ওপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। নির্যাতনের বিষয়টি নাজমা তার মাকে জানালে মেয়েকে ফিরে পেতে তার মাতা রাবিয়া বেগম অনেকটা নিরুপায় হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুর রহমান খোন্দকার ও থানার ওসি মোঃ আব্দুছ ছালেকের কাছে গিয়ে কাছে দ্বারস্থ হন। এ ঘটনায় রাবিয়া বেগম বাদী হয়ে গত ২১ জানুয়ারী সিতার মিয়াকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ওসি নাজমাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করেন।
নাজমা বলেন, সৌদিতে তাকে গৃহকর্মীর কাজ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর নির্যাতনের মুখে পড়তে হয় তাকে। আরবিরা বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দিলে তা না রাখলে তার উপর চালানো হত পাশবিক নির্যাতন। এমনকি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এসির তার দিয়ে তার শরীরে করা হতো নির্মম আঘাত। তাদের নির্যাতনে আমি এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছি। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছি।
নাজমার মা রাবেয়া বেগম বলেন, আমার মেয়ের বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রশাসন সিতার মিয়াকে ডেকে নিয়ে চাপ সৃষ্টি করলে আমার মেয়ে দেশে ফিরে। আমি ইউএনও, থানার ওসি এবং সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
তবে অভিযুক্ত সিতার মিয়া বলেন, নাজমাকে সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য তিনি ঢাকার ইস্টার্ণ ট্রাভেল্সের সাথে যোগাযোগ করতে বলেছিলেন। পরে সেই ট্রাভেল্সের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাকে সৌদিতে পাঠানো হয়েছে। নির্যাতনের বিষয়টি জানার পর ট্রাভেল্স কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সৌদিতে থাকা নাজমাকে প্রশাসনের তৎপরতায় দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আব্দুছ ছালেক বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই নাজমাকে দেশে ফেরত আনতে সিতার মিয়াকে থানায় ডেকে এনে শাসানো হয়। পরে দশ দিনের ভিতরে নাজমাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, নির্যাতিতা নারীর মাতা প্রথমে আমার অফিসে এসে কেঁদে কেঁদে আমাকে বিষয়টি জানান। পরে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালককে বিষয়টি অবগত করা হয়। পরবর্তীতে যার মাধ্যমে নির্যাতিত ওই নারী সৌদিতে গিয়েছিলেন তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়। এখন ওই নির্যাতিতা নারীকে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি সেলাই মেশিনসহ অন্যান্য সহযোগিতা করা হবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি