নিজস্ব প্রতিবেদক:
শীতের সবজিতে দেশের বাজার পরিপূর্ণ হলেও রাজধানীতে সবজির দাম আকাশছোঁয়া। এতে সাধারণ ক্রেতাদের দশা নাজেহাল। খরচ বৃদ্ধি ও ঝুঁকির অজুহাতে পণ্য পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে পণ্যের বাজারে। বিশেষ করে সবজির সরবরাহব্যবস্থা বিঘিœত হওয়ায় দাম বেড়েছে ভোক্তা পর্যায়ে। বিপরীতে বগুড়াসহ সবজির মোকামগুলোতে দাম কমে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। এ ছাড়া চাল, ডাল, মাছ, মাংসসহ অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সূত্র জানায়, সবজির পরিবহনগুলো চলমান ধর্মঘটের কারণে ঝুঁকি নিয়ে আসতে চায় না। যারা আসে তারা আগের তুলনায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া নেয়। এতে দূরপাল্লার পরিবহনে পণ্যের খরচ বেড়েছে। বাজারে বিক্রিও হচ্ছে বাড়তি দামে। সবজি ছাড়া অন্যান্য পণ্যের ব্যবসায়ীরা বলছেন, দোকানের চলতি মজুদ দিয়ে দুই থেকে তিন দিন চলা যায়। তাই এখনো দাম সেভাবে বাড়েনি। কিন্তু নতুন পণ্য আনতে গেলে বাড়তি খরচ হবে। তা পণ্যের দামের সঙ্গে যোগ হবে। এতে পণ্যের দাম কেজিপ্রতি কমপক্ষে দু-এক টাকা বাড়বে।
জানা যায়, রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ, মগবাজার, সেগুনবাগিচা, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে আলু, পটোল, টমেটো, গাজর, কাঁচা মরিচসহ বেশির ভাগ সবজির দাম পরিবহন ধর্মঘটের আগের তুলনায় পাঁচ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যে সাইজের ফুলকপি দুইদিন আগে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেগুলো এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপি প্রতিটি আকারভেদে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা একদিন আগেও ৫ থেকে ১০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া, গাজরের কেজি ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মূলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, লাউ ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ো ৬০ টাকা ও করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। কাঁচামরিচ বাজারভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চড়া পেঁয়াজের দামও। দুইদিন আগে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫০-৫৫ টাকায় পাওয়া গেছে। একই মানের পেঁয়াজ এখন ৬০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, রাজধানীতে সবজি বেশি আসে নরসিংদী, বগুড়া, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকে। আগে যে ট্রাকের ভাড়া ছিল ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা, এখন সে ট্রাকের ভাড়া সাড়ে ১৩ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। সেই বাড়তি ভাড়া পণ্যের সঙ্গে যোগ করেই পাইকারি বাজারে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। অনেক ব্যাপারী লোকসানের ভয়ে সবজি আনেন না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজি পচনশীল পণ্য হওয়ায় পরিবহনভাড়া ও দাম যতই বেশি হোক, পণ্য আসবেই। তাই সব ধরনের সবজিই আসছে। তবে খরচ বেশি লাগছে বলে কম আসছে। দামও বাড়ছে।
জানা যায়, দুই দিন আগে পাইকারিতে আলু ১৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন কেজি ১৭ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনো দোকানে চলতি মজুদ শেষ হয়নি। তাই আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। নতুন করে যাঁরা পণ্য আনছেন তাঁদের বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হবে।
এদিকে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের ভয়ে অনেক ব্যাপারী দেশের মোকামগুলো থেকে সবজি নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে আসছেন না; যার প্রভাব পড়েছে কৃষকের দামে। কৃষক বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্য মূল্য থেকে।
দেশের বিভিন্ন এলাকা সূত্রে জানা যায়, যশোরের কেশবপুরে এক দিনের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। শনিবার বিকেলে শহরের পুরনো গোহাটা কাঁচাবাজারে খুচরা ব্যবসায়ীরা ১৪০ টাকা দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছেন।
বগুড়ার পরিস্থিতি অবশ্য উল্টো। সবজির পর্যাপ্ত যোগান এবং পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে সবজি স্থানান্তরিত না হওয়ায় দাম অনেক কমে এসেছে সেখানে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। জানা যায়, মৌসুমের শুরুর এই সময়টায় সাধারণত হাটে কিংবা জমি থেকে বিক্রি করলে ফুলকপি ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি করা যায়। শনিবার ফুলকপির কেজি ছিল ১০ টাকা। তা-ও বিক্রির জন্য বসে থাকতে হয়েছে সারা দিন। আর বেগুন হাটে ১৮-২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজার ভালো থাকলে এর দাম ৩২-৩৫ টাকা ছাড়িয়ে যেত। মহাস্থানের চ-ীহারার মইনউদ্দিন নামের একজন কৃষক বলেন, অন্য ছোট কৃষকদের অবস্থা আরো খারাপ। তাঁদের অনেকেই কয়েকজন মিলে একটি ট্রাক ভাড়া করে সবজি পাঠাতেন ঢাকা ও অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে। কিন্তু ট্রাকের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তাঁরা।
সূত্র জানায়, বগুড়ার মহাস্থান হাটে প্রচুর পরিমাণ সবজির সরবরাহ রয়েছে। ব্যাপারীরা কাক্সিক্ষত দাম না বলায় বেশির ভাগ কৃষক সবজি বিক্রি করছেন না।
মেহেরপুর অঞ্ছলেও একই চিত্র বিরাজমান। মেহেরপুরের কায়েম কাটা, শহরের কাঁচাবাজার, উজুলপুর ব্রিজ, কুলবাড়িয়া, বন্দর, মহাজনপুর, বারাদি, সাহারবাটি চারচারা, ভাঙবাড়িসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সবজিবোঝাই ট্রাক প্রতিদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে যায়। আগে যে ট্রাকের ভাড়া ছিল ৩০ হাজার টাকা, তা এখন ৪৫ হাজার টাকা। এতে মেহেরপুর থেকে সবজি সরবরাহ কমে গেছে। ধর্মঘটের খবর পেয়ে চাষিরাও সবজি কাটা কমিয়েছেন অর্ধেক।
জানা যায়। দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসা করছেন এমন ব্যবসায়ীরাও ধর্মঘটের কারণে সবজি কিনতে ভয় পাচ্ছেন। কেননা দ্রুত বিক্রি করতে না পারলে সবজি পচে যাওয়ার একটা শঙ্কা কাজ করছে তাদের ভেতর।
উল্লেখ্য, মাছের বাজারেও আগুন লেগেছে। জানা যায়, আড়তে যেসব গাড়ি দিয়ে মাছ আনা হয়, তারা এখন প্রতি কার্টন এক হাজার টাকা করে ভাড়া নেয়। এটি ২০০ টাকা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে মাছের দাম আরও বৃদ্ধি পেতে চলেছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি