নিজস্ব প্রতিবেদক :
করোনার ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত বই ব্যবসার খাতে কমপক্ষে এক হাজার কোটির সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে ঋণের বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণাসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। রোববার (১৮ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, প্রায় দেড় বছর দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অ্যাকাডেমিক ও সৃজনশীল বই বিক্রি প্রায় বন্ধ। দেশের প্রায় ২৬ হাজার বইয়ের দোকান বন্ধ থাকায় বহু প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারী আজ নিঃস্ব। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ১৬ মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে বই ক্রয়-বিক্রয়ের উপর। এই মুহূর্তে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বিক্রেতা সদস্য ও তাদের পরিবারে চরম অভাব বিরাজ করছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অথচ আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম ইতোপূর্বে সরকারের একাধিক প্রণোদনা প্যাকেজ ও অনুদানে এই খাতকে বিবেচনায় না রেখে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। পরিতাপের বিষয়, জ্ঞানভিত্তিক ও শিক্ষিত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে নিয়মিত কর্মতৎপরতার মাধ্যমে এই পেশার সঙ্গে জড়িত কয়েক লক্ষ পরিবার আজ আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও হতাশায় নিমজ্জিত। আমাদের হিসাব মতে, গত ১৬ মাসে বাংলাদেশের অ্যাকাডেমিক এবং সৃজনশীল প্রকাশনা ও বিক্রয় প্রতিষ্ঠান প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার বিক্রয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান দোকান ভাড়া, কর্মচারী বেতন ও পারিবারিক ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব বা অন্যান্য মাধ্যম থেকে ঋণ নিয়ে ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়ছে। বই মেলায় ব্যবসায়ীরা ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে দাবি করে এই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের পুস্তক খাতের বহুবিধ লোকসানের সঙ্গে বিগত বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলা ২০২১ এবং জেলা পর্যায়ের বইমেলায় প্রকাশক ও বিক্রেতাদের অংশগ্রহণ আর্থিক ক্ষতিকে আরও বাড়িয়েছে। আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি নিয়েও প্রকাশক ও বিক্রেতারা এই মেলায় মূলত অংশ নিয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের উদ্দেশ্যে। মেলা উপলক্ষে এ সময় জাতির পিতার জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রায় তিন হাজার বই প্রকাশ করেছিল সৃজনশীল প্রকাশকরা। কিন্তু বইমেলা শেষে এ প্রকাশক ও বিক্রেতারাই ভয়াবহ অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। মেলায় লাভ দূরে থাকুক, কোনও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল নির্মাণ খরচের সমপরিমাণ বিক্রিও হয়নি। সঙ্গত কারণেই বইমেলার শেষ দিনে মেলা প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বইমেলায় অনুৎপাদনশীল বিনিয়োগের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ সহযোগিতা এবং সরকারিভাবে ১০০ কোটি টাকার বই ক্রয়ের বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের অনুরোধ জানিয়ে ছোটন বলেন, এ দুঃসময়ে প্রকাশনা খাতকে রক্ষার জন্য যদি সরকার এগিয়ে না আসে, তাহলে ভবিষ্যতে জ্ঞাননির্ভর জাঁতি গঠন ও শিক্ষিত প্রজন্ম তৈরির কর্মসূচি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই যে কোনও মূল্যে পুস্তক প্রকাশনা খাতকে টিকিয়ে রাখতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমাদের শিক্ষাবান্ধব প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। সমিতির দাবিগুলোর মধ্যে আছে, বাংলাদেশের পুস্তক ব্যবসা খাতের জন্য কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকার সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে ঋণের বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা। প্রায় ২৬ হাজার পুস্তক ব্যবসায়ী পরিবারের জন্য এককালীন অনুদান ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান, বিভিন্ন স্কুল কলেজের লাইব্রেরিকে সমৃদ্ধ করতে অ্যাকাডেমিক ও সৃজনশীল বই ক্রয়ের জন্য ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ প্রদান। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সমিতির প্রথম সহ-সভাপতি মো. কায়সার-ই-আলম প্রধান, সহ-সভাপতি শ্যামল পাল, প্রকৌশলী মেহেদী হাসান, পরিচালক ওয়াহিদুজ্জামান সরকার জামাল, কাজী জহুরুল ইসলাম বুলবুল প্রমুখ।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম