অনলাইন ডেস্ক :
বিশ্বকাপে দলের বিপর্যয়ে বিসিবি কর্তারা স্তম্ভিত। অনেকটা ‘অধিক শোকে পাথর’ অবস্থা। দুঃসময়ের আঁধার কাটাতে পরবর্তী করণীয় নিয়েও এখনও সেভাবে আলোচনা হয়নি তাদের মধ্যে। অবশ্য আনুষ্ঠানিক আলোচনা না হলেও নিজেদের মধ্যে নিত্যদিনের আলোচনা তো হচ্ছেই তাদের। সেখানে হতাশা, ক্ষোভ, অভিযোগ, সবই ফুটে উঠছে। বিশেষ করে নেদারল্যান্ডসর কাছে বাজেভাবে হার মেনে নিতে পারছেন না কেউই। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস সেই আক্ষেপের কথা অকপটেই বললেন। “সবাই যেরকম অনুভব করছে, আমাদেরও তেমনই লাগছে। আমরা কেউ তো খুব শান্তিতে নেই। সবারই হতাশা আছে।
সেমি-ফাইনালের লক্ষ্য পূরণ না হলেও অন্তত ৪-৫টি ম্যাচ তো জিততে পারতাম। পাঁচ-ছয়ে থাকতে পারতাম। অন্তত আরও দুটি ম্যাচ জিততে পারতাম।” “বিশেষ করে, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ অনেক শকিং ছিল। যতই ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তার কথা হোক, কিন্তু ওদের থেকে আমরা অনেক ভালো দল। সেখানে যেভাবে হেরেছে, এটা মেনে নেওয়া কঠিন।” তবে নিজেদের মধ্যে টুকটাক যা আলোচনা তাদের হয়েছে, তাতে এখনই বড় কোনো পরিবর্তনের সুযোগ দেখছে না বোর্ড। একদম সামনেই যে পিঠেপিঠি দুটি সিরিজ! বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় সবচেয়ে বেশি আঙুল উঠছে যার দিকে, সেই চান্দিকা হাথুরুসিংহে তাই এই দুটি সিরিজের জন্য নিরাপদ।
জালাল ইউনুস জানালেন, এই দুই সিরিজে অন্তত প্রধান কোচের দায়িত্বে বদল আসছে না। “হাথুরুসিংহেকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড, আমার একার সিদ্ধান্ত নয়। এখনও সে আমাদের সঙ্গে আছে। সামনে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি টেস্ট আছে, সফর আছে। আপাততৃএই মুহূর্তে অন্য কিছুর ভাবনা নেই আমাদের। বোর্ড চাইলে কিছু চিন্তা-ভাবনা করতে পারে। তবে এখনই নেই সেরকম কিছু। আসলে দল তো মাত্রই এলোৃ সবাই এখনও হতাশ, সেভাবে আলাপ-আলোচনা হয়নি কারও সঙ্গে।” ২৮ নভেম্বর থেকে দেশে শুরু হচ্ছে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। এই সিরিজ শেষ হতে না হতেই নিউ জিল্যান্ড সফরে যাবে বাংলাদেশ দল।
সেখানে তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু ১৭ ডিসেম্বর। অতি নাটকীয় কিছু না হলে এই দুই সিরিজে হাথুরুসিংহেই থাকছেন দায়িত্বে। যদিও গত বিশ্বকাপের পর অন্যরকম কিছু দেখা গিয়েছিল। ইংল্যান্ডে সেবার তিন ম্যাচে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। জয়ের আশা ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও, ব্রিস্টলে সেই ম্যাচটি ভেসে যায় বৃষ্টিতে। অন্য আরও কয়েকটি ম্যাচে জোর লড়াই করেছিল দল। বিশ্বকাপের ঠিক পরপর শ্রীলঙ্কা সফর ছিল সেবার। তার পরও দল দেশে ফেরার পরপরই বরখাস্ত করা হয় কোচ স্টিভ রোডসকে।
সেদিক থেকে হাথুরুসিংহেকে আপাতত ভাগ্যবানই বলতে হয়! তবে সেই সৌভাগ্য খুব বেশিদিন তার সঙ্গী নাও হতে পারে। নিউ জিল্যান্ড সফর শেষে বাংলাদেশের পরের সিরিজ মার্চে দেশের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। মাস দুয়েকের যে বিরতি, সেই সময়টায় অনেক কিছু নিয়েই ভাবার অবকাশ থাকবে বোর্ডের। সেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘এজেন্ডা’ নিশ্চিতভাবেই হবে হাথুরুসিংহের দায়িত্ব নিয়ে। গত ফেব্রুয়ারিতে এই শ্রীলঙ্কানকে দ্বিতীয় দফায় দায়িত্বে আনা হয়েছে দুই বছরের চুক্তিতে। তার মেয়াদের ১৫ মাস তাই এখনও বাকি।
