April 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, April 20th, 2022, 9:33 pm

স্থানীয় উৎস থেকে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

স্থানীয় উৎস থেকে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। সেজন্য বিদ্যমান ও পরিত্যক্ত গ্যাসকূপগুলো সংস্কার করে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং স্থলভাগে অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি বছরই পেট্রোবাংলা এবং বাপেক্সের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং শরীয়তপুরে অনুসন্ধান কূপ খনন করার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের মজুদ রয়েছে বলে সরকারের জরিপ তথ্য রয়েছে। বিশ্ব বাজারে তেল গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকায় এখন ওই এলাকায় গ্যাসের অনুসন্ধানে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স) পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গ্যাস অনুসন্ধান করবে। সেজন্য ইতিমধ্যে ৩টি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উজবেকিস্তানের কোম্পানি এরিয়েল পার্বত্য চট্টগ্রামের ২২এ এবং ২২বি ব্লকে অনুসন্ধান, উন্নয়ন এবং উৎপাদনে বাপেক্সের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছে। তার বাইরে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি ভোলা গ্যাসক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে। এরিয়েল এর আগেও বাংলাদেশে কূপ খনন কাজ করেছে। তাদের একটি ড্রিলিং রিগ (কূপ খনন যন্ত্র) বাংলাদেশে রয়েছে। এ বিষয়ে উজবেকিস্তানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ইতিবাচক বিবেচনার জন্য চিঠি দিয়েছে। তাদের প্রস্তাব নিরীক্ষা এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে মতামত দিতে পেট্রোবাংলা ইতিমধ্যে বাপেক্স ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানিকে (জিটিসিএল) চিঠি দিয়েছে।
সূত্র জানায়, বাপেক্স অনেকগুলো ওয়ার্কওভার কূপ খনন করার কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সালদা গ্যাসক্ষেত্রে একটি পরিত্যক্ত কূপে থাকা অবশিষ্ট গ্যাস উত্তোলন শুরু করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিদিন ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে। কৈলাশটিলার একটি কূপেও অবশিষ্ট গ্যাস পাওয়া গেছে। তা থেকেও দৈনিক ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাবে। বর্তমানে দেশে যে প্রমাণিত মজুদ আছে তাতে ৩-৪ বছরের বেশি চলবে না। সম্ভাব্য মজুদ বিবেচনায় নিলে ১০-১১ বেশি বছরের বেশি যাবে না। এমন প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা যতো দ্রুত সম্ভব স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।
সূত্র আরো জানায়, ঘাটতির কারণে দেশে প্রথমবারের মত শিল্পে গ্যাস রেশনিং বা দিনে চার ঘন্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা শুরু করেছে সরকার। আরও আগে থেকে সিএনজি স্টেশনে দৈনিক ছয় ঘন্টা সরবরাহ বন্ধ চলছে। দৈনিক ৪৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে ৩১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে। কিন্তু বাজেট ঘাটতির কারণে শুধু ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানি করে ওই ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে না। তাছাড়া দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুটের বেশি এলএনজি সরবরাহের অবকাঠামো সক্ষমতাও নেই। আবার দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উন্নয়ন না হওয়ায় দেশজ গ্যাসের জোগান বাড়ানো যাচ্ছে না।
এদিকে স্থানীয় উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ানো বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ইতিমধ্যে যে উন্নয়ন কূপগুলো পরিত্যক্ত বা শেষ হয়ে গেছে সেগুলো থেকে আরো কিছু গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ রয়েছে। এমন প্রায় ৪০-৫০টি কূপ রয়েছে। গ্যাসের দ্রুত সরবরাহ বাড়াতে সেগুলোতে ওয়ার্কওভার বা সংস্কার খনন করা হলে অনেকখানি গ্যাস পাওয়া যাবে। সেগুলোর পাশাপাশি স্থল এবং সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান জোরদার করা জরুরি। কিন্তু সেদিকে প্রকৃতপক্ষে জোর দেয়া হচ্ছে না। এদেশের যে ভূগঠন তাতে স্থলভাগে এখনো গ্যাস পাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সিলেট-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাইরে এখনো তেমন বড় কাজ হয়নি। গত ২০ বছরে মাত্র ২৫টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে। ফরিদপুর-যশোর অঞ্চল এবং নোয়াখালী অঞ্চলে গ্যাস পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যদিকে এ প্রসেেঙ্গ বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, গ্যাসের অনুসন্ধান-উৎপাদন বাড়াতে বাপেক্স অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুইটি ব্লকে গভীর কূপ খননের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিগগিরই শরীয়তপুরেও একটি কূপ খননের কাজ শুরু হবে। তার বাইরে ভোলায় আরো কূপ খনন করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যেই ৪টি অনুসন্ধান কূপ খননের শিডিউল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান জানান, দেশে গ্যাসের চাহিদা বাড়লেও স্থানীয় উৎপাদন কমছে। তাই সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
একই বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সেখানে গতি আনার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানের ব্যাপারে আগ্রহী সংস্থা পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে কাজ চলছে। স্থানীয় গ্যাস পর্যাপ্ত না থাকায় আমদানি বৃদ্ধির বিকল্প নেই। কিন্তু এখন যে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল আছে তাতে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুটের বেশি সরবরাহ করা যাবে না। আমদানি বাড়াতে আরো ভাসমান এলএনজি লাগবে। তাতে প্রা দেড় বছর সময় লাগবে।