April 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, February 8th, 2022, 8:36 pm

সয়াবিন তেলের মর্যাদা বাড়ছে, বাড়ছে মানুষেরও ভোগান্তি

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশের নিত্যপণ্যের বাজার যেন স্থিতিশীলতা ফিরে পাচ্ছে না কোনভাবেই। দফায় দফায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরম মাত্রা ধারণ করছে। নিত্যপণ্যের এই উচ্চমূল্যই এখন হট টপিক হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে। সর্বত্র এই নিয়ে চর্চা, হাহুতাশ চলছে। কিন্তু সরকার নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সফল হচ্ছে না। শীতের মৌসুমেও সবজির দাম চড়া। সয়াবিন তেলের দাম তো বাড়তেই আছে। সর্বশেষ লিটারে আরও ৮ টাকা বাড়াল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন দর অনুযায়ী, বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেল কিনতে লাগবে ১৬৮ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতলে খরচ হবে ৭৯৫ টাকা। এতদিন এক লিটার বোতল ১৬০ টাকায় এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৭৬০ টাকায় পাওয়া যেত।
এ যেন শায়েস্তা খানের বিপরীত যুগ। সয়াবিন তেল কিনতেই হাজার টাকা চলে যাচ্ছে। অথচ খুব বেশি দিন আগের কথা নয় ভোজ্য তেলের দাম ছিল বেশ সহনীয় পর্যায়ে। জানা যায়, চার বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়েছে সয়াবিন তেলের দাম। ২০১৮ সালে নিত্য প্রয়োজনীয় এই পণ্যটির বাজার মূল্য ছিল শতকের নিচে। সেসময় প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন তেল মিলেছে ৮২ থেকে ৮৫ টাকায়। আর চার বছরে ধাপে ধাপে দাম বাড়তে বাড়তে সে দর দাঁড়িয়েছে ১৬৮ টাকায়। অর্থাৎ চার বছরে তেলের দাম হয়েছে দ্বিগুণ।
সূত্র জানায়, বোতলজাত সয়াবিনের পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দামও বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব সফিকুজ্জামান বলেন, খোলা সয়াবিনের লিটারে ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে নতুন দর হবে ১৪৩ টাকা। যদিও এতদিন খোলা সয়াবিনের দাম আনুষ্ঠানিকভাবে ছিল ১৩৬ টাকা। এ ছাড়া পাম তেলের প্রতি লিটারের দাম ছিল ১১৮ টাকা। এখন পাম তেলের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৩ টাকা।
ভোজ্যতেল হিসেবে সয়াবিন তেলের মর্যাদা চরমভাবে ফুলে-ফেঁপে উঠায় অনেকেই এখন বিকল্প তেলের কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। তেলের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে বরাবরই বড় ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের কাঁচামালের দর বৃদ্ধির অজুহাত দিচ্ছেন। সয়াবিনের বিকল্প ভাবতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। কেননা এই তেল এখন সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সাধারণ মানুষ এখন দিশেহারা। তারা জীবন ও জীবিকার তাগিদে ছোট ছোট কাজ করেও জীবন ধারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিশেষ করে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক, রিকশাচালক, টেক্সিচালক থেকে শুরু করে শ্রমজীবী মানুষরা সবচেয়ে বেশি বেকায়দায়। আবার স্বল্প আয়ের মানুষগুলোও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ শহরে ১০ হাজার টাকা মাসিক আয় করেন এমন লোক বেশুমার। তাদের দিনযাপনের কাহিনি খুবই করুণ। এ-বাড়ি ও-বাড়ি কাজ করে যেসব নারীশ্রমিক যার আয়ে পুরো সংসার চলে। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়। বাসা ভাড়া দিয়ে খোরাক জুটিয়ে আয়ের পয়সায় তাদের চলে না। শ্রমজীবী এসব মানুষ সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীরও আয় কমেছে। বেড়েছে ব্যয়ের মাত্রা। এ ব্যয় সামাল দিতে ধারদেনা করে সংসার চালাতে তাদের নাকাল হতে হচ্ছে। এর ওপর মাসাধিককাল ধরে বাজারে সব জিনিসের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আবার সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি তাদের কাছে এক ধরণের অশনি সংকেত বটে।