তবে এখনই তাকে নিয়ে নানা অসন্তুষ্টি ডালাপালা মেলেছে নানা দিকে। বিশেষ করে এবারের বিশ্বকাপে তিনি যেভাবে দল পরিচালনা করেছেন, তা নিয়ে নানা অভিযোগ বোর্ড জানতে পেরেছে। তুমুল আলোচিত ব্যাটিং অর্ডারের রদবদল থেকে শুরু করে ছোট-বড় যে কোনো সিদ্ধান্তে বেশির ভাগ সময়ই কোচ একক ক্ষমতার চর্চা করেছেন বলে জানতে পেরেছেন বোর্ড কর্তারা। এমনকি কোচিং স্টাফের অন্য সদস্যদের কোনো পরামর্শও বেশির ভাগ সময় তিনি সাদরে গ্রহণ করেননি বা পাত্তা দেননি বলে অভিযোগ এসেছে।
একপর্যায়ে কোচিং স্টাফের অন্য সদস্যরা আর সেভাবে দলীয় পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত থাকেননি বা নিজ থেকে তারা কথা বলতে আগ্রহী হননি। ক্রিকেটারদের মধ্যেও এসব নিয়ে অস্বস্তি ছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্তস্ত্র অবস্থা ছিল তাদের। ক্রিকেটারদের স্বাভাবিক পারফরম্যান্সকে তা প্রভাবিত করেছে বলেই বোর্ড কর্তাদের অনেকের কাছে এখন মনে হচ্ছে। বিশ্বকাপ চলার সময়ই টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদের নানা কথায় ফুটে উঠেছে কোচকে নিয়ে অসন্তুষ্টির ছাপ।
বিশ্বকাপের শেষ দিকে এসে হাথুরুসিংহে বলেছেন, বিশ্বকাপেরর আগে তিনি সময় খুব বেশি পাননি, তার আসল কাজ শুরু হবে বিশ্বকাপের পর। কোচের এই মন্তব্যকেও ভালোভাবে নেয়নি বোর্ড। জালাল ইউনুস অবশ্য এটা নিয়ে সরাসরি কিছু বললেন না। তবে বিশ্বকাপ ব্যর্থতা নিয়ে কোনো অজুহাত শুনতে যে তারা রাজি নন, সেটিও স্পষ্ট হলো তার কথায়। “যে যতই বলুক, আমরা কোনো কিছু দিতে বাদ রাখিনি। সব ধরনের সাপোর্ট, লজিস্টিক সাপোর্ট, কোচদের যত ধরনের চাহিদা ছিল, সব পূরণ করেছি। এখন যে যেভাবেই বলুক যে প্রস্তুতি ছিল না বা এটা-ওটা ছিল না, আমি তাতে একমত নই। কোনোমতেই একমত নই।” “টিম ম্যানেজমেন্ট যা চেয়েছে, আমরা পূরণ করেছি।
মানসিক প্রস্তুতির জন্য বিশেষজ্ঞ আনা, শারীরিক প্রস্তুতির জন্য জিপিএস ভেস্ট আনা, যা কিছু তারা চেয়েছে, সব দিয়েছি। এখন অন্য কিছু বললে তো হবে না।” নিউ জিল্যান্ড সফরের পর তাই হাথুরুসিংহেকে বাংলাদেশ কোচের দায়িত্বে রাখা উচিত হবে কি না, সেই প্রশ্ন এখন বোর্ডের অন্দরমহলেই জোরালভাবে উঠছে। তবে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান এখনই এটা নিয়ে কিছু বলতে রাজি হলেন না। “এটা নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করব নাৃ কারণ এটা বোর্ডের ব্যাপারৃ বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে, বোর্ড মিটিংয়ের পরৃ। তবে সবকিছুর আগে তো হেড কোচ ও টিম ডিরেক্টর তাদের রিপোর্ট দেবে বিশ্বকাপ নিয়ে। তারা রিপোর্ট দিক, তখন বুঝত পারব। রিপোর্ট দেখে আমরা করণীয় বুঝতে পারব।” “পোস্ট মর্টেম বা কিছু একটা তো হবেই। যেটি বললাম যে মাত্রই দল এলোৃ আমরা আলাপ করব আরও।”
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা