নিজস্ব প্রতিবেদক:
মেডিকেল বর্জ্য দেশের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ওসব বর্জ্যরে মাধ্যমে বিভিন্ন জটিল রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর সংস্পর্শে আসার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির ব্যবহৃত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামাদি থেকেও ওই ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যবহৃত পিপিই, হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল মাস্ক নির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থাপনা ছাড়াই সাধারণ বর্জ্যরে সঙ্গে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। ফলে দিন দিন স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে। স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা সংক্রমণের পর থেকে দেশে প্রা ১৪ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে রাজধানী ঢাকাতে ১ হাজার ৩১৪ টন সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস বর্জ্য ও ৪৪৭ টন সার্জিক্যাল মাস্কের বর্জ্য তৈরি হয়েছে। ওই ধরনের বর্জ্যরে সঠিক ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা না থাকায় পরিবেশের ক্ষতিসাধন ও পরিচ্ছন্ন কর্মীসহ দেশের জনগণ ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০২০ সালের অক্টোবরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক জানিয়েছিল, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসা বর্জ্যরে মাত্র ৬ দশমিক ৬ ভাগের সঠিক ব্যবস্থাপনা হয়। বাকি ৯৩ দশমিক ৪ ভাগ বর্জ্যই সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় নেই। ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি পরিচালিত কোভিড-১৯ মহামারিকালে কার্যকর মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক গবেষণায় ওই তথ্য উঠে আসে। ওই গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, সারাদেশে চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ২৪৮ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মাত্র ৩৫ টন (১৪ দশমিক ১ শতাংশ) সঠিক নিয়মে ব্যবস্থাপনার আওতায় ছিল। তার অধিকাংশই আবার রাজধানী ঢাকা শহরে সীমাবদ্ধ এবং মাত্র একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বর্জ্য অপসারণ ও শোধন করা হয়। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর বর্জ্য আলাদা করার ব্যবস্থাপনা থাকলেও তা বিনষ্ট বা শোধন করার নিজস্ব কোনও ব্যবস্থাপনা নেই।
সূত্র জানায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ২০০৮ সালে আইন পাস হলেও তার কার্যকারিতা খুবই কম। ফলে হাসপাতালের মেডিক্যাল বর্জ্য এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারি সংগঠন প্রিজম বাংলাদেশ এদেশে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করে। সংস্থাটি করোনাকালে গত দুই বছরে রাজধানী ঢাকার কোভিড ডেডিকেটেড ২২টি হাসপাতালের মেডিক্যাল বর্জ্য নিয়ে কাজ করেছে। মহামারির প্রথম বছরে অর্থ্যাৎ ২০২০ সালে ওই হাসপাতালগুলো থেকে প্রতিদিন ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ কেজি শুধু কোভিড বর্জ্যই সংগ্রহ করা হয়। তবে দিনে দিনে তার পরিমাণ কমে আসতে থাকে। একপর্যায়ে ৮০০ থেকে ৯০০ কেজি আর বর্তমানে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ কেজি মেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ করছে প্রিজম।
সূত্র আরো জানায়, যারা বর্জ্য নিয়ে কাজ করে তারা যক্ষা, চর্মরোগসহ নানান অসুখে ভুগছে। পাশাপাশি তারা নিউমোনিয়া, ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস বি এবং সি ব্রংকিউলাইটিস, অ্যাজমা, হাঁপানিসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতেও রয়েছে। এমনকি সাধারণ মানুষও ওই বর্জ্য অব্যবস্থাপনার ঝুঁকিতে রয়েছে। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও তা চরমভাবে অবহেলিত। যথাযথভাবে তা ব্যবস্থাপনা না করা হলে তা থেকে সাধারণ মানুষের জন্য অসুখ সংক্রমণের একট পথ তৈরি হয়। আর চিকিৎসা বর্জ্যরে জন্য বিশ্বজুড়েই একটা প্রটোকল রয়েছে।
এদিকে এদেশে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক খোন্দকার আনিসুর রহমান জানান, করোনার শুরু থেকে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভসসহ নানা ধরনের বর্জ্য কিচেন ওয়েস্টেজের সঙ্গে মিলে গেছে। যা মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে। এ নিয়ে দুই সিটি করপোরেশনকে থেকে বাড়ি বাড়ি সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম হাতে নেয়ার জন্য বলা হয়েছিল। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নিলেও উত্তর সিটি করপোরেশন কিছু কাজ করেছে।
অন্যদিকে মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা জানা, কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। মেডিকেল বর্জ্য যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার আওতায় না আসে তাহলে ভবিষ্যতে মারাত্মক স্বাস্থ্যগত ও পরিবেশগত ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম