April 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, November 20th, 2022, 10:03 pm

স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম কমলেও অর্থের কারণে কিনতে পারছে না পেট্রোবাংলা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম স্পট মার্কেটে কমছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের কারণে পেট্রোবাংলা স্পট মার্কেট থেকে কম দামে এলএনজি কিনতে পারছে না। গত আড়াই মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম ৬৩ শতাংশেরও বেশি কমেছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ২৫ ডলার ৮৮ সেন্টে নেমে এসেছে। আগামী মাস নাগাদ পণ্যটির দাম আরো কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরও স্পট মার্কেট থেকে পণ্যটি ক্রয়ের কোনো পরিকল্পনা পেট্রোবাংলার নেই। মূলত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার মতো প্রয়োজনীয় অর্থ পেট্রোবাংলার কাছে নেই। আর অর্থ বিভাগের কাছ থেকে পেট্রোবাংলা যে টাকা পাচ্ছে তা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে আনা এলএনজির মূল্য পরিশোধেই ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটির বাড়তি কোনো অর্থ হাতে থাকছে না। পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত মে মাসে পেট্রোবাংলা স্পট মার্কেট থেকে সর্বশেষ এলএনজি কিনেছিল। ওই সময় প্রতি এমএমবিটিইউ কিনতে ২৬ ডলার ৪ সেন্ট ব্যয় হয়েছিল। তখন ওই দরে সিঙ্গাপুরের ভিটল এনার্জির কাছ থেকে এক কার্গো এলএনজি কিনতে পেট্রোবাংলার ৯০৯ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল। তারপর বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ১৫০-২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে যায়। চলতি বছরের ২৫ আগস্ট বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চে দাঁড়ায়। ওইদিন বাজার প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ৬৯ ডলার ৯৬ সেন্টে উঠে। এখন তা ২৫ ডলার ৮৮ সেন্টে নেমে এসেছে। ওই হিসেবে গত আড়াই মাসে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম ৬৩ শতাংশের কিছু বেশি কমেছে। কিন্তু অর্থ ও ডলার সংকটের কারণে পেট্রোবাংলা এখনই এলএনজির বাজার নিম্নমুখিতার সুবিধা নিতে পারছে না।
সূত্র জানায়, এলএনজির দাম বর্তমানে স্পট মার্কেটে গত মে মাসের পর্যায়ের চেয়েও নিচে নেমেছে। কিন্তুপেট্রোবাংলার স্পট থেকে এখন পণ্যটি কেনার কোনো পরিকল্পনা নেই। ব্যবসায়ীরা বাড়তি দাম দিয়ে গ্যাস কিনতে চাইলেও নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে কোনো আশ্বাস দিতে পারেনি বরং বারবার স্থানীয় উৎস থেকে সংকট সামাল দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চেয়ে সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে ব্যবসায়ীরা এক সেমিনারের আয়োজন করে। সেখানে শিল্পোদ্যোক্তারা গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর দাবি তুলে। সেজন্য তারা প্রয়োজনে এলএনজি আমদানিতে বেশি দাম দিতেও প্রস্তুত বলেও জানানো হয়। কিন্তু ডলার ও রিজার্ভের বর্তমান পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে আমদানি ছাড়াই স্থানীয় উৎস থেকে সরবরাহের সংস্থান করার আশ্বাস দেয় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা।
সূত্র আরো জানায়, এলএনজির দাম কমতির দিকে ফিউচার মার্কেটেও। উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় ডিসেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ২৬ ডলারে নেমে এসেছে। এক সপ্তাহে এলএনজির দাম কমেছে প্রতি এমএমবিটিইউতে ২ ডলার বা ৭ শতাংশ। তাছাড়া ডিসেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতেই ইউরোপমুখী কার্গোয় পরিবাহিত এলএনজিতে এমএমবিটিইউপ্রতি ১১ ডলার কমিশন দিয়ে ২১ ডলারে বেচাকেনা হচ্ছে। তবে দাম আরো সহনীয় পর্যায়ে এলে এলএনজি কেনার চিন্তা-ভাবনা করা হবে বলে পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। মূলত কভিড মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলার সংকটের কারণে স্পট থেকে এলএনজি কেনার বিষয়গুলো জটিল হয়ে উঠেছে। তবে কাতার থেকে দেশে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় সবচেয়ে বেশি এলএনজি আনা হয়। কিন্তু বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে চুক্তির অতিরিক্ত এলএনজি সরবরাহ নিয়ে দেশটির সঙ্গে এখনো কোনো চুক্তি হয়নি। আর ইতোমধ্যে কাতার আগামী ২০২৫ সালের আগ পর্যন্ত চুক্তিতে প্রতিশ্রুত পরিমাণের বাইরে অতিরিক্ত কোনো এলএনজি সরবরাহ করা সম্ভব নয় পেট্রোবাংলাকে জানিয়ে দিয়েছে। চলতি বছরের জুনে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বাড়তে থাকে এবং জুলাইয়ের শুরুতেই প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ৩৭ ডলারে উঠে যায়। আগস্টে স্পট মার্কেটে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ৬৯ ডলার ৯৬ সেন্টে উঠে যায়।
এদিকে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থানীয় গ্যাসের সংকট এবং শিল্পে গ্যাস সঙ্কটের বিষয় বিবেচনা করে পেট্রোবাংলা দু-একটি কার্গো কিনতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থাটির আছে কিনা সেটিও বিবেচ্য বিষয়। তবে দাম কমায় সরবরাহ বাড়ানোও প্রয়োজন। পেট্রোবাংলা বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে।
অন্যদিকে সার্বিক বিষয়ে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জানান, স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম ক্রমবর্ধমানভাবে কমে যাচ্ছে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরও পেট্রোবাংলা পর্যবেক্ষণ করবে। আর এলএনজির দাম সহনীয় ও যৌক্তিক পর্যায়ে এলে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে। ারপর সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে ওই অনুযায়ী পেট্রোবাংলা কাজ করবে।