নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর :
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ১০০% পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ কর্মসূচি রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের জীবনে নতুন আলো দিয়েছে।জালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকদের নতুন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ১০০% পরিবেশ বান্ধব সৌরবিদ্যুৎ এবং বৃষ্টির পানি সংগ্রহের মাধ্যমে ড্র কূপ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে নামমাত্র মূল্যে সেচ ব্যবস্থা চালু করেছে। লাভবান কৃষকদের উৎপাদন খরচ অনেকাংশে কমেছে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিএমডিএ সূত্র জানায়, বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন খরচ অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় সাশ্রয়ী ও স্বল্প খরচে বিকল্প সেচ সুবিধা চালুর লক্ষ্যে রংপুর অঞ্চলে সোলারের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে সেচ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। কৃষক হিসেবে শক্তি এবং পরিবেশবান্ধব। ফলে কৃষকদের মধ্যে শান্তি ফিরে এসেছে। রংপুর অঞ্চলে ৫০টি পরিবেশবান্ধব সৌরশক্তি চালিত ড্র কূপ স্থাপনের একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে যাতে সৌরশক্তি চালিত ড্র কূপ স্থাপনের মাধ্যমে স্বল্প পানি-নিবিড় ফসল উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে রংপুর অঞ্চলের ৫টি জেলায় ৩৪টি ড্র ওয়েল স্থাপন করা হয়েছে।
এর মধ্যে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় ৬, পীরগঞ্জে ৪, সদর উপজেলায় ৩, বদরগঞ্জে ২ ও পীরগাছা ও তারাগঞ্জ ১ জন। নীলফামারী জেলার সদর উপজেলায় ৩টি এবং সৈয়দপুর ও ডোমার উপজেলায় ১টি করে। কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায় ২. লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলায় ২টি এবং হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় ১টি করে। গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাপুর উপজেলায় ইতিমধ্যে ২টি সৌরশক্তি চালিত ওয়াাটার হিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অবশিষ্ট ড্র ওয়েল চলতি অর্থ বছরের আগামী জুনের মধ্যে ইনস্টল করা হবে। ফলে কৃষকরা নামমাত্র মূল্যে জমিতে সেচ দিতে পারছেন। এতে একদিকে কৃষকের ফসলের উৎপাদন খরচ অনেক কমে যায় অন্যদিকে মুনাফাও বাড়বে। অন্যদিকে ভূ-পৃষ্ঠের পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে। বিএমডিএর উদ্যোগে এ কর্মসূচির আওতায় জেলার ৭০০ বিঘার বেশি জমি সেচের আওতায় আনা হয়েছে। এতে লাভবান হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি সবজি চাষি। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলের কৃষকদের কৃষি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক আয় বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলার বিখ্যাত মিঠাপুকুর উপজেলায় সবজি চাষের জন্য চারটি ড্র ওয়েল নির্মাণ করা হয়েছে। .
এ উপজেলার লাভবান কৃষক আশরাফ হোসেন জানান, গত মৌসুমে তার ৬০ শতাংশ জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছিল। ড্র কূপ নির্মাণের আগে একবার সেচ দিতে খরচ হতো ৮০০ টাকা। তবে তিনি মাত্র দুইশত টাকা ব্যয় ড্র ওয়েল ব্যবহার করে দুবার সেচ দেন।ড্র ওয়েল অপারেটর বেলাল জানান, এ পদ্ধতিতে সেচ সুবিধা পাওয়ার পর এক একর শিম তিনবার সেচ দিতে খরচ হয় ৪০০ টাকা। আগে খরচ হতো টাকা। একবার সেচ দিতে ৬,০০০ টাকা। ওই অনুপাতে মোট খরচ হয়েছে ১ হাজার ৮শ’ টাকা। এখানে সাশ্রয় হয়েছে ১ হাজার ২শ’ টাকা।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ইআইএআরপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান খান জানান, এ কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি কূপ ১২০ ফুট গভীরে ‘সাবমারসিবল পাম্প’ এবং ৮৪টি আরসিসি রিং স্থাপন করা হয়েছে ৬২ ফুট নিচে। আমরা হব. প্রতিটি ড্র কূপ ৫ কড এর ৮টি সোলার প্যানেলের সাহায্যে পরিচালিত হয়। ভূপৃষ্ঠের পানি এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীনে সৌর চালিত পাম্প থেকে পানি সংরক্ষণের জন্য একটি টাওয়ারে একটি ৩০০০ লিটার ট্যাঙ্ক স্থাপন করা হয়েছে।
একটি কূপের সাহায্যে ২৫ বিঘা জমি সেচের জন্য ডিজাইন করা হলেও ব্যাপক চাহিদার কারণে কমান্ড এলাকার কৃষকরা এই জমিতে বেশি সেচ দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। সৌরবিদ্যুৎ ও রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেমের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করায় ড্র কূপের সেচ ব্যবস্থা ১০০% পরিবেশবান্ধব হয়েছে। এতে লাভবান কৃষকরা ফসল উৎপাদনের খরচ কমিয়েছে এবং লাভ অনেক বেড়েছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি