September 29, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, June 13th, 2024, 8:28 pm

হামাসের প্রস্তাবে গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে জটিলতা : যুক্তরাষ্ট্র

অনলাইন ডেস্ক :

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির পরিকল্পনায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হামাসের প্রস্তাবের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন সংগঠনটির উদ্দেশে বলেছেন, ‘দর-কষাকষি বন্ধের সময় এসেছে।’ দোহায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কিছু পরিবর্তন প্রস্তাব নিয়ে কাজ করা গেলেও অন্যগুলো নিয়ে কাজের সুযোগ নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও আলোচনার মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসর ‘চুক্তিটি করতে চেষ্টা করে যাবে।’ এর আগে হামাস গত মঙ্গলবার জানায়, তারা এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক। তবে তারা গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহার ও একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ওপর জোর দিয়েছে। ইসরায়েল সরকার এ নিয়ে মন্তব্য করেনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটির প্রতিক্রিয়া প্রত্যাখ্যানের মতোই।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে প্রস্তাবনা ১২ দিন আগেই দেওয়ার কথা বলেছেন, তা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখনো প্রকাশ্যে অনুমোদন করেননি। ব্লিনকেন অবশ্য বলেছেন, সোমবার জেরুজালেমে এক বৈঠকে নেতানিয়াহু তার ‘অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।’ ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক চাপের পাশাপাশি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদও ওই প্রস্তাবের সমর্থনে একটি রেজল্যুশন পাস করেছে। উপসাগরীয় দেশটিতে কূটনৈতিক এ সফরের মাধ্যমে ব্লিনকেন আঞ্চলিক সংকট সমাধানের চেষ্টা করছেন। তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মেদ বিন আবদুর রহমান আল থানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন হাসিমুখেই। দেশটি এ সংকটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

হামাসের রাজনৈতিক শাখার কার্যালয় আছে সেখানে। আবার ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনারও একটি চ্যানেল আছে। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্লিনকেনকে কিছুটা উত্তেজিতও দেখা গেছে। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাস যেসব পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে তা নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘হামাস যেসব প্রস্তাব গত ৬ মে দিয়েছিল তার সঙ্গে এবারের প্রস্তাব প্রায় অভিন্ন। এর পেছনেই পুরো বিশ্ব আছে। ইসরায়েলও তা গ্রহণ করেছে।

এখন হামাস একটিই প্রতিক্রিয়া দিতে পারে এবং তা হলো-ইয়েস। এর পরিবর্তে হামাস দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করল এবং তারপর অনেকগুলো পরিবর্তনের প্রস্তাব করল। এর কয়েকটি তারা আগেও গ্রহণ করেছে। এর ফলে হামাস যে যুদ্ধ শুরু করেছে তা চলছে এবং আরো মানুষ দুর্ভোগ পোহাবে। ফিলিস্তিনিরা দুর্ভোগে পড়বে, আরো ইসরায়েলি দুর্ভোগে পড়বে।’ ব্লিনকেন অবশ্য হামাসের পরিবর্তনের দাবিগুলো নিয়ে বিস্তারিত বলেননি। হামাস মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যে বিবৃতি দিয়েছে, সেখানে ‘গাজায় আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ’ এবং ইসরায়েলি সেনাদের পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর একজন সদস্য ইজ্জাত আল রিশক বলেছেন, তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল ‘দায়িত্বশীল, গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক’ এবং এটি সমঝোতায় পৌঁছনোর ক্ষেত্রে ‘বড় পথ’ তৈরি করেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করে একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বিবৃতিতে জানিয়েছেন, প্রধান তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়গুলো হামাস পরিবর্তন করেছে এবং জিম্মি মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে, যেটি প্রেসিডেন্ট বাইডেন উপস্থাপন করেছিলেন। বুধবার রয়টার্সকে দেওয়া আরেক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, সমঝোতায় পৌঁছতে তারা পুরোপুরি ইতিবাচক। তারা ইসরায়েলকে চাপ দেওয়ার জন্য ব্লিনকেনকে অনুরোধ করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটেও ব্লিনকেন বলেছেন, কাতার ও মিসরকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিটি সম্পন্ন করার চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, দূরত্ব ঘুচিয়ে আনা সম্ভব। তবে হামাসকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় অভিযান চালাচ্ছে। গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়। আরো ২৫১ জনকে তারা জিম্মি করে। অন্যদিকে গাজায় এ পর্যন্ত ৩৭ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এর আগে নভেম্বরে এক সমঝোতার আলোকে হামাস ১০৫ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়। বিনিময়ে এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি এবং ২৪০ ফিলিস্তিনিকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল। ইসরায়েল বলছে, এখনো ১১৬ জন জিম্মি হয়ে আছে, যার মধ্যে ৪১ জন মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাইডেন বলেছেন, নতুন প্রস্তাবে তিনটি ধাপের কথা বলা হয়েছে।

প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি। এ সময় হামাস নারী, বয়স্ক মানুষ ও আহত জিম্মিদের মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির পাশাপাশি গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার হবে এবং মানবিক সহায়তা দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপে বেঁচে থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হবে। যদিও এটি এখনো আলোচনার বিষয়। তৃতীয় ধাপে নিহত জিম্মিদের দেহাবশেষ দেওয়া হবে এবং গাজার পুনর্গঠনে একটি বড় পরিকল্পনা নেওয়া হবে। হোয়াইট হাউস উভয় পক্ষকে নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছনোর চেষ্টা করলেও ইসরায়েলের নেতারা এ বিষয়ে সন্দিহান।

ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য নেতানিয়াহুর ওপর চাপ তৈরি করছেন ডানপন্থী মন্ত্রীরা। তারা কোয়ালিশন সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবকে তারা হামাসের কাছে আত্মসমর্পণ হিসেবে বিবেচনা করছেন। প্রধানমন্ত্রী ওই পরিকল্পনার প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন এখনো ঘোষণা করেননি। যদিও এটি তার যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা কর্তৃক অনুমোদিত বলে স্বীকার করেছেন। তবে বাইডেন যতটা প্রকাশ করেছেন, ইসরায়েলের প্রস্তাবনা আরো অনেক দীর্ঘ ছিল বলে জানা গেছে। প্রস্তাবটি প্রকাশ করা হয়নি এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেন যতটা বলেছেন, তার সঙ্গে এর পার্থক্য কতটুকু সেটিও পরিষ্কার নয়। এটি হামাসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বাইডেনের বক্তৃতার আগেই।
সূত্র : বিবিসি