November 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, February 16th, 2022, 9:16 pm

স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে গরিবের চাল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সরকার দেশের অতি দরিদ্র পরিবারের খাদ্য সমস্যায় সহায়তা দানে ১০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রি শুরু করে। বিগত ২০১৬ সাল থেকে দেশের ৫০ লাখ মানুষ ওই সুবিধা পাচ্ছেন। বছরের মার্চ-এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর-নভেম্বর ওই পাঁচ মাস ১০ টাকা মূল্যে তালিকাভুক্ত পরিবারগুলোকে মাসে ৩০ কেজি চাল দেয়া হয়। তার মাধ্যমেই গ্রামের দরিদ্র মানুষেরা অভাবের সময়ে কম দামে চাল পায়। কিন্তু সরকার ওই মহৎ উদ্যোগে নানা সমস্যা সৃষ্টি করছে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি। গত বছরের শুরুর দিকে সাড়ে ৩ লাখেরও বেশি ভুয়া কার্ডধারী শনাক্ত করা হয়। মূলত স্থানীয় প্রভাবশালীরাই গরিবের চাল হাতিয়ে নিচ্ছে। ওই অনিয়ম বন্ধে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও তা এখনো বন্ধ হয়নি। খাদ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সচ্ছল আত্মীয়-স্বজনও সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধায় পাওয়া ১০ টাকা কেজি দরের চাল পাচ্ছে। অনেকে ওই চাল তুলে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিক্রি করে দিচ্ছে। কেউবা পুকুরের মাছকে খাওয়াচ্ছে। একজনের পরিচয়পত্র দিয়ে তোলা হচ্ছে অন্যজনের চাল। এমনকি চাল হাতিয়ে নিতে ভূতুড়ে নামও ব্যবহার হচ্ছে। ফলে খাদ্য সহায়তায় সরকার বিশাল ভর্তুকি দিলেও প্রকৃত গরিবরা ওই সুবিধা পাচ্ছে না। আর এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের দাবি, চেয়ারম্যান-মেম্বাররা তালিকা করে থাকে। তবে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ এলে তদন্ত করে তারা ব্যবস্থা নেয়।
সূত্র জানায়, ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার সিংহেশ্বর বাজারে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল ডিলার পয়েন্ট থেকে তুলে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। স্থানীয় ওই বাজারের শহীদুল নামের এক ব্যবসায়ীর ঘরে কয়েক টন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। যে ব্যক্তির ঘরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল পাওয়া গেছে তাকে ও যারা চাল বিক্রি করেছে তাদেরও দোষী সাব্যস্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। মূলত যেখানে সঠিক উপকারভোগীর কাছে কার্ড যায় না সেখানে তারা কার্ড বিক্রি করে দেয়। অনেকেই তা করে। সেজন্যই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড বরাদ্দের বিষয়ে আরো যাচাই-বাছাই হওয়া প্রয়োজন। আর শুধু খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির নয়, সামাজিক নিরাপত্তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যেসব তালিকা স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান-মেম্বাররা করে থাকে সেখানেও সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানরা প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের লোক ঢুকিয়ে দেয়।
সূত্র আরো জানায়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তদারকির দায়িত্ব প্রকৃতপক্ষে উপজেলা প্রশাসনের থাকলেও ইউএনওরা তা করতে পারেন না। তারা দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের দেন। কিন্তু অনেক ট্যাগ অফিসারই এলাকায় থাকে না। আবার অনেক এলাকায় ওই কর্মকর্তারা প্রভাবশালী ডিলার ও চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বিরোধে যেতে চায় না। ফলে প্রকৃত উপকার ভোগীদের সুবিধা পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
এদিকে এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির বিভিন্ন অনিয়মের কথা স্বীকার করে জানান, অ্যানালগ পদ্ধতি থাকায় বিভিন্নভাবে অনেক অনিয়ম হচ্ছিল। এখন ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র করা হয়েছে। তাতে অনেক অনিয়ম কমেছে। চাল বিতরণ প্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ করতে প্রযুক্তিগত উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সফটওয়্যার তৈরির কাজ এগিয়ে গেছে। এখন ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে উপকারভোগীদের তথ্য আপলোড করার মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। আর ওই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে প্রকৃত উপকারভোগী আরো সুনির্দিষ্ট হবে এবং অনিয়ম দূর হবে।