হবিগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। কালনী ও কুশিয়ারা নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মিনহাজ আহমেদ শোভন জানান, কালনী কুশিয়ারা নদীর ভাটিতে পলিমাটি জমা হওয়ায় ও হাওড় অঞ্চলে বন্যার পানি হ্রাসের পরিমাণ কম হওয়ায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এছাড়া অবিরাম বৃষ্টি ও উজানের ঢলে চলতি মাসে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা করছেন তিনি।
পাউবো সূত্র মতে, বন্যায় হবিগঞ্জ সদরের গোপালপুরে ২০ মিটার, বানিয়াচঙ্গের সুজাতপুর এলাকায় ৬০ মিটার খোয়াই নদীর বাধ ভেঙে গেছে। এদিকে আজমিরিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর বাধের নিকলীরঢালা এলাকায় ২০ মিটার, বদলপুর বাজারের কাছে ১০ মিটার দীর্ঘ এবং নবীগঞ্জের চরগাওয়ে বিবিয়ানা নদীর বাধের ৮০ মিটার অংশ ভেঙে গেছে। এসব ভাঙন মেরামতে প্রায় ২ কোটি টাকা লাগতে পারে।
হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল জানান, হবিগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ আজমিরিগঞ্জ নবীগঞ্জ উপজেলায় এই পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়ক মেরামতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ১৮৭ কিলোমিটার রাস্তা, ৬৮ মিটার ব্রিজ ও কালভার্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বাছির জানান, সড়ক মেরামতে ৮২ কোটি ৭৪ লাখ, পাঁচটি ব্রিজের জন্য পাঁচ কোটি ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক মো.আশেক পারভেজ জানান, বন্যায় ১৫ হাজার ৬২৮ হেক্টর আউশ, ১৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর বোনা আমন ধান, ১ হাজার ৭৪৩ হেক্টর শাকসবজি, ও ৪৫ হেক্টর অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৮৮ হাজার ৫৪ মেট্রিক টন ধান ও সবজি এবং ২২৫ মেট্রিক টন অন্যান্য ফসল বিনষ্ট হয়েছে। জেলায় এক লাখ তিন হাজার ১৩০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জেলায় ১৭৮টি গবাদিপশুর খামারের ১ হাজার ৩০৮টি পশু, ৭৩টি খামারের ৫৪ হাজার ৪৬৭টি হাঁস মুরগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস জানান, বন্যায় ২ কোটি ৬৯ লাখ ৫২ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জেলা মৎস্য সম্পদ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, জেলায় সাত হাজার ৯০১টি পুকুর দীঘি ও খামার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে পাঁচ হাজার ৮৫৩ জন খামার মালিকের ১৩৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৩৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় প্লাবিত হয়।
জেলা শিক্ষা কমকর্তা মো. রুহুল্লাহ জানান, জেলায় ৯৪টি স্কুল কলেজ মাদরাসা বন্যা কবলিত হয়। এরমধ্যে ৭১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা আশ্রয় নিয়েছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৯টির মধ্যে সাতটি উপজেলায় ৫৪টি ইউনিয়নের ২৪ হাজার ৩৩০টি পরিবারের ৮৩ হাজার ৩৯০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ১৯ হাজার ৩৪৫ জন ৩৫০টি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। এই পর্যন্ত ৪০ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা নগদ, আটশ মেট্রিক টন চাল, চার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৩০ হাজার ৪১৬ প্যাকেট ডানো দুধ বিতরণ করা হয়েছে। দুর্গত এলাকায় ৩০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি