অনলাইন ডেস্ক :
স্থানীয় উৎস থেকেই গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে চাচ্ছে পেট্রোবাংলা। ওই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কয়েকটি কূপের সংস্কার কাজ (ওয়ার্কওভার) শেষ হয়েছে। আরো কিছু কূপের সংস্কার চলছে। তাছাড়া আরো প্রায় দেড় ডজন কূপ নতুন করে খনন করা হচ্ছে। আর ওসব উদ্যোগ সফল হলে আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ জাতীয় গ্রিডে স্থানীয় উৎস থেকে আরো অন্তত ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। সেক্ষেত্রে স্পট এলএনজির চাহিদার সিংহভাগ স্থানীয় উৎস থেকেই পূরণ করা সম্ভব হবে। পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। পেট্রোবাংলা এবং বাপেক্স সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পেট্রোবাংলা বিগত কয়েক মাসে ৪/৫টি কূপের সংস্কার করেছে। আর তাতে জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের দৈনিক সরবরাহ ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। আরো কয়েকটি কূপের সংস্কার চলছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স) নতুন করে ডজনখানেক কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে। ওই কূপগুলোর খনন কার্যক্রম শেষ হলে আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ জাতীয় গ্রিডে আরো ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস যুক্ত হবে। সব মিলিয়ে চলমান সংস্কারকাজ ও নতুন করে কূপ খননের কাজ শেষ হলে জাতীয় গ্রিডে স্থানীয় উৎস থেকে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ বাড়বে।
সূত্র জানায়, অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় জ্বালানি বিভাগ স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ রেখেছে। ফলে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমেছে। জাতীয় গ্রিডে স্পট এলএনজি থেকে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হওয়ার কথা থাকলেও তা কখনোই ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুটের ওপরে ওঠেনি। বর্তমানে পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই কমে আসবে। একই সঙ্গে পেট্রোবাংলার আর্থিক চাপও অনেকটাই কমে যাবে। বর্তমান বাজারমূল্য হিসাব করলে স্পট মার্কেট থেকে প্রতি কার্গো এলএনজি কিনতে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন পড়বে। একেকটি কার্গোতে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের মতো এলএনজি থাকে। জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হলে তা চলে ১৫-১৬ দিন। অর্থাৎ দৈনিক গড়ে ১৫০-২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। স্পট থেকে এলএনজি আমদানি করে তা জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হলে দৈনিক অন্তত ১২০ কোটি টাকার প্রয়োজন হতো। স্পট এলএনজির দৈনিক ওই চাহিদা স্থানীয় উৎস থেকে মেটানো গেলে পেট্রোবাংলার ১২০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এলএনজি আমদানি ব্যয় মেটাতে পেট্রোবাংলার গত অর্থবছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। পেট্রোবাংলাকে নিজস্ব অর্থায়ন, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ), এনার্জি সিকিউরিটি ফান্ড ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ঋণ নিয়ে জ¦ালানি পণ্যটি আমদানি করতে হয়েছে। ওই পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটি এখন ঋণ না নিয়ে তুলনামূলক কম অর্থ বিনিয়োগের ভিত্তিতে বাড়তি গ্যাস উত্তোলনের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথে হাঁটতে চাইছে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে বাপেক্সের অধীনে ১২টি কূপের খনন ও ওয়ার্কওভারের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তার বাইরে পেট্রোবাংলার অধীনে দুটি অনুসন্ধান ও একটি উন্নয়ন কূপ খনন করবে জ¦ালানি খাতের রুশ প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম। একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করবে চীনা কোম্পানি সিনোপ্যাক। আগামী এক বছরের মধ্যে শুধু ওই ১৬ কূপ থেকেই মোট ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। তাছাড়া পেট্রোবাংলা ইতোমধ্যে যে কূপগুলোর সংস্কার কার্যক্রম শেষ করেছে সেগুলো থেকে যুক্ত হচ্ছে আরো ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। বাকি যেগুলোর সংস্কার চলমান রয়েছে সেগুলো থেকে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক আরো ৬০-৭০ মিলিয়ন ঘনফুট যুক্ত হবে।
এদিকে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধান নিয়ে আরো অনেক আগেই এমন নীতির প্রয়োগ জরুরি ছিল। কিন্তু নানা ধরনের প্রক্ষেপন, প্রাক্কলন এবং সমীক্ষা থাকা সত্ত্বেও গ্যাস অনুসন্ধানে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সময়মতো ওসব পদক্ষেপ নেয়া হলে এখনকার জ¦ালানি সংকট এতোটা গভীর হতো না। গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে ঢিলেমি করা হয়েছে। গ্যাস পাওয়া যাবে কি যাবে না এমন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থেকে বৃহৎ আকারে কোনো অনুসন্ধানে যাওয়া হয়নি। বরং আমদানির সহজ পথকে বেছে নিতে গিয়ে গ্যাস খাত ভুল পথে পরিচালিত হয়েছে।
অন্যদিকে কূপ খনন ও সংস্কার কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবেই চলবে জানিয়ে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী জানান, দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র এলাকায় যেসব কূপ খনন ও ওয়ার্কওভারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলোর কাজ নির্ধারিত সময়েই শেষ করা হবে। বাপেক্সের রিগ কখন কোথায় কাজ করবে তার একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী এখন থেকে কোনো রিগ বসে থাকবে না। বাপেক্সের গ্যাসকূপ খননে বর্তমানে ৪টি রিগ নিয়োজিত রয়েছে। ওই ৪টি রিগ চলতি বছরের জুলাই থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে পালাক্রমে কাজ করবে। ইতোমধ্যে সেমুতাং ৫ ও ৬ গ্যাসফিল্ডের কাজ গত মাস থেকে শুরু হয়েছে। বাকি রিগগুলোও বিভিন্ন কূপে পর্যায়ক্রমে যুক্ত হবে।
এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বণিক বার্তাকে বলেন, স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম এখন অনেক বেশি। এত উচ্চদামে এলএনজি ক্রয় করার মতো অর্থ পেট্রোবাংলার কাছে নেই। বরং তার বিপরীতে এখন স্থানীয় গ্যাসকূপের দিকে ব্যাপকভাবে জোর দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তার সফলতাও পাওয়া যাচ্ছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত অন্তত ৪/৫টি কূপে ওয়ার্কওভার করে দৈনিক ৩০ মিলিয়ন গ্যাস গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। আশা করা যায় সামনে যেসব কূপ খনন ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলো করা গেলে স্পট এলএনজির ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে বিবিয়ানা, কৈলাসটিলা ও সিলেট গ্যাসফিল্ডের আওতাধীন চার-পাঁচটি কূপের ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে ৩০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে। আরো কিছুর সংস্কার চলছে। তাছাড়া গ্যাসকূপ খননে স্থানীয় কোম্পানি বাপেক্সের পাশাপাশি বিদেশী কোম্পানিও কাজ করছে। তবে বেশির ভাগ কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভারের কাজ করবে বাপেক্স। দেশী-বিদেশী কোম্পানি তৎপরতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৬টি কূপ খনন, উন্নয়ন ও সংস্কারের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