শুধু তেল নয় বেড়ে গেছে আটা, ময়দা, চাল, ডাল থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় অনেক নিত্যপণ্যের দাম। এমনকি সবজির দামও নাগালের বাইরে। বেড়ে গেছে কাঁচা মরিচের ঝাল। টিসিবির উদ্যোগে তেল, চিনি, ডাল ও পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারের থেকে কম দামে পাওয়ায় টিসিবির ট্রাক ও ওএমএসের দোকানের সামনে তাই সকাল থেকেই লাইন পড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে খোলাবাজারের ট্রাক থেকে চাল ও আটা কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তদের। ৫ কেজি চাল ও ৩ কেজি আটা কিনতে প্রচ- ভিড়ের মধ্যেও লাইনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। অল্প কিছু টাকা সাশ্রয় হবে এ আশায় লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছেন মধ্যবিত্ত এসব মানুষ। টিসিবির পণ্য কিনতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, এটি আমার জন্য অপমানজনক। কিন্তু অন্য কোনো বিকল্প নেই আমার। খাবারের দাম বাড়ার পর থেকে তার পরিবার খাওয়া অর্ধেক করে দিয়েছে। গোশত খাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে।
টিসিবির বিক্রেতারা জানান, আগে ট্রাকসেলে কম দামে নিত্যপণ্য কিনতে আসতেন নিম্নআয়ের মানুষ। বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশাচালক, গাড়িচালক কিংবা গৃহকর্মীরা ভিড় করতো টিসিবির গাড়ির সামনে। তবে এখন সেই লাইনে পণ্য কিনতে মধ্যবিত্তরা ভিড় করছেন, যা তাদের জন্য বাড়তি চাপও বটে। আগে মালামাল বিক্রি কার্যক্রম শেষ করতে তাদের সন্ধ্যা হয়ে যেত। এখন ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে সব শেষ হয়ে যায়। টিসিবির বরাদ্দ চাহিদার চেয়ে অনেক কম বলে অনেককে না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।
কিন্তু টিসিবির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে বরাদ্দ আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে টিসিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ভোক্তাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে টিসিবি এখন ১০ থেকে ১২ শতাংশ পণ্য সরবরাহ করছে, যা আগে এটি ছিল মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ। চাহিদা বাড়ায় ট্রাকসেল বাড়ানো হয়েছে। টিসিবির পণ্য এখন সারা বছরই বিক্রি হচ্ছে। গত এক বছরে প্রতি মাসেই বিক্রি হয়েছে। পণ্য বিক্রির পরিমাণও পর্যায়ক্রমে বাড়বে।
কিন্তু টিসিবির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে বরাদ্দ আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে টিসিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ভোক্তাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে টিসিবি এখন ১০ থেকে ১২ শতাংশ পণ্য সরবরাহ করছে, যা আগে এটি ছিল মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ। চাহিদা বাড়ায় ট্রাকসেল বাড়ানো হয়েছে। টিসিবির পণ্য এখন সারা বছরই বিক্রি হচ্ছে। গত এক বছরে প্রতি মাসেই বিক্রি হয়েছে। পণ্য বিক্রির পরিমাণও পর্যায়ক্রমে বাড়বে।
অস্থিতিশীল বাজারে একটু সুবাতাস আনতে টিসিবির পণ্যসরবরাহ আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা টিসিবির পণ্য চলমান বাজার পণ্যের থেকে অনেক কম দামে বিক্রি হয়, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য উপকারের। জানা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন ‘ট্রাকসেল’ বন্ধ থাকছে। ট্রাকসেলে সাশ্রয়ী মূল্যে তিনটি পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১০০ টাকা এবং মসুর ডাল ও চিনি প্রতি কেজি ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক একটি ট্রাকে ৫০০-৮০০ লিটার তেল, ৪০০-৬০০ কেজি চিনি এবং ৪০০-৬০০ কেজি মসুরের ডাল বরাদ্দ থাকে বলে জানান। একজন দুই কেজির বেশি নিতে পারেন না। যে পরিমাণ পণ্য ট্রাকে থাকে, তা লাইনে দাঁড়ানো সবার জন্য যথেষ্ট নয়। এজন্য অনেককেই ফেরত যেতে হয়।